
‘ড্রাগ স্কোয়াড’ চালুর পর ১১ ড্রাগ ডিলারের বিরুদ্ধে রিপোর্ট, ৫০ হাজার পাউন্ডের ড্রাগ উদ্ধার ও ৯ জনকে জেলে প্রেরণ
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নতুন ও যুগান্তকারী উদ্যোগ ‘ড্রাগ স্কোয়াড’ নিয়ে বিবিসি ন্যাশনাল সোমবার চার মিনিটেরও বেশি দীর্ঘ একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রচার করেছে, যা একযোগে টিভি, রেডিও ও অনলাইনে সম্প্রচারিত হয়। এই প্রতিবেদন শুধুমাত্র কাউন্সিলের কার্যক্রম তুলে ধরেনি, বরং দেখিয়েছে—স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগের প্রতি কাউন্সিল কত দ্রুত, সাহসিকতার সঙ্গে এবং মানবিকভাবে সাড়া দিয়েছে। এই ‘ড্রাগ স্কোয়াড’ ইউকের ১ম ব্যাতিক্রমী প্রজেক্ট, যার মাধ্যমে ড্রাগ সম্পর্কিত অপরাধ, অ্যান্টি সোশ্যাল বিহেভিয়ার এবং ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সহায়তা - সবকিছুই একসঙ্গে মোকাবিলা করা হবে।
বিবিসি'র এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভোর সাতটায় - হোয়াইটচ্যাপেলের রাস্তায় বাজার বসেনি তখনও। এই সময় কাউন্সিলের এনফোর্সমেন্ট অফিসার জন ফিশ মাদক ব্যবহারের বিরুদ্ধে নজরদারি করতে রাস্তায় নেমে গেছেন। বিবিসির ক্যামেরা পুরো অভিযান অনুসরণ করে দেখিয়েছে কীভাবে কাউন্সিল সরাসরি মাঠে নেমে বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
জন ফিশ জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা ক্রমেই আরও কৌশলী হয়ে উঠছে এবং সামাজিক নজরদারি এড়াতে বিভিন্ন উপায় বের করছে। তাদের মোকাবিলায় কাউন্সিলের এই স্কোয়াড নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বিবিসি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পুলিশের বাজেট কর্তন ও পুনর্বিন্যাসের কারণে অনেক এলাকায় পুলিশি নজরদারি কমে এসেছে। কিন্তু টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল অপেক্ষা করেনি, বরং বাসিন্দাদের উদ্বেগ নিরসনে নিজেদের অনন্য ‘ড্রাগ স্কোয়াড’ গঠন করেছে।
টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলের কমিউনিটি সেফটি ডিরেক্টর ও সাবেক মেট পুলিশ চিফ সুপারিনটেনডেন্ট দাল বাবু বিবিসিকে বলেন, "পুলিশ বড় অপরাধচক্র নিয়ে কাজ করে, কিন্তু এলাকা-ভিত্তিক সমস্যা, অ্যান্টি সোশ্যাল বিহেভিয়ার এবং মাদক নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে মানুষের যে সহায়তা দরকার, তা কাউন্সিলই দিতে পারে। তাই এ উদ্যোগ মূলত একটি ট্রমা-ইনফর্মড, সহানুভূতিশীল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক পদ্ধতিকে সামনে নিয়ে এসেছে।"
বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে দেখিয়েছে -
‘ড্রাগ স্কোয়াড’ শুধু অপরাধ দমনের কাজ করছে না, বরং ট্রমা-ইনফর্মড অ্যাপ্রোচ ব্যবহার করে যারা মাদক ছাড়তে চান, তাদের চিকিৎসা, সহায়তা ও নিরাপত্তার পথে ফিরিয়ে আনছে।
চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এলাকায় বসবাস করা এবং এমবিই প্রাপ্ত সিস্টার ক্রিস্টিন বলেন, তার এলাকায় মাদক-সংক্রান্ত সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। কাউন্সিলের এই নতুন বিনিয়োগ ও সক্রিয় পদক্ষেপ তিনি স্বাগত জানালেও, কীভাবে জনগণ এই টিমের জবাবদিহি নিশ্চিত করবে - সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে চান। একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, যুবকদের জন্য আরও প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করাও জরুরি।
বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে কাউন্সিলের পাইলট উদ্যোগের প্রথম কয়েক মাসের প্রাথমিক সাফল্যও তুলে ধরে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন ড্রাগ স্কোয়াড চালু হওয়ার পর থেকে ১১ জন সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ী বা ড্রাগ ডিলারের বিরুদ্ধে রিপোর্ট পাওয়ার পর ১০ জনকে গ্রেফতার, ৫০ হাজার পাউন্ড মূল্যের ড্রাগ উদ্ধার, ১৫ জনকে চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবার সঙ্গে যুক্ত করা, এবং ৯ জনকে কারাগারে প্রেরণ ও ৫ জনের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল বিহেভিয়ার অর্ডার জারি করা হয়।
বিবিসি রিপোর্টারের সাথে কথা বলার সময় জন ফিশ এমন এক ব্যক্তির কথা তুলে ধরেন, যাকে তিনি কখনও ভালো বা প্রশান্ত দেখেননি-এখন তিনি ছয় সপ্তাহ ধরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন, পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক জোড়া লাগছে, চাকরির চেষ্টা করছেন। আবার আরেকজন ব্যক্তিকে দেখা যায়, যিনি নতুন একটি ফ্ল্যাট পাওয়ার খুশিতে টিমকে এসে ধন্যবাদ জানান।
বিবিসির এ বিশেষ প্রতিবেদন প্রমাণ করে - টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল শুধু আইন প্রয়োগ নয়, বরং মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল, সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানমুখী একটি মডেল তৈরি করেছে, যা দেশের অন্য অংশেও উদাহরণ হতে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার পপলার রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ডে নতুন ড্রাগ স্কোয়াডটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান। এসময় তাঁর সাথে ছিলেন ড্রাগ স্কোয়াডের সদস্য, ইন্টিগ্রেটেড এনফোর্সমেন্ট সার্ভিসের সদস্যরা এবং বিভিন্ন রেফারাল সেবার প্রতিনিধিবৃন্দ।
বিশেষায়িত এই ড্রাগ স্কোয়াড সম্পর্কে এক্সিকিউটিভ মেয়র লুৎফুর রহমান, “আমি গর্বিত যে আমরা দেশের প্রথম কাউন্সিল হিসেবে সংগঠিত মাদক অপরাধ মোকাবিলায় এবং মানুষকে আসক্তি থেকে মুক্তির পথ দেখাতে একটি নিবেদিত দল সৃষ্টি করেছি। বহু বছরের কৃচ্ছ্রসাধন ও পুলিশের বাজেট কমার পর, এই উদ্ভাবনী মডেলটি কম খরচে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সমাধানে কার্যকর উপায়, এবং আমি আশা করি অন্য কাউন্সিলগুলোও আমাদের পথ অনুসরণ করবে।”
ক্যাবিনেট মেম্বার ফর পাবলিক প্রোটেকশন, কাউন্সিলর আবু তালহা চৌধুরী বলেন, “আজ আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে মাদক স্কোয়াড চালু করছি, পাইলট পর্যায়ে দ্রুত ফল পাওয়ার পর। কমিউনিটির কথা শোনা, তাদের উদ্বেগে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, এবং নতুন কার্যকর পদ্ধতি প্রয়োগ করে আমরা আমাদের রাস্তাগুলোকে সবার জন্য নিরাপদ করতে চাই।
“বাসিন্দাদের উদ্বেগকে আমরা গুরুত্ব দিই এবং তার ভিত্তিতেই কাজ করি। বিবিসির এই প্রতিবেদন দেখায়—আমরা শুধু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না, বাস্তবেও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
কমিউনিটি সেফটি অর্থাৎ সার্বিক জন-নিরাপত্তা খাতে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ৮ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের অংশ হচ্ছে এই ড্রাগ স্কোয়াড। ২০২২ সাল থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় কাউন্সিল ৪ মিলিয়নের বেশি বিনিয়োগ করেছে, এবং ২০২৬ সালের মধ্যে আরও ৪ মিলিয়ন বিনিয়োগ করা হবে।