পূর্ব লন্ডনের রমফোর্ড রোডে এক বর্বর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হামজা কামালি নামে ২৯ বছর বয়সী এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট, এক শনিবার ভোরবেলা। সেদিন নাইটক্লাব থেকে বের হওয়ার পর সালি বেয়া নামে ৩৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
ঘটনার আগের দিন রাতে, অর্থাৎ ৯ আগস্ট, সালি তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে স্ট্র্যাটফোর্ডে একটি পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন। পরে রাত আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটে তাঁরা আরও একটি নাইটক্লাবে যান। ক্লাবে প্রবেশ করার এক ঘণ্টা পর, সালির এক বন্ধু ক্লাবের বাইরে হামজা কামালির পরিচিত কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই হামজা কামালি সেখানে উপস্থিত হন এবং সালি বেয়ার সঙ্গে এক ধরণের উত্তেজনাপূর্ণ কথা কাটাকাটির পরপরই হামলা চালান। প্রথমে ছুরিকাঘাত করে তিনি সালিকে মাটিতে ফেলে দেন এবং পরে তাকে ধাওয়া করে আরও ছুরিকাঘাত করেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছানো জরুরি সেবাকর্মীরা সালিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তিনি প্রায় তিন সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষমেশ ২৯ আগস্ট মারা যান।
হত্যাকাণ্ডের পর হামজা কামালি নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়ে রক্তমাখা কাপড় ও প্রমাণ লুকানোর চেষ্টা করেন। তদন্তকারীরা তাঁর বাড়ি থেকে রক্তমাখা ট্রেনার জুতা উদ্ধার করেন, যা ঘটনার সময় পরনে ছিল বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। তাঁর হাতে একটি কাটা দাগও ছিল, যা তিনি নিজেই কাপড় দিয়ে বাঁধতে দেখা যায় সিসিটিভি ফুটেজে। ফরেনসিক পরীক্ষায় সেই রক্ত মিলিয়ে দেখা যায় যে তা সালি বেয়ার রক্তের সঙ্গে মিলে গেছে।
লন্ডনের ওল্ড বেইলি আদালতে মামলার শুনানিতে জুরি বোর্ড হামজা কামালিকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে। বিচারক তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন, যার আওতায় তিনি কমপক্ষে ২৫ বছর কারাগারে থাকবেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, এটি ছিল এক নির্মম, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং একেবারে অযাচিত হামলা। হামজা কামালি নিজের সঙ্গে ছুরি নিয়ে বেরিয়েছিলেন এবং সামান্য কথাকাটাকাটিকে হিংস্র হত্যাকাণ্ডে পরিণত করেন।
মৃত্যুবরণকারী সালি বেয়ার পরিবারের সদস্যরা আদালতের রায়ের পর কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেন। পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকেও বলা হয়, এই রায় সমাজকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়—রাস্তায় বা নাইটক্লাবের মতো জনসমক্ষে অস্ত্র বহন এবং সহিংস আচরণ কখনোই সহ্য করা হবে না।