বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেরও ঝুঁকি আছে

2918_download (2).jpg

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ মনে করছেন শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় না আসলেও ইতিমধ্যে অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। একই রকম পরিস্থিতি না হলেও অন্য যেকোনো ধরনের বিপর্যয় আসতে পারে। শ্রীলঙ্কার সংকট এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ হতে পারে। শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে এখনই ব্যয় ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। 

মানবজমিনকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতির নীতি এবং ব্যবস্থাপনা বিপদের একটি ক্ষেত্র। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও মিল রয়েছে। এই অবস্থায় ঝুঁকির শঙ্কা অবশ্যই আছে। তবে এখনই এমন কিছু হবে না। কারণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দুই ক্ষেত্রে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ভালো অবস্থানে রয়েছে। সহসা খারাপ হবে এমন শঙ্কাও কম। তবে অন্য অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিবেশ রয়েছে এক সময় শ্রীলঙ্কাও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় ভালো ছিল। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয়, জিডিপি একটু বৃদ্ধি পেলে যে উচ্ছ্বাসটা হয় এটা হচ্ছে বড় ধরনের বিপদের জায়গা। শ্রীলঙ্কার চেয়ে আমাদের ভালো থাকার স্বস্তির জায়গা হচ্ছে রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয়। এই দুই দিক থেকে আমাদের আয় বেশি। সাম্প্রতিক লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে এই দুই আয় খুব সহসা হ্রাস পাবে না। তবে ঝুঁকির বিষয় হলো অপ্রয়োজনীয় বিলাসী জিনিস আমদানি বা উৎপাদনের নামে ক্ষতিকর জিনিস আমদানি। এমন ঘটনা অতিমাত্রায় বেড়েছে। 

শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশের অভিন্ন একটি বিপদের জায়গা হচ্ছে জবাবদিহিতার অভাব। গত কয়েক বছর ধরে কর্তৃত্ববাদী শাসন, জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে ওঠা। স্বচ্ছতা ছাড়া বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ, পর্যালোচনা না করে বিদেশে থেকে ঋণ নেয়া এসব দিক থেকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে। একদিক থেকে বলতে হবে শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ। কারণ তাদের পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটা সংকেত। কীভাবে বিপদ হতে পারে শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি থেকে তা ধারণা করা যাচ্ছে। 
আমাদের দেশে অপ্রয়োজনীয় অনেক প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। অনেক প্রকল্পে বেশি খরচ করা হচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর করা হচ্ছে। এগুলো হলো বিপদের জায়গা। শ্রীলঙ্কায়ও এমনটি দেখা গেছে।  

তিনি বলেন, পোশাক শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে আমরা রপ্তানি আয় পাচ্ছি। একইভাবে প্রবাসী শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হলো রেমিট্যান্স। এখন দেশে যদি অপরিকল্পিত ব্যয় হয় তাহলে দেখা যাবে এই আয় তলাবিহীন ঝুড়ির মতো উধাও হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শঙ্কা তো রয়েছে। কারণ অনেক বৈদেশিক ঋণের বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া সরকার দেশীয় ব্যাংক থেকেও ঋণ নিচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে সুদ বেড়ে যাচ্ছে। ব্যয়ের খাতে দেখা যাচ্ছে সুদ দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত। 

এ ছাড়া জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি চললে দাম বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ও ঋণ শোধের চাপ বেড়ে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিপদ হয়তো শ্রীলঙ্কার মতো হবে না। সম্পদ পাচার যদি অব্যাহত থাকে, লুণ্ঠন অব্যাহত থাকে। তাহলে বিপর্যয় তো অবশ্যই আসবে। তা হয়তো শ্রীলঙ্কার মতো হবে না। এ ছাড়া পরিবেশগত দিক বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বলা যায়। এখানে অপরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয়কারী প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। রাজধানী শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। এদিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশে বিপদ আসতে পারে অন্য দিক থেকে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী বিপদ আসতে পারে।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও