খেলাধুলা

ভয়ঙ্কর-সুন্দর ফুটবলে কোয়ার্টার-ফাইনালে ব্রাজিল

5675_Brazil worldcup.jpg

নেইমারকে ফিরে পেয়ে যেন আসল ব্রাজিল হয়ে উঠল তিতের দল। ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজতেই ভিনিসিউস-রাফিনিয়া-রিশার্লিসনরা মেতে উঠলেন মোহনীয় ফুটবলে। দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য যা হয়ে উঠল জটিল ধাঁধা। প্রথমার্ধেই চারবার জালে বল পাঠিয়ে ম্যাচের গতিপথ একরকম ঠিক করে ফেলে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। বিরতির পর তাদের খেলায় ধার কমলেও ম্যাচের লাগাম সবসময় ফেভারিটদের হাতেই ছিল।

দোহায় স্টেডিয়াম ৯৭৪- এ সোমবার রাতে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতেছে ব্রাজিল। সপ্তম মিনিটে তাদের গোল উৎসবের শুরু ভিনিসিউস জুনিয়রের পায়ে। একে একে স্কোরলাইনে নাম লেখান নেইমার, রিশার্লিসন ও লুকাস পাকেতা।

প্রথম তিন মিনিটে ভালো দুটি আক্রমণ করলেও প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে বক্সে ঢুকতে পারেনি ব্রাজিল। তবে সাফল্য মিলতে দেরি হয়নি। সপ্তম মিনিটে প্রতিপক্ষের ছোট্ট ভুলের সুযোগে এগিয়ে যায় তারা।

ডি-বক্সের বাইরে কোরিয়া বল হারালে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একজনের বাধা এড়িয়ে ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন রাফিনিয়া। এরপর বাইলাইন থেকে বক্সের বাঁ দিকে পাস দেন তিনি। ফাঁকায় বল পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান পায়ের জোরাল শটে দূরের পোস্ট দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন ভিনিসিউস।

ছয় মিনিট পর সফল স্পট কিকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন নেইমার। বক্সে রিশার্লিসনকে কোরিয়ার জং য়ু-ইয়ং ফাউল করলে পেনাল্টিটি পায় ব্রাজিল। দেশের হয়ে নেইমারের সবশেষ ৬ গোলের সবকটিই পেনাল্টি থেকে।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে নেইমারের গোল হলো ৭৬টি, ১২৩ ম্যাচে। আর একটি গোল করলেই তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা কিংবদন্তি পেলের রেকর্ড।

বিশ্বকাপে এই নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার কোনো ম্যাচে প্রথম ১৩ মিনিটে দুই গোল করল ব্রাজিল। প্রথমবার তারা করেছিল ২০০২ আসরে কোস্টা রিকার বিপক্ষে, সেবার ৫-২ গোলে জিতেছিল তারা।

চার মিনিট পর আলিসনের নৈপুণ্যে জাল অক্ষত থাকে ব্রাজিলের। অনেক দূর থেকে মিডফিল্ডার হাং হি-চানের বুলেট গতির শট ক্রসবার ঘেঁষে জালে জড়াতে যাচ্ছিল, শেষ মুহূর্তে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান লিভারপুল গোলরক্ষক।

মিলিতাও-সিলভাদের জমাট রক্ষণ ভাঙায় তেমন সুবিধা করতে পারছিল না সন হিউং-মিন ও তার সতীর্থরা। সেজন্যই হয়তো পরের পাঁচ মিনিটে আরও দুবার দূর থেকে শট নেয় তারা, তবে আলিসনকে আর সেভাবে ভাবাতে পারেনি।

২৯তম মিনিটে চোখজুড়ানো ফুটবলে ব্যবধান আরও বাড়ান রিশার্লিসন।

প্রথমে মাথা দিয়ে, পরে পায়ে বল নিয়ে কারিকুরিতে প্রতিপক্ষের একজনকে ফাঁকি দিয়ে সামনে মার্কিনিয়োসকে বাড়িয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন রিশার্লিসন। এর মাঝেই মার্কিনিয়োস পাস দেন বাইরে চিয়াগো সিলভাকে আর অধিনায়ক থ্রু বল বাড়ান বক্সে। প্রথমে ডান পায়ে বল ধরে বাঁ পায়ের আলতো শটে লক্ষ্যভেদ করেন টটেনহ্যাম হটস্পার ফরোয়ার্ড।

প্রতিটি গোল শেষেই ট্রেডমার্ক হয়ে ওঠা নাচে উদযাপন করছিল ব্রাজিল। তবে তৃতীয় গোলটি ছিল যেন বিশেষ। রিশার্লিসনের এত সুন্দর গোলটা দেখে শিষ্যদের সঙ্গে নাচে যোগ দেন রাশভারি কোচ তিতেও।

৩৬তম মিনিটে আরেকটি বিধ্বংসী আক্রমণে স্কোরলাইন ৪-০ করেন পাকেতা। বাঁ দিক দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে বক্সে ঢুকে দারুণ চিপ শটে বল দূরের পোস্টে বাড়ান ভিনিসিউস আর ডান পায়ের নিখুঁত শটে গোলটি করেন ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড মিডফিল্ডার পাকেতা।

বিশ্বকাপে এই নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার কোনো ম্যাচের প্রথমার্ধে চার গোল করল ব্রাজিল। ১৯৫৪ আসরে মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রথম এমন কিছু করেছিল তারা।

দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের আক্রমণের ধার কমে অনেকটাই। সেই সুযোগে পাল্টা আক্রমণ শাণাতে থাকে কোরিয়া।

অবশ্য ৬২তম মিনিটে আরেকটি গোল খেতে বসেছিল তারা। ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে দুরূহ কোণ থেকে রাফিনিয়ার শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক কিম সিউং-জু।

ছয় মিনিট পর ব্যবধান কমানোর দারুণ সুযোগ পায় কোরিয়া। তবে হাং হি-চানের জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন আলিসন। তারপরও ছিল সুযোগ, তবে রুখে দেন মার্কিনিয়োস।

৭৬তম মিনিটে ব্যবধান কমানো গোলটি পায় এশিয়ার দেশটি। ফ্রি কিকে উড়ে আসা বল প্রথম দফায় ব্রাজিলের রক্ষণ হেডে ক্লিয়ার করলেও পেয়ে যান পাইক সিউং-হো। প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত শটে গোলটি করেন এই মিডফিল্ডার।

এর পরপরই নেইমারকে তুলে রদ্রিগো ও আলিসনের জায়গায় গোলরক্ষক ওয়েভেরতনকে নামান তিতে।

৮৮তম মিনিটে স্কোরলাইনে নাম উঠতে পারতে বদলি নামা ৩৯ বছর বয়সী দানি আলভেসেরও। বক্সে ডান দিক থেকে তার অ্যাক্রোবেটিক শটটি রক্ষণে প্রতিহত হয়। পঞ্চম গোল হজমের হাত থেকে বেঁচে যায় দক্ষিণ কোরিয়া।

ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা তিনেক আগে পেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন, “হাসপাতালে বসে আমি ম্যাচটি দেখব এবং তোমাদের সবাইকে সমর্থন জানাব।”

দেশের মানুষ, বিশ্বজুড়ে সমর্থক এবং বিশেষ করে কিংবদন্তিকে নিরাশ করলেন না নেইমাররা। উপহার দিলেন দাপুটে পারফরম্যান্স। আর ম্যাচ শেষে পেলের ছবি সম্বলিত একটি ব্যানার হাতে নিয়ে দাঁড়ায় পুরো ব্রাজিল দল।

সামনে এবার সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াই। সে লক্ষ্যে আগামী শুক্রবার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল।

Credit: Bdnews24

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও