বাংলাদেশ

ফের নগদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা : বাংলাদেশ ব্যাংক

11432_ce41f090984ddbe3554b8ad9eea11c49_9.jpg

মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’–ফের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। ফলে পুনরায় অবৈধ টাকা বা ই-মানি তৈরীর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এই সুযোগে নতুন করে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মীদের বিভাগ পরিবর্তন করা শুরু করেছে তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন্সিক অডিটের সহায়তা করার অপরাধে ২৩ জন কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 
শনিবার (১৭ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান। 

আগামী ১৯ তারিখে বিষয়টি সম্পর্কে আদালতে ফুল বেঞ্চের একটি হেয়ারিং রয়েছে। তারপরেই নগদের পরবর্তী করণীয় এবং নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানা যাবে।

এর আগে প্রতিষ্ঠানটিদের যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। 

গত ১৫ মে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’–এ প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নগদ পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে প্রশাসক দল নগদে কাজ করছিল, তারা দায়িত্ব হারিয়েছে। ফলে নগদের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগ দুই প্রতিষ্ঠানই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।

এদিকে নগদের অর্থ তছরুপের জন্য যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, তাদের মধ্যে একজনকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি হলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক পরিচালক মো. সাফায়েত আলম। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নিয়ে তিনি নতুন মানবসম্পদ কর্মকর্তা নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে শুরু করেছেন। গত দুই দিনে শীর্ষ পর্যায়ের ২৩ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলার আরো দুই আসামিকে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে নগদ পরিচালনায় নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেওয়া আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে আগামী ১৯ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। প্রশাসক বসানোর পর নিরীক্ষায় উঠে আসে, নগদ লিমিটেডে বড় ধরনের জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে। ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক জালিয়াতি এবং অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক অর্থ বা ই-মানি তৈরি করা হয়েছে। এসব কারণে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। সাবেক সরকারের আমলে নিয়মের বাইরে গিয়ে গ্রাহক বানানো ও সরকারি ভাতা বিতরণসহ একচেটিয়া সুবিধা পায় নগদ। প্রতিষ্ঠানটিতে যখন এসব অনিয়ম সংঘটিত হয়, তখন এর পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। সবার চোখের সামনে এসব অনিয়ম হয়। এ ঘটনায় সরকারের ডাক বিভাগের আটজন সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি), নগদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (সিইও) ২৪ জনকে আসামি করে মামলা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরো বলেন, ‘জনগণের টাকার নিরাপত্তা দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব। আগে প্রতিষ্ঠানটি যেনতেনভাবে চলেছে। এ জন্য সরকার পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছিল। এখন আদালতের আদেশের কারণে সেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়েছে। আমরা সেই আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করি, জনগণের টাকার নিরাপত্তা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আবার দায়িত্ব ফিরে পাবে।’

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও