ইসলাম

কুসিক নির্বাচনে ব্যর্থ হলো সরকারের ‘ইভ্যালি কৌশল’

3471_dr jahad.jpg

কুমিল্লার নির্বাচনের ফলাফলে সরকারের প্রতি কুমিল্লা শহরের জনগণের এক বিরাট অনাস্থা প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলে খুব স্পষ্টভাবেই দেখা যায় দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রায় একই সমান ভোট পেয়েছেন কিন্তু তৃতীয় হওয়া প্রার্থী প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়েছেন যিনি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দুই প্রার্থীর মোট ভোট সরকারি দলের প্রার্থীর চেয়ে ৩০ হাজারের মতো বেশি। সত্যি বলতে পার্থক্যটা আরও অনেক বড়। বিএনপি’র বহিষ্কৃত দুই প্রার্থী স্বভাবতই ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেননি। যদি একজন মনোনয়ন পেয়ে সেটা করতেন, তাহলে সেটার সাড়া আরও অনেক বেশি হতো। শুধু সেটাই নয়, বিএনপি’র এই দুই জনকে বহিষ্কার করার পর দলের হাইকমান্ড খুব শক্ত হুমকি দিয়ে বলেছিল এই দু’জনের পক্ষে যেন বিএনপি’র কোনো নেতাকর্মী প্রচারণা এবং অন্যান্য নির্বাচনী কাজে অংশগ্রহণ না করেন। অথচ বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে স্থানীয় তো বটেই কেন্দ্রীয় নেতারাও সেখানে প্রচারণায় যেতে পারতেন। তাহলে ফল আরও কতোটা ধানের শীষের পক্ষে আসতো সেটা নিশ্চয়ই বুঝি আমরা।

ওদিকে সরকারি দলের ক্ষেত্রে একজন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা এবং সংসদ সদস্য জনাব বাহাউদ্দিন বাহারসহ আওয়ামী লীগের সকলের মরিয়া চেষ্টার পরও তাদের প্রার্থী খুব ভালো কিছু করেননি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর একটি তুলনামূলক সুবিধাও ছিল। জনাব সাক্কু পরপর দুইবার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পর পর দুইবার দায়িত্বে থাকা তার বিরুদ্ধে এন্টি-ইনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর উস্কে দেয়ার কথা। মজার ব্যাপার সেই হিসাবও আওয়ামী লীগের পক্ষে যায়নি। অনেকে বলেন- স্থানীয় নির্বাচনে স্থানীয় নানা বিষয় প্রধান চালিকাশক্তি, জাতীয় ফ্যাক্টর নয়। আমি বরং বলতে চাই, বাংলাদেশে এখন ঘটে ঠিক উল্টোটা- দীর্ঘদিন জাতীয় পর্যায়ে সত্যিকার নির্বাচনের স্বাদ না পাওয়া মানুষ নির্বাচনের স্বাদ মেটানোর চেষ্টা করেন স্থানীয় নির্বাচনে। জাতীয় পর্যায়ে সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধতার প্রতিক্রিয়া এসে পড়ে স্থানীয় নির্বাচনে। আমি তাই, নিশ্চিতভাবে মনে করি এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারকে লালকার্ড দেখিয়েছে কুমিল্লার মানুষ।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোটাদাগে দুইটি খুঁত পাওয়া গেছে। এর একটি হলো নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার শেষ পর্যায়ে ৪৫ মিনিটের জন্য ফলাফল ঘোষণা বন্ধ রাখা এবং তারপর সরকারদলীয় প্রার্থী খুব ন্যূনতম ব্যবধানে জয়ী হওয়া। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী জনাব মনিরুল হক সাক্কুর অভিযোগ মতে কোনো একটা ফোন পেয়ে রিটার্নিং অফিসার এ কাজটি করেছেন। রিটার্নিং অফিসার এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন তবে আমরা এর বিস্তারিত আলোচনায় ঢুকছি না।

এই নির্বাচনে সবচেয়ে বড় যে খুঁতটি তৈরি হয়েছে সেটি হলো নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কিছু করতে একেবারেই ব্যর্থ হওয়া। জনাব সাক্কুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে প্রমাণ পায় জনাব বাহার নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন। তাই তারা সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী তাকে সেখান থেকে চলে আসতে বলেন।

জনাব বাহার এই চিঠির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট সেটার কারণ দর্শানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে বলেন। কিন্তু হাইকোর্ট সেই চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেননি। হাইকোর্টের রায়ের পর নির্বাচন কমিশনের প্রধান আইনজীবী স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন বাহারকে দেয়া চিঠির কার্যকারিতা ঠিক আছে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যাবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেই ব্যবস্থা নেয়নি। কেন সেই ব্যবস্থা নেয়নি শেখার জন্য বরং উদ্ভট সব বক্তব্য আমাদের সামনে এসেছে।

নির্বাচন কমিশনের পিছু হটা নিয়ে এক কমিশনার রাশেদা সুলতানা কুমিল্লায় গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আইনি কাঠামো যেভাবে আছে, সেভাবে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। উনি (বাহাউদ্দিন) আইন মানেন না, আইনপ্রণেতা। আমাদের ব্যর্থ বলেন কেন আপনারা? একজন সম্মানিত লোককে টেনেহিঁচড়ে নামানো কমিশনের কাজ নয়।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জনাব বাহারের এলাকায় থেকে যাওয়া নিয়ে বলেন, ‘ইসির নির্দেশনা পাওয়ার পর একজন সংসদ সদস্য এটাকে অনার না করলে কমিশনের তেমন কিছু করার নেই। আমাদের এমন কোনো ক্ষমতা নেই যে, কাউকে জোর করতে পারি। আমরা তো আর কাউকে কোলে করে নিয়ে যেতে পারি না।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন কী করতে পারতো তার একটা চমৎকার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এক-এগারোর সময়কার নির্বাচন কমিশনের একজন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘বাহারকে নির্বাচনী এলাকার বাইরে পাঠাতে নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করেনি। বাহার যদি না যান, তাহলে কমিশন চাইলে নির্বাচন স্থগিত করে দিতে পারতো। সেটা করেনি। আমরা কমিশনে যখন ছিলাম, তখন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে এই প্রক্রিয়ায় এলাকার বাইরে পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলাম। তিনি সেখানে গিয়ে দরবার বসিয়েছিলেন। তাকে বলেছিলাম, আপনি সরে না গেলে নির্বাচন স্থগিত করে দেবো। তিনি সরে যেতে বাধ্য হন। তখন তো এই সরকারই ছিল।’’
যে পরিস্থিতিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন পড়েছিল তার হুবহু একটি পরিস্থিতির নজির আছে যেটা তারা খুব সহজেই অনুসরণ করতে পারতেন। কিন্তু বাজেভাবে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।

আরেকটি ব্যাপার অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য ঠেকবে- জনাব বাহারকে তো ক্ষমতাসীন দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে চাপ দিয়ে এলাকা থেকে আসতে বাধ্য করা যেত। সেটা বরং আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের কৌশলের পক্ষে থাকতো। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দলীয় সরকার ক্ষমতাসীন থাকার সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে যুক্তি তৈরি করার জন্য যে কৌশল নিয়েছিল সেটাকে আমি বলছি ‘ইভ্যালি কৌশল’। সাম্প্রতিককালে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বেশ কিছু তথাকথিত ই-কমার্স সাইট দেশে তুমুল আলোচনা তৈরি করেছিল। ব্যবসা বলা হলেও এগুলো আদতে কোনো ব্যবসাই ছিল না, এগুলো আসলে স্রেফ প্রতারণা- পঞ্জি স্কিম। এর আগে আমরা একই রকম প্রতারণা ডেসটিনি, ইউনিপে টু-ইউ’র মতো আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেখেছি।

একেবারে সাম্প্রতিক বিষয় বলে ইভ্যালি নিয়েই আলোচনা করা যাক। এই প্রতিষ্ঠানটি মানুষকে অবিশ্বাস্য কম দামে নানা পণ্য দিতে শুরু করেছিল। বাজার মূল্যের তুলনায় দুই-তৃতীয়াংশ, এমনকি অর্ধেক দামে মানুষ ফ্রিজ, টিভি, মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেলসহ নানা পণ্য কিনতে পারছিল। বাস্তবেই বেশ কিছু মানুষ এমন পণ্য হাতে পেয়েছিল। এভাবে পাওয়া পণ্য একটা সময়ে শুধু ব্যক্তিগত ব্যবহার না, পরিণত হয়েছিল ব্যবসায়। মানুষ ইভ্যালি থেকে পণ্য পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বিক্রি করে দিলেই বেশ কিছু নগদ টাকার লাভ পেয়ে যাচ্ছিল।

এভাবে পণ্য পাওয়া নতুন নতুন মানুষকে ইভ্যালির কাছে অগ্রিম টাকা দিয়ে পণ্য পেতে আগ্রহী করেছিল। শুধু নতুন মানুষ নয়, একবার যারা পণ্য পেয়েছিলেন, তারা আরও পণ্য কিনতে আগ্রহী হয়েছেন। আগেই যেমন বলেছি এভাবে পণ্য কেনা একটা বেশ লাভজনক ব্যবসার হাতছানি হয়েছিল অনেকের কাছে। সেসব মানুষ কষ্টের সঞ্চয় এনে, ঋণ করে, স্বর্ণালঙ্কার এমনকি জমি বিক্রি করে ইভ্যালির হাতে টাকা তুলে দিয়েছিলেন অবিশ্বাস্য কম মূল্যে পণ্য পাবার জন্য। এরপর কোম্পানিটি বন্ধ হওয়া এবং মালিক গ্রেপ্তারের অনেক আগেই শুরু হয়েছিল পণ্য সরবরাহ করা নিয়ে অবিশ্বাস্য গড়িমসি। শুধু সেটাই না, মানুষ পণ্য পাবার আশা বাদ দিয়ে টাকা ফেরত চাইলে সেটাও দেয়া হচ্ছিল না।

মানুষকে শুরুতে ভীষণ বড় টোপ দিয়ে, শুরুতে সেই টোপ গ্রহণকারীর আস্থা অর্জন করে তার এবং আরও অনেকের কাছ থেকে কিছুদিন পরেই বিরাট দাঁও মেরে কেটে পড়াÑ সারা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিটা পঞ্জি স্কীম তাদের প্রতারণাটি করে ঠিক এই নীতিতে। পন্থার কিছুটা ভিন্নতা থাকে মাত্র।

দলীয় সরকারের অধীনে সব দলকে নির্বাচনে আনার জন্য বর্তমান সরকার এই ‘ইভ্যালি কৌশল’ নিয়েছিল এই দফায় প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। নির্বাচন কমিশন গঠন করে জাতীয় নির্বাচনের আগে সেই কমিশনের অধীনে কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলকভাবে করে দেখানোর চেষ্টা করা যে দলীয় সরকারের অধীনেও নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম আওয়ামী সরকারের সময় নির্বাচন কমিশন ছিল জনাব রকিব উদ্দিনের নেতৃত্বে। দলীয় সরকারের অধীনেই সেই কমিশন দেশের অনেকগুলো সিটি করপোরেশন নির্বাচন করে। ভালোভাবে হওয়া সেই নির্বাচনগুলোর প্রত্যেকটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা হেরে যায়। ফলে সরকারের পক্ষে জোর গলায় দাবি করা সম্ভব ছিল যে, দলীয় সরকারের অধীনেই এতই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া সম্ভব যে, তাতে একের পর এক সিটি করপোরেশনে সরকারসমর্থিত প্রার্থীরা হেরে যায়। উদ্দেশ্য স্পষ্ট, এমন নির্বাচন দেখে প্রলুব্ধ হয়ে বিএনপি সহ বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনে যাবে। এরপর ইভ্যালি এবং ডেসটিনি’র মতো প্রতিষ্ঠান যা করে, বড় দাঁও মারার সুযোগ আসার পর, (এই ক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচন) সেটা মেরে দেবেন।
আমি খুব অবাক হয়ে দেখি দেশের মিডিয়া এবারকার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে ‘নির্বাচন কমিশনের প্রথম পরীক্ষা’ জাতীয় শিরোনাম করছিল। এটা অবিশ্বাস্য। প্রথম শ্রেণির প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে কি এসএসসি পাস করা যায়? প্রথম শ্রেণির প্রশ্নে ১০০ পরীক্ষা দিয়ে তাতে অসাধারণ ফল করা কেউ এসএসসি পাস করবেনই, সেই নিশ্চয়তা কীভাবে দেয়া যায়?

নির্বাচন কমিশনকে সরকার যদি অনেকগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিনা বাধায় করতে দেয়, এমনকি সরকার যদি চাপ দেয় সঠিকভাবে করার জন্য, তাতেও কি এই নিশ্চয়তা কোনোভাবে দেয়া যায় যে, সরকার জাতীয় নির্বাচনটি সঠিকভাবে করতে দেবেন? নূরুল হুদা কমিশনের মতো একটি নির্বাচন মিশন যারা বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে একেবারে তছনছ করে ফেলেছে, তাদের অধীনেও তো কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কু আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন। সেই নির্বাচন দিয়ে কি বোঝা গিয়েছিল ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে কী হতে যাচ্ছে? এত কিছুর পরও এই নির্বাচন কমিশনের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার আলাপ সরকারের দিক থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং আমরা অনেকেই সেটা বুঝে, কিংবা না বুঝে এই অর্থহীন আলাপে যুক্ত হয়েছি।

২০১৮ সালে নির্বাচনের নামে যা হয়েছে সেই পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে এবারকার সংসদ নির্বাচনের প্রতি নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কঠোর দৃষ্টি থাকার কথা। র‌্যাব এবং এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর সরকারের ভেতরেও নিশ্চয়ই কিছুটা নড়চড় হয়েছে। আমেরিকা চরম প্রশ্নবোধক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। নিকারাগুয়ার চরম কারচুপিপূর্ণ নির্বাচনের কারণে কয়েক মাস আগে অনেকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকা।

সরকারের কৌশল হওয়ার কথা সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভালো হলে সেটা বিদেশিদের দেখিয়ে তাদের আশ্বস্ত করে তাদের দিয়ে সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসার জন্য বিরোধীদের চাপ দেয়ানোর চেষ্টা করতে পারতেন। আর বিএনপি সহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে আসলে ২০১৮ সালের মতো এত বড় ‘ডাকাতি’ না করে তুলনামূলকভাবে সহনীয় কিছু করে ফেলতে পারতো সরকার।

এখন কুমিল্লায় যেভাবে প্রশ্ন উঠে গেল নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে, যেভাবে প্রশ্ন আসলো মাত্র একজন সংসদ সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা নিয়ে, সরকারের প্রতিও প্রশ্ন উঠলো কেন একজন দলীয় এমপিকে তারা সামলালো না, তারপর কি সরকারের দিক থেকে আর কোনোভাবে বলা সম্ভব দলীয় সরকারের অধীনে একটা জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে? 

‘ইভ্যালি কৌশল’ এবার সরাসরি কাজ করার কথা ছিল না। বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ছাড়া তারা কোনোভাবেই নির্বাচনে যাবে না। তারা সঠিক। ২০১৮ সালের পর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রশ্ন আসার কি আর কোনো প্রশ্ন আসে? তবে এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, বিদেশিদের কথা মাথায় রেখে সরকার এগিয়ে যাচ্ছিল ‘ইভ্যালি কৌশল’ নিয়েই। কিন্তু কুমিল্লায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যা ঘটলো, তাতে এই কৌশল যে মাঠে মারা গেল, সেটা বলাই বাহুল্য। 

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও