স্বাস্থ্য

কয়েক মাসে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত সর্বোচ্চে পৌঁছাতে পারে- হু’কে বিশেষজ্ঞরা

3961_download (17).jpg

মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করার সুযোগ শেষ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতি দুই সপ্তাহে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুন হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও বা হু) এ হুঁশিয়ারি দিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, মাঙ্কিপক্স তার পিক-এ বা সর্বোচ্চে পৌঁছাতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে।

ডব্লিউএইচও ইউরোপ বিভাগ তার পূর্বাভাসে বলেছে, ২রা আগস্টের মধ্যে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৮টি দেশে কমপক্ষে ২৭ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। সর্বশেষ এই সংখ্যা যখন নির্ধারণ করা হয়েছিল, তখন প্রায় ৭০টি দেশে আক্রান্তের এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৮০০। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীরা রয়টার্সকে বলেছেন, এর বাইরে পূর্বাভাস করা খুব কঠিন। কয়েক মাসের জন্য বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য এই সংক্রমণ স্থায়ী হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যানজেলেসে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার মহামারি বিষয়ক প্রফেসর অ্যান রিমোইন বলেছেন, মাঙ্কিপক্স সংকটের মুখোমুখি হতে হবে আমাদেরকে। এটা এখন স্পষ্ট যে, এর বিপক্ষে দাঁড়ানোর যে সুযোগ ছিল, তা এখন বন্ধ হয়ে আসছে। এখানে উল্লেখ্য, মাক্সিপক্স বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ কমিটির একজন সদস্যও তিনি।

এই কমিটি গত সপ্তাহে বৈঠকে বসে। মাঙ্কিপক্সকে বৈশি^ক স্বাস্থ্য বিষয়ক ইমার্জেন্সি হিসেবে ঘোষণা করা হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ওই বৈঠক করা হয়। তবে এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য। কিন্তু অস্বাভাবিক পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস যেকোনোভাবেই এটাকে জরুরি হিসেবে ঘোষণা করেন। 
এই ঘোষণার পর যে পদক্ষেপ দাবি করে, তার মধ্যে আছে টিকাদান বৃদ্ধি করা, পরীক্ষা করা, যারা আক্রান্ত বা আক্রান্তদের সংস্পর্শে গিয়েছেন তাদেরকে আইসোলেশনে রাখা। এসব কথা বলেছেন বৈশি^ক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।  ইউনিভার্সিটি অব জেনেভাতে ইন্সটিটিউট অব গ্লোবাল হেলথের পরিচালক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ বিষয়ক এডভাইজরি গ্রুপের চেয়ার অ্যান্টোনি ফ্লাহল্ট বলেছেন, স্পষ্টত সংক্রমণ অনিয়ন্ত্রিত।

ওদিকে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রফেসর জিমি হোয়াইটওয়ার্থ বলেছেন, তিনি মনে করেন আগামী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণের আধিক্য ঘটতে পারে। বৃটেনে যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক সংগঠনগুলো বলেছে, তারা সম্প্রতি হিসাব কষে দেখেছে, এই সংক্রমণের শিকার হতে পারে এক লাখ ২৫ হাজার মানুষ।  

আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে কয়েক দশক ধরে দেখা দিয়েছে মাঙ্কিপক্স। কিন্তু এ ইস্যুতে জনস্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টি বিশ্ব অবজ্ঞা করে গেছে। সম্প্রতি এই ভাইরাস আফ্রিকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত, এই ভাইরাসের সংক্রমণে হাল্কা থেকে মাঝারি লক্ষণ দেখা দেয়। তার মধ্যে আছে জ¦র, অবসন্নতা, ত্বকে ফোস্কা। এসব সমস্যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। সম্প্রতি এতে মারা গেছেন কমপক্ষে ৫ জন। তারা সবাই আফ্রিকার।

আফ্রিকার বাইরে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ছে পুরুষদের মধ্যে। বিশেষ করে ওই সব পুরুষ যারা অন্য পুরুষের সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত হন। যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শক হারুন তুলুনায় (৩৫) মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়ে এ মাসে লন্ডনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে এখন তিনি সুস্থ। বলেছেন, পরিষ্কার মনে আছে। মনে হচ্ছিল মারা যাচ্ছি। কারণ, আমি খেতে পারতাম না। কিছু পান করতে পারতাম না। এমনকি মুখের ভিতর আমার নিজের লালা’কে পর্যন্ত গিলতে পারতাম না।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও