বাংলাদেশ

অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জে চলছে মুদ্রা কেনাবেচা

5974_1674033360.cid.jpg

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৩৫টি। তবে এর বাইরে অবৈধভাবে ব্যবসা করছে  হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান।

এর বাইরে আরও কয়েকশ নামমাত্র প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার সদস্যরা ফোনে ফোনে বা ব্যাগ কাঁধে ঘুরে ঘুরে অবৈধভাবে দেশি-বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচা করছেন।

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

এর আগে মঙ্গলবার রাজধানীর পাঁচটি স্থানে একযোগে অভিযান চালিয়ে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের ১৪ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

গ্রেফতাররা হলেন, আবু তালহা ওরফে তাহারত ইসলাম তোহা (৩২), আছাদুল শেখ (৩২), হাছান মোল্যা (১৯), আব্দুল কুদ্দুস (২৪), হাসনাত এ চৌধুরী (৪৬), শামসুল হুদা চৌধুরী ওরফে রিপন (৪০), সুমন মিয়া (৩০), তপন কুমার দাস (৪৫), আব্দুল কুদ্দুস (৩২), কামরুজ্জামান রাসেল (৩৭), মনিরুজ্জামান (৪০), নেওয়াজ বিশ্বাস, আবুল হাসনাত (৪০) ও শাহজাহান সরকার (৪৫)।

অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ টিমের তথ্য ও সহযোগিতায় রাজধানীর গুলশান-১, রিংরোড, মোহাম্মদপুর, উত্তরার আশকোনা, এবি মার্কেট, চায়না মার্কেটে একযোগে পাঁচজন বিশেষ পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকায় অবৈধ।

এ সময় গ্রেফতারদের কাছ থেকে এক কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৬ টাকা সমমূল্যের ১৯টি দেশের বৈদেশিক মুদ্রাসহ সর্বমোট এক কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৬ টাকা জব্দ করা হয়। গ্রেফতাররা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিজস্ব অফিস এবং ভাসমান যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা করে আসছিলেন বলে জানান তিনি।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিআইডি প্রধান বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বিদেশি মুদ্রা অবৈধভাবে কেনাবেচা করে আসছিল। সারা দেশে আরও এক হাজারের বেশি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ।  

তিনি জানান, এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিআইডির অপারেশনাল কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। অভিযানের কারণে অনেক অবৈধ প্রতিষ্ঠানের অফিস গুটিয়ে কাঁধেও ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে ঘুরে ঘুরে ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে ব্যবসা করছে। যার যেখানে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা দরকার সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে।

সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যখন কোনো কাজে, চিকিৎসা বিদেশে যাচ্ছেন, তার আগে কিছু প্রসিডিউর আছে। ভিসা পাওয়ার পর বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকে ভিসা দেখালে বিদেশি মুদ্রা পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তা দিতে বাধ্য। তাহলে কেন তারা অবৈধভাবে ১০০ টাকার ডলার ১১৫ বা ১২০ টাকায় কিনবেন? এটি অন্যায় ও অবৈধ।

তিনি বলেন, আমরা এই অবৈধ কাজকে উৎসাহিত করতে পারি না। লাগবেই যখন তখন বৈধভাবে নেব, ব্যাংক কিংবা বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান থেকে নেব। তাহলে ফুলে-ফেঁপে ওঠা এসব অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।

এই অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ পাচার করেছে কি না- জানতে চাইলে সিআইডি প্রধান বলেন, অল্প সময়ে অল্প পুঁজিতে বেশি আয়ের আশায় অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জগুলো তৈরি হচ্ছে। অভিযানে অবৈধ পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জের মধ্যে তিনটির অফিস থাকলেও বাকি দুটো প্রতারণামূলক বা ফেরারি। তাদের লোকজন কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মানি এক্সচেঞ্জ করতেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। তবে আমাদের দেশের স্বার্থে কষ্ট করতে হবে। দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার মতে কোনো অবৈধ পথ বেছে নেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য যে কোনো ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার যদি হুন্ডি কিংবা অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে জড়ানোর তথ্য মেলে, তবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও