যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রতিবেশী কানাডাও পড়েছে ‘গণঅবসর’ সমস্যায়। পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে যতজন চাকরি পাচ্ছেন, তার চেয়েও বেশি মানুষ অবসরে যাচ্ছেন। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে অচিরেই বড় সংকটে পড়তে পারে কানাডা।
করোনাভাইরাস মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্রে জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায় অনেকের। লকডাউনে ঘরবন্দি থাকতে গিয়ে তারা উপলব্ধি করেন, জীবন মানে অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে বছরের পর বছর পার করে দেওয়া নয়। নিজের মতো করে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোতেই বরং জীবনের সার্থকতা! এই ভাবনা থেকে দেশটিতে এত মানুষ চাকরি ছাড়তে শুরু করেন যে, তাদের গণহারে অবসর নেওয়ার প্রবণতার নামই হয়ে যায় ‘গ্রেট রেজিগনেশন’।
যুক্তরাষ্ট্রে ‘গ্রেট রেজিগনেশন’ পর্ব দৃশ্যত শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যে প্রতিবেশী কানাডাতেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে একই প্রবণতা। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা স্ট্যাটসক্যানের তথ্য বলছে, শুধু ৬৫ বছর বয়সোর্ধ্বরা নন, গত এক বছরে সেখানে ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী বহু মানুষই আগেভাগে অবসর নিয়েছেন।
গত আগস্ট পর্যন্ত এক বছরে কানাডায় অন্তত ৩ লাখ ৭ হাজার মানুষ অবসর নিয়েছেন। এটি আগের বছর একই সময়ের তুলনায় অন্তত ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০১৯ সালের আগস্টের তুলনায় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
করোনা মহামারির প্রথম দুই বছরে কানাডায় অবসর নেওয়ার বয়স ছুঁয়েছেন অনেকে। স্ট্যাটসক্যানের তথ্যমতে, এ সময়ে অন্তত ৬ লাখ ২০ হাজার মানুষের বয়স ৬৫ ছাড়ায়। কিন্তু মহামারির কারণে তখন নতুন নিয়োগ কার্যত বন্ধ ছিল।
দেশটিতে গত মে মাস থেকে শুধু স্বাস্থ্যখাতেই চাকরি ছেড়েছেন ৩৪ হাজার মানুষ। মহামারির সময় তাদের অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো ছুটি ছাড়া দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
গণঅবসরের কারণে কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে কানাডার পরিবহন খাতেও। ট্রাকচালকদের প্রশিক্ষণ সংস্থা ট্রান্স-কানাডা কলেজের স্বত্বাধিকারী টনি রিডার জানান, অনেক চালক বয়স হয়ে যাওয়ায় অবসর নিচ্ছেন বা ট্রাক চালানো বাদ দিয়ে ভিন্ন ধারার জীবন বেছে নিচ্ছেন৷
দেসজার্দিনস গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ জিমি জিন মনে করেন, স্বেচ্ছা অবসরের এ ঢেউয়ের কারণে নিকট ভবিষ্যতে বড় সংকটে পড়তে পারে কানাডা। তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই বুঝতে পারছিলাম এমন একটা (অবসর নেওয়ার) ঢেউ আসছে। এমন সময় যে আসবে তা অনুমান করা যাচ্ছিল। আগামী বছরগুলোতে এ সংকট শুধুই বাড়বে।
সূত্র: রয়টার্স, ডয়েচে ভেলে