ইসলাম

মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা, নতুন বছরে নতুন সম্ভাবনা

883_download (5).jpg

সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল-খাদেমির বৈঠক। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি বদলাতে ইরাকের ভূমিকা আলোচিত হচ্ছে
সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল-খাদেমির বৈঠক। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি বদলাতে ইরাকের ভূমিকা আলোচিত হচ্ছেছবি : রয়টার্স
৫০ বছর আগে নতুন বছরের প্রথম দিনটাতে পারস্য উপসাগরের পশ্চিম তীরের ছয়টি ছোট আমিরাতের বাসিন্দারা যুগপৎ উত্তেজনা ও উদ্বেগের অনুভূতির মুখোমুখি হয়েছিল। এর আগে কয়েক বছর ধরে সেখানকার জীবনধারা নাটকীয় বদল হচ্ছিল। সম্ভাব্য ভালো কিছুর প্রত্যাশা ছিল, আবার খারাপ কিছু ঘটে যাওয়ার শঙ্কাও ছিল।

উপনিবেশ-উত্তর ব্রিটেনের হাতে টাকার জোগান ছিল না। সুয়েজ খালের পূর্ব দিকে সাবেক উপনিবেশে তারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, শিগগিরই তার বরখেলাপ শুরু হলো। ফলে নতুন স্বাধীন দেশগুলো ভাসতে কিংবা ডুবতে শুরু করল।

এর মাঝেই দুবাই, শারজা, আজমান, আল ফুজাইরাহ, রাআস আল খাইমাহ এবং উম্ম আল ক্বাইওয়াইন আবুধাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠনের উদ্দেশে মিলিত হয়েছিল। কিন্তু এ প্রচেষ্টা ছিল দীর্ঘ এবং অনিশ্চয়তায় ভরা। ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বরের আগে দুবাইয়ের ইউনিয়ন হাউসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পতাকা ওঠেনি। ব্রিটিশ বাহিনীর শেষ সৈন্যদল জাহাজে ওঠার পর ইরান আবু মুসা দ্বীপ দখল করে নেয়। সেটা ছিল স্নায়ুক্ষয়ী সময়। দ্বীপটি সংযুক্ত আরব আমিরাত উপকূল থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ব্রিটিশরা কয়েক দশক ধরে দ্বীপটির সুরক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পর আবু মুসা দ্বীপকে ইরানের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দাঁড়ায়নি ব্রিটেন। আরব আমিরাতেরও সেটা রক্ষা করার সক্ষমতা ছিল না।

১৯৭১ সালের নববর্ষের প্রাক্কালে কেউই ধারণা করতে পারেননি ১৯৭২ সালের প্রথম দিনটাতে আসলে কী ঘটতে চলেছে। ৫০ বছর পর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর ক্ষেত্রে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। নতুন বছরের শুরুতে বৈশ্বিক আরেক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ওই অঞ্চল থেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে সুয়েজ খালের পূর্ব দিকে রক্তপাত ও সম্পদহানির আশঙ্কা কেউ কেউ করছেন।

গত জানুয়ারিতে জো বাইডেনের অভিষেকের আগেই মার্কিন প্রশাসন খোলাখুলিভাবে বলে দেয় মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থান ‘ন্যূনতম’ পর্যায়ে নামিয়ে আনবে। গত আগস্টে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাবাহিনীর তড়িঘড়ি প্রত্যাহারের পরবর্তী ফলাফল থেকে কেউ ধারণা করতেই পারেন মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটতে চলেছে।

যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যাওয়ায় ওই অঞ্চলের ওপর মার্কিন প্রভাব এবং ওয়াশিংটন–নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক স্বার্থও কমে আসবে। এ পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের নিজেদের জন্য কী অর্জন করতে পারে? এ ঘটনা নতুন বছরে আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসছে?
সাম্প্রতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টাগুলোর দিকে যদি লক্ষ করি তাহলে বড় কোনো ইঙ্গিতই মিলছে। গত ৬ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টা তেহরানে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। নিজেদের দুর্বলতা থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত এ ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে, সেটা ভাবা ভুল হবে। আরব বিশ্বে সবচেয়ে সুপ্রশিক্ষিত এবং সুসজ্জিত সামরিক শক্তি এখন আরব আমিরাত। ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ওই বৈঠকের মাত্র তিন দিন আগে তারা ফ্রান্স থেকে ১৯ বিলিয়ন ডলারে ৮০টি রাফায়েল জেট বিমান কেনার চুক্তি করে।

আরব আমিরাত ও ইরানের এই কূটনৈতিক সম্প্রীতি বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়। বাগদাদে সৌদি আরব ও ইরানের চার দফা আলোচনার পরই ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। আগস্ট মাসে ইরাক ও ফ্রান্সের যৌথভাবে আয়োজিত একটি সম্মেলনে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরান অংশ নিয়েছিল।

ডিসেম্বরের ১৩ তারিখে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত আরব আমিরাতে ঐতিহাসিক সফর করেন। এটা ইসরায়েলের কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফর। অবশ্য আব্রাহাম চুক্তির প্রথম উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রই নিয়েছিল। কিন্তু এখন এ বিষয়ে কোনো অষ্পষ্টতা নেই যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েল তড়িঘড়ি করে একটা বাণিজ্য চুক্তি করে ফেলেছে।

ভিয়েনায় ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ইরানকে ফিরিয়ে আনার একটি প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ ঘটনা কী অর্থ বহন করে? সংযুক্ত আরব আমিরাত কিংবা সৌদি আরব এ সংলাপের অংশ নয়, যদিও ওই অঞ্চলের সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে ইরান সমর্থন বন্ধ করছে কি না, তা নিয়ে দেশ দুটির যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে।

কিন্তু একটা বিষয় এখন পরিষ্কার যে সৌদি আরব ও আমিরাত আঞ্চলিক বৃহত্তর স্বার্থে উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলে তেহরানকে কূটনৈতিকভাবে যুক্ত করতে বদ্ধ পরিকর। শেষ করার আগে ১৯৭১ সালে আবার ফিরে যাওয়া যাক। সে বছরের নববর্ষ উদ্‌যাপনের আগে জানা যায়নি নির্দিষ্ট করে কী ঘটবে। মানচিত্রের অবস্থানগত কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাত নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কখনোই সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল না। যদিও তারা এখন নিজেদের ভাগ্য গড়ার জন্য যথেষ্ট সুসজ্জিত ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ

জনাথন গর্নাল ব্রিটিশ সাংবাদিক
প্রথম আলো

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও