ফ্রান্সে বসবাসরত কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি সময়মতো পাসপোর্ট না পাওয়াতে অবৈধ হওয়ার আশঙ্কায় আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছেন। ফ্রান্সে অবস্থানরত মো. শাওন ( বাড়ি কুমিল্লা )তিন বছর ধরে পাসপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন। ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসে যাওয়া-আসা করছেন পাসপোর্টের খবর নিচ্ছেন কিন্তু কোনো সুখবর আসছে না। পাসপোর্ট পেতে দেশে এক দালালকে তিন লাখ টাকার মতো দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। তিক্ততা এবং নিজের জীবনের প্রতি ঘৃণা জন্মে গিয়েছে তার। মানবজমিন প্রতিনিধিকে শাওন জানিয়েছেন, এই পাসপোর্ট না পাওয়ার যন্ত্রণা আর নিতে পারছেন না তিনি। বলেন, মন চাচ্ছে আত্মহত্যা করে ফেলি।
আরেক ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশি মোস্তাক( বাড়ি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ) বলেন-আমার একটা দাবি - বাংলাদেশ থেকে বিষ পাঠাক নাহয় পাসপোর্ট পাঠাক।
আরেক ফ্রান্স প্রবাসী আজিজ ( বাড়ি মৌলভীবাজারের ,জুড়ীতে ) বলেন, দীর্ঘদিন থেকে স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখতে পাচ্ছি না। পাসপোর্ট না পাওয়াতে দেশে যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে আছে ।
অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে যে জবটা ছিল সেটা চলে গেছে। এমন একটা মানসিক চাপে আছি যে, যেকোনো সময় গাড়ির নিচে চাপা পড়ে নিজেকে আত্মাহুতি দিতে ইচ্ছা করে।
আরেক ফ্রান্স প্রবাসী দেলোয়ার হোসেন জয় ( বাড়ি বালাগঞ্জ) বলেন, আমরা যখন মধ্যপ্রাচ্যে কোনো দেশে আসি তখন বয়স বাড়িয়ে আসতে হয়। তার পর যখন তুর্কি, গ্রিস, ইতালি হয়ে ফ্রান্সে এসে আন্ডার এইজ এ আঠারো -এ আশ্রয় নেই। তখন বয়সের একটা পার্থক্য হয়। আমরা পাসপোর্ট না পাওয়ায় বৈধ থেকে আবার অবৈধ হয়ে যাব। আমাদের মতো নিরীহ মানুষের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দয়া করে একবার পাসপোর্ট সংশোধনের সুযোগ দেন না হলে আমাদেরকে বিষ দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশকিছু প্রবাসী বলেছেন, ঢাকা আগারগাঁও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এর সাথে যোগাযোগ রেখে একটা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে ফোন আসে তাদের কাছে এবং ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা করে দিতে হয় এবং যারা তাদের শর্ত মত দিতে পারছেন অনেকেই তাদের পাসপোর্ট ইতিমধ্যে পেয়েছেন।
প্রবাসীদের এই পাসপোর্ট বিড়ম্বনা এবং নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শুনে প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান মাহমুদ বলেন, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসা উচিত এবং আশ্বস্ত করা উচিত প্রবাসীদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিল সমস্যা সমাধানে ।
আরেক প্রবাসী সাংবাদিক লুৎফুর রহমান বাবু বলেন, এই প্রবাসীদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যার কথাটি দূতাবাসকে বার বার মেইল করে জানিয়েছি । দূতাবাস তো অনেক ক্ষেত্রে আন্তরিক এবং সহযোগিতা করে থাকে প্রবাসীদের । হয়তো অভ্যন্তরীণ কোনো আইনি জটিলতা রয়েছে । প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এই-পাসপোর্ট ইস্যুতেও দূতাবাসের প্রবাসীদের আন্তরিক সহযোগিতা করা উচিত। ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, অনেকেই দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে এখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়, মিথ্যা তথ্য দেয়া ক্রিমিনাল অফেন্স এর মতো কাজ করে । ফলে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অনেক সমযয়ে পাসপোর্টগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আটকে দেয় । এটা তো স্বাভাবিক, কোনো অপরাধীকে পাসপোর্ট দেওয়া উচিত কি-না বলে তিনি প্রশ্ন তোলেন।
ফ্রান্স জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বলেন, এই পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রবাসীরা আমাকে ফোন দেয় -রাষ্ট্রদূতের সাথে দেখা করেছি এ বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছি ,পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি । অচিরেই সমাধান হবে বলে বিশ্বাস করি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়ে নজর দেয়া উচিত তাহলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভুক্তভোগীরা পাসপোর্ট হাতে পাবে এবং তাদের জীবন রক্ষা পাবে।দায়িত্ব দূতাবাসকেও নিতে হবে ।
মানবজমিন প্রতিনিধির সাথে এক অনলাইন সাক্ষাৎকারে পুলিশের সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক প্রবাসীদের এই পাসপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যার কথা শুনে অনেকটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, প্রবাসীদের উচিত দূতাবাস ঘেরাও করা। দূতাবাস বসে বসে এখানে কি করছে? তাদের রাখা হয়েছে এই প্রবাসীদের সমস্যাগুলো দেখার জন্য । তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, প্রবাসীদের এই পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ,প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং আইজিপি ,পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লিখিত আকারে জানানোর জন্য ।
ভুক্তভুগী প্রবাসীদের এই-পাসপোর্ট সমস্যা সমাধানে ফ্রান্স বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করলে এরকমই বক্তব্য পাওয়া যায় সচরাচর।দূতাবাস কোনো পাসপোর্ট ইস্যু করে না। প্রবাসীদের পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ করে তা পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ঢাকার পাসপোর্ট অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। ঢাকা থেকে পাসপোর্ট ইস্যু হলে দূতাবাস যত দ্রুত সম্ভব তা হস্তান্তর করে।
অনেকে আবেদনে ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে থাকেন। এসব কারণে কারও কারও আবেদন সিস্টেমে আটকে যায়। ভেরিফিকেশনেও অনেকের আবেদন ঝুলে যায়। এখানে আমাদের কিছু করার থাকে না। আমরা চাই প্রত্যেক প্রবাসীই যাতে পাসপোর্ট পায়। ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। তা কিছু যৌক্তিক আবার কিছু অযৌক্তিক। এগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। আমরা ঢাকায় বিষয়টি জানিয়েছি। ওখান থেকে কোনো রেসপন্স পেলে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবো।