
শততম টেস্টে মুশফিককে সম্মান দিতে বিসিবি আগের দিন যে আয়োজনের কথা বলেছিল, সময়মতোই শুরু হয় তা। ২০ বছর আগে মুশফিকের অভিষেকের সেই রোমাঞ্চকে শততম টেস্টের আবেগের স্রোতে বয়ে এনে শুরু হয়ে আনুষ্ঠানিকতা।
তার হাতে বিশেষ টেস্ট ক্যাপ তুলে দেন হাবিবুল বাশার। দুই দশক আগে লর্ডসের ড্রেসিংরুমে যে হাত প্রথম টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দিয়েছিল তাকে, সেই হাত ধরেই আবার শততম টেস্টে বিশেষ ক্যাপ উঠল তার মাথায়। একটা বৃত্ত যেন পূর্ণ হলো।
এরপর মুশফিকের হাতে স্মারক ক্যাপ তুলে দিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ক্রিকেটার আকরাম খান। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল আর নাজমুল আবেদিন তুলে দিলেন বিশেষ ক্রেস্ট। প্রথম টেস্টের অধিনায়ক বাশার আর শততম টেস্টের অধিনায়ক শান্ত মিলে তুলে দিলেন সতীর্থদের স্বাক্ষর করা জার্সি।
আনুষ্ঠানিকতার পর্বে আয়ারল্যান্ড দলের কোনো ভূমিকা না থাকলেও পুরো আয়োজন পূর্ণতা দেয় আইরিশ ক্রিকেটারদের উপস্থিতিও। মাঠে না থাকলেও গ্যালারিতে ছিলেন নারী জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। অধিনায়ক নিগার সুলতানাকে সেখানে দেখা যায়নি, তবে ছিলেন অন্য প্রায় সবাই।
এরপর ছোট্ট বক্তৃতাপর্ব। নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠে ফুটে উঠল যেন তার দল আর গোটা দেশের ক্রিকেট অনুসারীদের কথাগুলিই।
‘শুরুতে ধন্যবাদ দিতে চাই আপনার এই অর্জনের জন্য, সেই সঙ্গে আপনার পরিবারকেও, যারা আপনার পাশে ছিল। আমরা খুবই গর্বিত, আপনি আমাদের সঙ্গে এতদিন ধরে খেলছেন, খেলা উপভোগ করছেন। আমরা আপনার মতো খেলার চেষ্টা করি। আপনাকে অনুসরণ করতে চাই সবসময়। ছেলেবেলা থেকেই আপনার খেলা দেখেছি। সবসময় আপনার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজি।
‘আশা করব, আপনি আমাদের সঙ্গে খেলা চালিয়ে যাবেন। আপনি যেভাবে কঠোর পরিশ্রম করেন মাঠে ও মাঠের বাইরে, সবাই আলোচনা করে আপনার কঠোর পরিশ্রম নিয়ে, উন্মাদনা নিয়ে। আপনি সবসময় দলের জন্য খেলেন, দল নিয়ে চিন্তা করেন। কখনও নিজের জন্য ক্রিকেট খেলেননি। সবসময় চিন্তা করেছেন, কীভাবে টেস্ট দল এগিয়ে যাবে। এটা আমাদের সবার জন্যই অনুপ্রেরণার, বিশেষ করে তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য।’
সবশেষে মুশফিকের পালা। মাইক্রোফোন হাতে দাঁড়িয়ে তার চোখেমুখে আবেগ ও তৃপ্তির ছাপ, কণ্ঠে কৃতজ্ঞতা।
‘সবাইকে ধন্যবাদ এই দারুণ সুযোগটির জন্য। আমি সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা আজকে উপস্থিত হয়েছেন। আমার পুরো পরিবার, আমার বাবা-মা, বিশেষ করে আমার স্ত্রী, যে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, কাটিয়েছে অনেক নির্ঘুম রাত। দলের সবাই, কোচ, বন্ধুবান্ধবসহ সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা জানাচ্চ্ছি।’
আমি চেষ্টা করি শতভাগ দেওয়ার, যেটা আমি সবসময় করি। আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দলকেও ধন্যবাদ জানাই এখানে উপস্থিত থাকার জন্য। আশা করি, দারুণ একটি টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আমরা উপলক্ষ উদযাপন করব।’
এই পুরো আয়োজন কেবল একজন ক্রিকেটারের অর্জন উদযাপন নয়, এটা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে টিকে থাকা, লড়াই করে এগিয়ে যাওয়া, প্রতিটি ছোট-বড় ব্যর্থতা পেরিয়ে সামনে ছুটে যাওয়ার গল্প। আর সেই গল্পের নাম—মুশফিকুর রহিম।