
নতুন বছরে ওজন কমানো অনেকেরই একটি সাধারণ লক্ষ্য হলেও এ উদ্দেশ্যে সোশ্যাল মিডিয়া বা অবৈধ অনলাইন চ্যানেল থেকে ওজন কমানোর ইনজেকশন কেনার বিরুদ্ধে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের ওষুধ ও স্বাস্থ্যপণ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, এসব অবৈধ উৎস থেকে ওষুধ কেনা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
ওজন কমানোর জন্য ব্যবহৃত ওয়েগোভি ও মাউনজারোর মতো ইনজেকশন সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাউনজারো ব্যবহারে ৭২ সপ্তাহে গড়ে শরীরের ওজন প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। তবে এনএইচএসে এসব ওষুধের সীমিত প্রাপ্যতা, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের বাধ্যবাধকতা এবং উচ্চমূল্যের কারণে অবৈধ বাজার দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে।
এমএইচআরএ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ওজন কমানোর ওষুধ ব্যবহারকারীদের শুধুমাত্র নিবন্ধিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফার্মেসি বা বৈধ বিক্রেতার কাছ থেকেই এসব ওষুধ কেনার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির সেফটি ও সার্ভেইল্যান্স টিমের সদস্য জেন ম্যাথিসেন বলেন, বছরের শুরুতে মানুষ স্বাস্থ্য ভালো রাখার নানা উপায় খোঁজে, কিন্তু অবৈধ অনলাইন বিক্রেতার কাছ থেকে ওষুধ কেনা স্বাস্থ্যের জন্য প্রকৃত ঝুঁকি তৈরি করে। তিনি বলেন, অনুমোদিত উৎস থেকে বৈধ পণ্য ব্যবহার করা এবং নিরাপদ ও প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য পেশাজীবীর পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।
ওজন কমানোর ওষুধের কালোবাজার যে কতটা বড় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে গত অক্টোবরে। সে সময় এমএইচআরএ নর্থ্যাম্পটনের একটি কারখানা থেকে প্রায় আড়াই লাখ পাউন্ড মূল্যের নকল ওজন কমানোর ইনজেকশন জব্দ করে। এসবের মধ্যে ছিল রেটাট্রুটাইড নামের একটি পরীক্ষামূলক ওষুধের ইনজেকশন পেন, যা এখনো যুক্তরাজ্যে ব্যবহারের অনুমোদন পায়নি। পরে গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব পণ্যের সঙ্গে যুক্ত অলুভি হেলথকেয়ার লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান টেলিগ্রামের একাধিক চ্যানেলে রেটাট্রুটাইডের নকল সংস্করণের বিজ্ঞাপন চালিয়ে যাচ্ছে।
ব্যাংকগুলোও ওজন কমানোর ওষুধসংক্রান্ত প্রতারণা নিয়ে সতর্ক করেছে। তাদের তথ্যমতে, এসব প্রতারণার শিকার হয়ে ভুক্তভোগীরা গড়ে প্রায় ১২০ পাউন্ড করে অর্থ হারাচ্ছেন।
এর আগেও এমএইচআরএ বিউটি সেলুন, ভুয়া ফার্মেসি ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওজন কমানোর ওষুধ বিক্রির বিজ্ঞাপন নিয়ে সতর্কতা জারি করেছিল, যা যুক্তরাজ্যে সম্পূর্ণ অবৈধ। সংস্থাটি জানিয়েছে, অস্বাভাবিকভাবে কম দাম, ‘মিরাকল ফলাফল’ বা ‘দ্রুত সমাধান’-এর প্রতিশ্রুতি দেওয়া বিজ্ঞাপনগুলো সাধারণত সন্দেহজনক।
এমএইচআরএর মতে, অবৈধ উৎস থেকে কেনা পণ্য নকল হতে পারে, সেগুলোতে ভুল মাত্রার ওষুধ থাকতে পারে কিংবা ক্ষতিকর উপাদান মিশ্রিত থাকতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করে বলেছেন, এসব অবৈধ বিক্রেতা অনেক সময় সঠিকভাবে ওষুধ সংরক্ষণ করে না। অত্যধিক ঠান্ডা তাপমাত্রা বা জমে যাওয়ার কারণে ওষুধের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নষ্ট হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও চিকিৎসক ড. জুবির আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, একজন চিকিৎসক ও রোগী নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে তিনি স্পষ্ট করে বলতে চান, অনিয়ন্ত্রিত উৎস থেকে ওজন কমানোর ওষুধ কেনা উচিত নয়। তিনি বলেন, এসব পণ্য নিরাপত্তা ও মানের কোনো তোয়াক্কা না করেই তৈরি করা হয় এবং এগুলো সাধারণ মানুষের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে। তিনি জনগণকে অপরাধীদের পকেট ভরানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও নিরাপদ স্থূলতা নিরাময়ের ওষুধ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নিবন্ধিত ফার্মেসি থেকেই সংগ্রহ করা উচিত।