বাংলাদেশ

রোমানিয়া থেকে ইউরোপ, শ্রমবাজার হারানোর শঙ্কায় বাংলাদেশ

5991_1674375446.romania.jpg

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ফের গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা যাচ্ছেন রোমানিয়ায়। তবে কর্মী যাওয়া শুরু হতে না হতেই সেখানকার শ্রমবাজার হারানোর শঙ্কাও উঠেছে।

কারণ সেদেশে গিয়ে বাংলাদেশিরা ইউরোপের তৃতীয় কোনো দেশে চলে যাচ্ছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রোমানিয়া।

বলকান যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে রোমানিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। তবে দুই দেশের মধ্যে আলোচনায় মূলত ২০২০ সাল থেকে ফের কর্মী নেওয়া শুরু করে রোমানিয়া।

তখন থেকে দেশটিতে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা যাচ্ছেন। এই ধারা অব্যাহতও রয়েছে।

২০২১ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রোমানিয়া সফর করেন। সফরকালে তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোগদান লুসিয়ান অ্যারেস্কুর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। মূলত এই সফরের পর থেকেই রোমানিয়া কর্মী পাঠানোর পথ উন্মোচন হয়। গত বছর রোমানিয়ার কনস্যুলার টিম ঢাকায় এসে প্রায় ৫ হাজার কর্মীকে ভিসাও দেয়।

রোমানিয়া বাংলাদেশিদের জন্য ২০২০ সালে ৫৮০টি, ২০২১ সালে দুই হাজার ৮৬৯টি আর ২০২২ সালে ১২ হাজার ৯৬০টি ভিসা দিয়েছে। তবে সেখানে এখন অবস্থান করছেন মাত্র তিন হাজার ৯৬ জন বাংলাদেশি। বেশিরভাগই রোমানিয়া থেকে তাদের কাজের মেয়াদ শেষ না করেই অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এই কারণেই রোমানিয়ার শ্রমবাজার হারানোর শঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশ।

কাজের মেয়াদ শেষ না করেই বাংলাদেশিদের ইউরোপের অন্য দেশে পাড়ি দেওয়া নিয়ে ইতোমধ্যেই অভিযোগ করেছে রোমানিয়া। বাংলাদেশে নিযুক্ত রোমানিয়ার অনাবাসী রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েলা সেজোনভ টেন সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ কর্মী রোমানিয়ায় পৌঁছে ইউরোপের অন্য দেশে চলে যান। এতে রোমানিয়া সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভিসার অপব্যবহার বন্ধে বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে রোমানিয়া গিয়ে অনেক কর্মীর চুক্তি অনুযায়ী বেতন না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তবে সেই অভিযোগ খুব কম। বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ কর্মীর রোমানিয়া পৌঁছে ইউরোপের অন্য দেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতাই বেশি।  

গত বছর তিন বাংলাদেশি কর্মী রোমানিয়ায় কাজের জন্য গিয়ে ইউরোপের অন্য দেশে পালানোর চেষ্টাকালে আটক হন। পরে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। একইসঙ্গে তাদের পাঁচ বছরের জন্য রোমানিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়। সে কারণে বাংলাদেশ ও রোমানিয়া সরকার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে।

রোমানিয়ায় অনেক কর্মীর চাহিদা রয়েছে। ২০২৩ সালে রোমানিয়া এক লাখ কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী বাংলাদেশ থেকে নিতেও আগ্রহী দেশটি। বিশেষ করে নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে সেখানে কর্মীদের সুযোগ রয়েছে।

রোমানিয়ায় গিয়ে ইউরোপের অন্য দেশে পাড়ি জমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশি কর্মীরা রোমানিয়ায় গিয়ে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করবেন। তাহলে সেদেশে আমাদের ইমেজ ভালো থাকবে। আর সেটা হলে, বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী রোমানিয়া যাওয়ার সুযোগ পাবেন। রোমানিয়া বাংলাদেশের জন্য খুব ভালো শ্রমবাজার হতে পারে।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও