লন্ডন

অক্সফোর্ড স্ট্রিট হবে গাড়িমুক্ত, সাদিক খানের পথচারীমুখী রূপান্তর পরিকল্পনা

12238_IMG_3003.jpeg

লন্ডনের মেয়র স্যার সাদিক খান রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম কেনাকাটার এলাকা অক্সফোর্ড স্ট্রিট থেকে গাড়ি নিষিদ্ধ করে পুরো এলাকাটি পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা আরও দ্রুত বাস্তবায়নের পথে রয়েছেন। নতুন প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, এই ‘বোল্ড পেডেস্ট্রিয়ানাইজেশন’ পরিকল্পনা মূল সময়সূচির আগেই শুরু হতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরে সাদিক খান অক্সফোর্ড স্ট্রিটকে সম্পূর্ণ পথচারীবান্ধব করার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছেন। তাঁর মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এটি শুধু পরিবেশবান্ধবই হবে না, বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে, স্থানীয় সেবা উন্নত করবে এবং কার্বন নিঃসরণ ব্যাপকভাবে কমাবে।

দ্য টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে, পরিকল্পনার প্রথম ধাপটি আগামী ২০২৬ সালের বসন্ত বা গ্রীষ্মের মধ্যে বাস্তবায়িত হতে পারে, যদি চলমান জনপরামর্শে যথেষ্ট সমর্থন পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে অক্সফোর্ড সার্কাস থেকে অরচার্ড স্ট্রিট পর্যন্ত অংশে নভেম্বরের শেষ নাগাদ ‘টেকনিক্যাল ট্রাফিক মডেলিং’ শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে।

অক্সফোর্ড স্ট্রিটের ব্যবসায়ী সংগঠন নিউ ওয়েস্ট এন্ড কোম্পানি (NWEC) গত সপ্তাহে সম্পত্তি এজেন্টদের জানিয়েছে, এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী ডি করসি বলেছেন, “আমরা বরাবরই বলে আসছি যে অক্সফোর্ড স্ট্রিটের রূপান্তর দ্রুতগতিতে ঘটাতে হবে। মেয়র ও তার দলের হাতে সময়সীমা থাকলেও আমরা অগ্রগতিকে স্বাগত জানাই এবং যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাব।”

মেয়রের দপ্তরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “অক্সফোর্ড স্ট্রিটের জন্য মেয়র সাহসী ও উদ্ভাবনী নতুন পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে একটি বিশ্বমানের নগর বিনোদন, কেনাকাটা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে উঠবে, যা হবে আরও পরিচ্ছন্ন, সহজগম্য ও আধুনিক।”

ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন (TfL) পরবর্তী জনপরামর্শে যানবাহন চলাচল ও সড়কবিন্যাস সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রস্তাবনা প্রকাশ করতে পারে। এই পরামর্শের ফলাফল ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা প্রকল্পের বাস্তবায়নের ভিত্তি স্থাপন করবে।

গত ২১ সেপ্টেম্বর অক্সফোর্ড স্ট্রিটে একদিনের জন্য গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করে “দিস ইজ অক্সফোর্ড স্ট্রিট” নামে এক বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেদিন পুরো এলাকা জুড়ে ছিল সংগীত, খাবার, শিল্পস্থাপন, আর্ট পারফরম্যান্স ও পপ-আপ ইভেন্ট। সাদিক খান নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং বলেন, “গাড়িমুক্ত অক্সফোর্ড স্ট্রিট সংগীত, খাবার ও বিনোদনে ভরপুর — দারুণ লাগছে এই দৃশ্য।”

উদ্যোগটিতে অংশ নেয় প্রধান আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো, যেমন জন লুইস, দ্য বডি শপ, এনবিএ, এমএলবি প্রভৃতি। এর আগে একটি জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ মানুষ মেয়রের ‘অক্সফোর্ড স্ট্রিট পুনর্গঠন’ পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন, আর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বিশেষভাবে পায়ে হাঁটার উপযোগী করার প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন।

সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, গত মাসের গাড়িমুক্ত দিনের পর ওই এলাকার ৭০ শতাংশ ব্যবসা আগের চেয়ে সমান বা বেশি বিক্রি করেছে, আর পথচারীর সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এনডব্লিউইসি’র জরিপে আরও দেখা গেছে, ৮৩ শতাংশ দোকান ভবিষ্যতেও এমন ট্রাফিক-মুক্ত ইভেন্টে অংশ নিতে আগ্রহী।

মেয়র সাদিক খান পূর্বে জানিয়েছেন, তিনি তাঁর তৃতীয় মেয়াদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই (মে ২০২৮) অক্সফোর্ড স্ট্রিটকে পুরোপুরি পথচারীবান্ধব করতে চান। নতুন পরিকল্পনা দ্রুত অনুমোদন পেলে সেই লক্ষ্য আরও আগে পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও