বিশেষ খবর


বউ না পিটানো প্রশিক্ষণের স্কুল

3298_download (1).jpg

ব্যতিক্রমী এক শিক্ষাকেন্দ্র। সেখানে শিক্ষার্থীদের সবাই পুরুষ। ক্লাবের মতো করে তাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়। বই, খাতাকলমের কোনো শিক্ষা নয়। নয় কোনো অক্ষরজ্ঞানের শিক্ষা। এ শিক্ষা হলো কিভাবে নারীদের বা স্ত্রীদের পিটানো বন্ধ করা যায়। ঘটনাটি দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের। সেখানকার রাজধানীতে একটি বড় হল রুম। তার মধ্যে একদল পুরুষ তাদের দুই বাহু উপরের দিকে প্রসারিত করেছেন। তারপর দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়েন।তারপর ‘আহ্’ শব্দ করে হাত ছেড়ে দিচ্ছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। 

এতে বলা হয়, এটা একটা ক্লাস। তবে প্রচলিত অর্থের ক্লাস নয়। ক্লাসে উপস্থিতদের বেশির ভাগই গৃহ সহিংসতায় অভিযুক্ত। তারা স্ত্রীদের নির্যাতন করেছেন। এ জন্য তাদেরকে থেরাপি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এর বাইরে যারা যোগ দিয়েছেন, তারা কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত নয়। তারা যোগ দিয়েছেন স্বেচ্ছায়।

সরকারি হিসাবে দেশটিতে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মেয়ে ও নারীদের শতকরা ৬৫ ভাগই সহিংসতার শিকারে পরিণত হন। তাই সেখানে গড়ে উঠেছে ‘মেনস ক্লাব ফর গুড ট্রিটমেন্ট’। তাদের উদ্দেশ্য নির্যাতনকারী পুরুষের হাতে আগ্রাসন বাদে এমন হাতিয়ার তুলে দেয়া, যা দিয়ে সংসারের সংঘাত এড়ানো যায়, মোকাবিলা করা যায়। এই কোর্সের মেয়াদ ২০ দিন। সপ্তাহে একদিন ক্লাস। এর উদ্দেশ্য থাকে আচরণগত পরিবর্তন। পুরুষের মধ্যে আত্মসংযম ও রিলেশনশক্তি বৃদ্ধি করা।

সেখানে ক্লাস করছেন ৩৪ বছর বয়সী খাবার ডেলিভারি দেয়া জর্জ সানচেজ। আদালত তাকে শাস্তি দিয়েছে এখানে থেরাপি নিতে। তার সাবেক গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে সহিংস আচরণ করার জন্য এর সঙ্গে তাকে দেয়া হয়েছে ৬০ ঘন্টার সামাজিক কাজ। এসব শাস্তি মেনে নিতে হবে। না হয় যেতে হবে জেলে। এখানে উল্লেখ্য যে, সাবেক গার্লফ্রেন্ডকে অন্য একজন পুরুষের সঙ্গে দেখার পর তার ওপর হামলা করেছিলেন সানচেজ।

তিনি বলেছেন, ওই সময় আমি ভীষণ রেগে গিয়েছিলাম। আমার ভিতর ঈর্ষা কাজ করছিল। তা সহ্য করতে পারি নি। সেই রাগের বশে হামলা চালিয়েছি। এখন এই ক্লাস করে অনেকটাই সেই ক্ষোভকে প্রশমিত করতে পেরেছি। ওই সময় বান্ধবীর সঙ্গে যে আচরণ করেছিলাম, তার জন্য লজ্জা লাগছে।
ক্লাস শেষ করে সানচেজ ও অন্যরা দিনের বাকি অংশে তিন ঘন্টার কার্যক্রম চালান।  এ সময় তারা সবাই মিলে আলোচনার একটি তালিকা তৈরি করেন। তার মধ্যে থাকে অধৈর্য্য, অলসতা, প্রথমেই ক্ষেপে যাওয়া, শ্রদ্ধা, সততা, ধৈর্য্য এবং আনুগত্য। থাকে বৈষম্য, একাকীত্ব, কারো সন্তান হারানোর বিষয়।

ক্লাসে যেসব মানুষ যোগ দিয়েছেন তাদের বয়স ৩০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। তারা বিভিন্ন অফিসে কেরানি থেকে শুরু করে কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। উল্লেখ্য, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলোতে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ভয়াবহ। সেখানে সংসার জীবনে রোমান্টিক পার্টনারের হাতে এর মধ্যে শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ নারী দুর্ভোগের শিকারে পরিণত হন। ইকুয়েডরের প্রসিকিউটরের অফিস থেকে বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে এ বছরের মে মাস পর্যন্ত সেখানে আত্মহত্যা করেছেন ৫৫১ জন নারী। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ আত্মহত্যা করেছেন তাদের অন্তরঙ্গ পার্টনারদের কারণে।

প্রসিকিউটর অফিসের মতে, দেশের সব নারী হত্যার রেকর্ড করা হলে একই সময়ে আত্মহত্যা করা এমন নারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১৪৩২। নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো বলছে, নারীদের ওপর নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যার সংখ্যা এত বেশি যে, তার সবটাই রিপোর্ট করা হয় না।

ওই স্কুলের সমন্বয়ক রবার্তো মোনকায়ো বলেছেন, তার ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১০ সালে। এ পর্যন্ত তারা ৫৪৫ জন পুরুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করেছেন। প্রশিক্ষিত ওইসব পুরুষ আর কোনো অপরাধ করেননি।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও