সাহিত্য

চতুর্থতম বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশ

4567_download (10).jpg

এ বছরের বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশ হচ্ছে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার লেক ফরেস্ট এলাকায়। পরপর দুই বছর সমাবেশ হয়েছিল জুমে, কোভিডের সময়। এত এত কবি, সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার এই সমাবেশে এসেছেন, সানডিয়াগো থেকে আমরা কজন সাহিত্যপাগল মানুষ যোগদান করতে পেরেছি এ আয়োজনে, কী ভীষণ আনন্দময় একটা সময়।

কবিবন্ধু জানালেন, নারী লেখকেরা জামদানি শাড়ি পরছেন। সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ সকালে তাই আমরা কজন জামদানি পরে রওনা হলাম। আমাদের শহর থেকে সমাবেশ গাড়িতে দেড় ঘণ্টার পথ। ছুটির দিন, তেমন ভিড় নেই রাস্তায়। পথে বইমেলায় কার কী বই বের হবে, এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে পৌঁছে গেলাম সমাবেশে। দেড় ঘণ্টার পথ কখন শেষ হয়েছে বুঝিনি।

নিবন্ধন শেষে গিয়ে বসলাম বিশাল হলে। পরিচিতি পর্ব তখন শুরু হয়েছে। দীপেন ভট্টাচার্য ও পূরবী বসু, যাঁরা পুরো বিশ্বের বাংলাদেশি কবি-লেখকদের একসঙ্গে করে সাহিত্যকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে এ সমাবেশের সূচনা করেছিলেন, তাঁদের দেখলাম। সুদূর কানাডা, লন্ডন, প্যারিস ও আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে এসেছেন কবি-সাহিত্যিকেরা। পরিচিতির পর্ব শেষে গান গাইল ক্রান্তি—সেন্টার ফর বাংলাদেশ ডায়ালগ উত্তর আমেরিকার পক্ষ হয়ে একদল এ দেশে জন্ম হওয়া পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পী।

‘ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা/ তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা/ ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা/ এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি/ ও সে সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি…’

এরপর রবীন্দ্রসংগীতের সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধ হওয়ার পরপর শুরু হয়েছিল স্বরচিত গল্প পাঠের আসর। নিজের লেখা গল্প দ্বিতীয়বারের মতো এত জ্ঞানীগুণী লেখকের সামনে পড়লাম। গল্প পড়ার পর দুই মিনিট আলোচনা। এক সুন্দর গঠনমূলক আলোচনা, চমৎকার লেগেছে। একজন লেখক নিজের গল্পটা না দেখে পড়ে গেলেন। তাঁর সব গল্পই নাকি তিনি মনে ধারণ করেন, দেখে পড়তে হয় না। কি অসাধারণ প্রতিভা! অতীতের গল্প, অতীতের সুখস্মৃতি আর বর্তমানের বাস্তবতা, ডিটেকটিভ গল্প শুনলাম আর চা খেলাম। গঠনমূলক আলোচনাও চলল, শিখলাম অনেক কিছু। মুগ্ধ হলাম প্রতিভায়।

এরপর শুরু হলো কবিদের কবিতা পাঠ। শুনে বুঝলাম, তাঁরা শুধু দক্ষ প্রতিভাবান কবি নন, অসম্ভব ভালো আবৃত্তিকারও। আমার কবিবন্ধু আবৃত্তি করার আগে বললেন, ‘অন্য কাউকে আবৃত্তি করতে দিয়ে দিই আমার সৃষ্টি?’ বললাম, ‘আপু, মন থেকে যে আবেগ নিয়ে পড়বেন আপনার কবিতা, আর কেউ তা পারবেন না।’ তিনি স্টেজে উঠে জানালেন, বহু আগে কবিতা লিখে কাকে যেন দিয়েছিলেন পড়তে, তিনি নাকি নিরুৎসাহিত করেছিলেন লিখতে, সে কারণে অনেকদিন কবিতা লেখেননি তিনি। তারপর অপূর্ব কণ্ঠে পড়লেন নিজের সৃষ্টি।

বিজ্ঞ আলোচকের আলোচনা শুনে মুগ্ধ হয়েছি। কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বিশ্বের দরবারে এ ভাষা, ছিল তার স্বপ্ন। দুপুরের খাবারের আগে কিনলাম সব লেখকের লেখাসমৃদ্ধ এ বছরের ম্যাগাজিন ‘হৃদ বাংলা’। ২০২০ আর ২০২২-এর আমার লেখা ‘হৃদ বাংলা’য় প্রকাশিত গল্প ‘আমার একজন ভাই’ খাবারের আগে পড়ে শেষ করলাম। দুপুরের খাবারের পরপর হয়েছিল বই পরিচিতি। একুশে বইমেলায় যাঁদের বই বের হয়েছিল গত বছর, তাঁদের বই পরিচিতি। সানডিয়াগো থেকে গিয়েছিল ছোট ভাই সঞ্জয় দে, ওর সপ্তম ভ্রমণকাহিনি নিয়ে। অসম্ভব ভালো লেখক সে।

চতুর্থতম বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশ
এরপর হয়েছে প্রবন্ধ পাঠ, সশরীর বা জুমে। আলোচনা পর্বে আমার একটু মতানৈক্য হয়েছে একজন লেখকের সঙ্গে। প্রবাসী লেখকেরা মূলধারার লেখকদের মতো এতটা গুরুত্ব নাকি পান না। বলেছি নিজের অভিজ্ঞতা। প্রথম আলোর মতো দেশের প্রথম সারির পত্রিকাও তো প্রবাসী লেখকদের উৎসাহিত করে চলেছে অবিরাম।

তবে জাতীয় পুরস্কার যাঁরা পান, অবশ্যই তাঁরা অসম্ভব ভালো লেখক। তাঁরা কি প্রসেসের মধ্য দিয়ে যান, বাংলা একাডেমিতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসব এবার দেশে গেলে। মূলধারার প্রতিযোগিতায় তো সবাইকে যোগ দিতে হবে, শ্রেষ্ঠ লেখক বেরিয়ে আসবেন সেভাবেই, তিনি দেশে থাকুন বা বিদেশে।

এরপর দেখলাম প্যারিস থেকে আসা আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলাদেশি নির্মাতার ডকুমেন্টারি। সৈয়দ শামসুল হককে নিয়ে তৈরি। কী অপূর্ব তার নির্মাণশৈলী। এ মহান শিল্পীকে নিয়ে মুগ্ধ হয়ে শুনলাম গান আর কবিতা:

স্বাধীনতা তুমি/ রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।/ স্বাধীনতা তুমি/ কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো/ মহান পুরুষ…’

এরপর শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চলে আসতে হলো আমাদের কয়েকজনকে। ফিরে এলাম কর্মব্যস্ত জীবনে অসম্ভব ভালো লাগা কিছু স্মৃতি নিয়ে। আসলেই তো, ‘সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি’, যাকে আমরা হৃদয়ে ধারণ করি।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও