রাজনীতি

বিএপির সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের চেষ্টা অন্ধকারে

709_download (3).jpg

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের ব্যর্থতার পর অনেক দিন ধরেই সরকারবিরোধী একটি বৃহত্তর ঐক্যের চেষ্টা চালাচ্ছে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। কিন্তু সেই বৃহত্তর ঐক্য এখনও আলোর পথ দেখছে না। ২০১৮ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণফোরাম, জেএসডি, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্য নিয়ে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গড়ে তুলতে সক্ষম হলেও নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটে তাদের। ওই নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ফলাফলের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট দুটিই কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে বলে জাগো নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও প্রায় চলে এসেছে। সময় আর মাত্র দুবছর। অন্যদিকে বিএনপি চেয়াপরসন বেগম খালেদা জিয়াও গুরুতর অসুস্থ। বিদেশে চিকিৎসার জন্য দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার আবেদন করা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মিলছে না। এরইমধ্যে প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে সরকারের নিকট আহ্বান জানিয়েছেন। ফলে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে নতুন করে বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে বিএনপির হাইকমান্ড।

বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া এখনও শুরু না হলেও বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়ার কথা চিন্তা করছে হাইকমান্ড। দলের ভারপ্রাপ্ত চেযারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তারা মনে করছেন চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া বিকল্প নেই।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী সবগুলো রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করার প্রচেষ্টা শুরু করতে চায় বিএনপি। এজন্য বাম-ডানসহ সব দলকে নিয়ে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গড়তে তৎপরতা চলছে দলটির ভেতরে। একসঙ্গে আন্দোলন, সংসদ ভেঙে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের আমূল সংস্কার আনাই এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে অনেক সিনিয়র নেতা বাম দলগুলোর সঙ্গে ব্যক্তি পর্যায়ে আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু, যাদের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশ দলই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার শর্তে ঐক্যের বিষয়ে রাজি বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে বিএনপির যে দলহীন ভাগ্নাংশ নিয়ে ২০ দল রয়েছে তাদের অধিকাংশই এখন জামায়াতে ইসলামীর নিয়ন্ত্রণে। ফলে জামায়াতকে বাদ দিতে গেলে আবার নতুন কোনো সমস্যা হবে কিনা তাও ভাবছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

ফলে নতুন এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে জামায়াতকে ‘বাধা’ মনে করলেও বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে রেখেই নতুন বৃহত্তর জোট করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করছে। বৃহত্তর জোট গঠনের প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ নিয়ে বিএনপিতে চলছে নানা আলোচনা। দলের অধিকাংশ নীতিনির্ধারক মনে করেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জামায়াতে ইসলামী এখন বিএনপির বোঝা।
 

দলীয় সূত্র জানায়, বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক এবং এর বাইরে যেসব দল আছে তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। ভুল বোঝাবুঝি ও অভিমানের কারণে ২০ দলীয় জোট ত্যাগকারী দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির সঙ্গে থাকা দুই জোটকে স্বতন্ত্র রেখে, নাকি একসঙ্গে সব দল মিলে বৃহত্তর ঐক্যে হবে এমন প্রশ্ন নিয়েও দলের মধ্যে রয়েছে নানা আলোচনা। জামায়াত ২০ দলীয় জোটে আছে। তাদের ব্যাপারে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি। কৌশলের অংশ হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে দীর্ঘদিন কোনো কর্মসূচিতে যায়নি বিএনপি। কিন্তু, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবিতে বিএনপির গণঅনশনে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা উপস্থিত হয়েছিলেন। ফলে জামায়াতে ইসলামীর উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে অনেক দলই আর বিএনপির গনঅনশনে উপস্থিত হয়নি।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বিএনপির গণঅনশনে সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন আসতে চাইলের জামায়াতে ইসলামীর কারণে তারা আর উপস্থিত হয়নি।

বিএনপি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারবিরোধী একটি সর্বদলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বাইরে থাকা সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিদর্লীয় সরকার আদায় করতে সক্রিয় কর্মসূচিতে যেতে। এরইমধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে।


এ কর্মসূচিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (খালেকুজ্জামান), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্রচিন্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ বাম দল এবং কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলকেও যুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।

একটি সূত্রের দাবি, বিএনপি যদি তাদের জোট শরিক জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করে, তাহলে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে ওঠা সম্ভব হবে না। কারণ, বাম দলগুলো জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনোভাবে সম্পর্ক রাখতে চায় না, সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যাই হোক না কেন। বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনেকেই বহু আগ থেকেই বলেছেন জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের জন্য। কিন্তু বিএনপি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, আর পারবে বলেও অনেকে মনে করেন না। যার কারণ হিসাবে অনেকেই বলছেন, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মূলত জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন। তার পরমর্শদাতাদের অধিকাংশই সাবেক শিবির নেতা।

তারা মনে করেন, দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় বিএনপি এক ধরনের আস্থাহীনতায় ভুগছে। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেই বৃহত্তর ঐক্য গঠন বিএনপির জন্য খুব সহজ হবে। নতুন এ উদ্যোগ সফল হলেই আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেয়ার ঘোষণা আসতে পারে এবং একটি বৃহত্তর সর্বদলীয় ঐক্য গড়ে উঠতে পারে।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, বর্তমানে তারেক রহমানই দলের একচ্ছত্র নেতা। তিনি সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দেবেন। জামায়াতের সঙ্গে দল সম্পর্ক রাখবে কী রাখবে না, সে বিষয়ে তাকেই সিদ্ধান্ত দিতে হবে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে বিএনপির বৃহত্তর জোট গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবার সম্ভবনা কমে আসছে।


বিএনপি’র বৃহত্তর জোট গঠনের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার জাগো নিউজের কাছে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে দলের বৈঠকের পর জানানো হবে।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও