আইন- আদালত

আমাদের মুক্তি ভার্চুয়াল কোর্টে: প্রধান বিচারপতি

577_Screenshot_20211202-123458_Chrome.jpg

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ফাইল ছবি

বিচার ব্যবস্থাকে গতিশীল করতে বিচারক-আইনজীবীসহ সবাইকে প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

তিনি বলেছেন, মামলা জট থেকে মুক্তি পেতে হলে বিচারক-আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রযুক্তি ব্যবহারে ‘প্রশিক্ষিত হওয়ার বিকল্প নেই’।

আর করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তিনির্ভর যে বিচার ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তা ধারাবাহিক হলে আগামী দুইতিন বছরে ‘বিপ্লব’ ঘটে যাবে বলে তার বিশ্বাস।  

বুধবার সুপ্রিম কোর্টে ডিজিটাল আর্কাইভিং এবং ই-ফাইলিং ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বলছিলেন প্রধান বিচারপতি।

গত বছর মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের সব আদালতেও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় দেশের বিচার ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ ছিল।

পরে সুপ্রিম কোর্টের অনুরোধে মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্য বা যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় দিতে পক্ষদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আদালতকে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা দিয়ে আইন হয়। ১১ মে দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে প্রথম ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।

মহামারীর মত সঙ্কটাপন্ন সময়ে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে আদালত সক্রিয় রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইন প্রণয়ন ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, ব্যবস্থাপনার জন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকর্মীদের ভূমিকা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি।

সেই সাথে মহামারীর মধ্যে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর আগ পর্যন্ত দেশে আদালত বন্ধ থাকা ‘সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

প্রধান বিচারপতি হিসেবে মেয়াদের শেষ পর্যায়ে থাকা সৈয়দ মাহমুদ হেসেন বলেন, “আমার উত্তরসূরি যে আসবেন, উনি এ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এটাকে (প্রযুক্তিনির্ভর বিচার ব্যবস্থা) অনেক সামনে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের মুক্তি হল ভার্চুয়াল কোর্টে।

“কারণ আমাদের বিচারক সংখ্যা দুই-তিনগুণ করা প্রয়োজন হবে। কিন্তু এখনও সব জায়গায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিল্ডিং হয়নি। অথচ ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে।”

প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা বিচারক দুই-তিন গুণ করব, তাদেরকে কোথায় বসাব? ভার্চুয়াল কোর্ট হলে বিচারক বাসায় বসে বিচারকাজ পরিচলনা করতে পারবেন। এর জন্য আইনজীবীদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তাহলে অচিরেই আমরা মামলার জট থেকে মুক্তি পাব। তাছাড়া মামলার জট থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন ব্যাপার।”

মামলা করতে হলে এফিডেভিট সেকশনে (হলফনামা শাখা) যেতে হয়। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির মাধ্যমে আইনজীবীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের সথে হলফনামা শাখার সংযোগ স্থাপনের পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি।

এ বিষয়ে ভারতের উদাহরণ টেনে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, “এটি যদি করা যায়, তাহলে এফিডেভিট সেকশনে আসতে হবে না। চব্বিশ ঘণ্টায় ফাইল করা যাবে। ভারতে চব্বিশ ঘণ্টায় ফাইল করা যাচ্ছে। আমার যে উত্তরসূরি আসবেন, আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে তিনি যদি এটা করেন, তাহলে বিচার বিভাগে একটা বিপ্লব ঘটে যাবে।”

এই যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের অপরিহার্যতা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যে জায়গায় যাচ্ছে, শুধু মুখে কথা বলবেন, লেখা হয়ে যাবে, কষ্ট অনেক কমে যাবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এমন জায়গায় যাবে যে জুডিশিয়ারিতে কোন পেন্ডিং (বিচারাধীন) মামলা থাকবে না। প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করতে হবে এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।”

সব ই-ফাইলিং চালু হবে: আইনমন্ত্রী

ই-জুডিশিয়ারি প্রজেক্টের মাধ্যমে সারাদেশে আদালতগুলোতে পর্যায়ক্রমে ই-ফাইলিং চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে আইনন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এ পদ্ধতিতে মামলা দায়ের হলে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের সাথে আদালতের প্রত্যক্ষ সংযোগ ঘটবে।

“বিচার প্রক্রিয়ার শুরুতেই বিচারপ্রার্থী জনগণের অংশগ্রহণ বাড়বে। এতে আদালতের কর্মঘণ্টারও সাশ্রয় হবে। তাছাড়া বিচারপ্রাপ্তি অধিকতর স্বচ্ছ, দ্রুত এবং সহজলভ্য হবে।”

মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল আর্কাইভিং সিস্টেমের মাধ্যমে ২০০০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সকল মামলার রায় সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা পর্যায়ক্রমে নথির ডিজিটাল আর্কাইভিং ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব  মো. গোলাম সারওয়ার, সুপ্রিম কোর্টের  রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর আলোচনায় অংশ নেন।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও