রাজনীতি

বাংলাদেশি মুদ্রার নকশাগুলো যার হাতে গড়া

11495_334e7b0034ae33939b90b44a4da85be2_17.jpg

বাংলাদেশের কাগজে মুদ্রার নোটে আরেক দফা পরিবর্তন হয়েছে। এবারও বাজারে আসছে নতুন নোট। এমন চিত্রকর্ম আর কোনো নোটে নেই বলে অনেকে মনে করছেন। তবে আমাদের নোটগুলোর ডিজাইনার কে? মানুষের মনে তা জানার আগ্রহ বেড়েছে।
  
জানা গেছে, বাংলাদেশি মুদ্রার নোটগুলোর ডিজাইনার নিভৃতচারী মুছলিম মিয়া। তিনি বাংলাদেশের সব প্রচলিত নোটের নকশাকার এবং নতুন আসন্ন নোটগুলোর নকশা প্রণয়ন কমিটির সদস্যও। ২০২০ সালে টাকশালের জেনারেল ম্যানেজার (প্রোডাকশন অ্যান্ড কন্ট্রোল, ডিজাইন অ্যান্ড এনগ্রেভিং) পদ থেকে অবসর নেন। বর্তমানে নিজের স্টুডিওতে সময় কাটাচ্ছেন নীরব এই কারিগর। শত শত কোটি টাকার নোটে যার নিপুণ হাতের ছাপ, তিনি থাকেন প্রচারের আড়ালে।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর ধুলদিয়া গ্রামে জন্ম মুছলিম মিয়ার। ছোটবেলা থেকেই আঁকার প্রতি দুর্দান্ত আগ্রহ। বাড়ির দেয়াল থেকে শুরু করে আশপাশের ভবন ছিল তাঁর ক্যানভাস। কয়লা, ইটের গুঁড়া, এমনকি পাতা দিয়েও আঁকতেন। বড় ভাইয়ের হাত ধরে এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন মোহাম্মদপুরের গ্রাফিক আর্ট কলেজে, যা বর্তমানে চারুকলা অনুষদ হিসেবে পরিচিত। সেখানে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৭৮ সালে।

তিনি স্নাতক শেষ করেন ছাপচিত্র বিভাগ থেকে ১৯৮৪ সালে। চারুকলার পড়া শেষ করে প্রথমে একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করলেও মন বসেনি। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের এনগ্রেভার পদের বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন। ভাইভা বোর্ডে এক পরীক্ষকের ছবি এঁকে সবাইকে মুগ্ধ করেন তিনি। সেই পরীক্ষকই ছিলেন টাকশালের প্রধান প্রকৌশলী। ১৯৮৫ সালে শিক্ষানবিশ এনগ্রেভার হিসেবে টাকশালে যোগ দেন। ১৯৮৭ সালে পাঠানো হয় সুইজারল্যান্ডে। সেখানে টাকা ও মুদ্রা খোদাই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। 

সেখানকার একজন প্রশিক্ষক ও ইতালিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের একজন এনগ্রেভার মুছলিম মিয়ার কাজে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, তুমি অনেক দূর যাবে। পরে টাকশালে ফিরেই শুরু হয় মুছলিম মিয়ার মুদ্রা নকশার প্রকৃত কাজ। স্মৃতিসৌধ, হাইকোর্ট ভবন, সংসদ ভবন, রাজশাহীর বাঘা মসজিদ, শহীদ মিনার—সবই স্থান পেয়েছে তার নকশায়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত ১০ টাকার নীল রঙের নোট, ৫০ টাকার সংসদ ভবন সংবলিত নোট এবং ৫০০ টাকার স্মৃতিসৌধ সংবলিত নোট তার নকশায় অনুমোদিত হয়। এসব নোট ছাপার প্রক্রিয়ায় সুইজারল্যান্ডে গিয়ে কাজ করেন তিনি।

পরে তিনি ডিজাইন করেন ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা, এমনকি দেশের প্রথম ১০০০ টাকার নোটও, যাতে শহীদ মিনারের ছবি ছিল। এ ছাড়াও পলিমারভিত্তিক ১০ টাকার নোট তৈরির প্রক্রিয়াও করেন নিজের বাসার কম্পিউটার ব্যবহার করে, যা সরকারের কয়েক কোটি টাকা সাশ্রয় হয়।

অবশেষে দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ‘মই দেওয়া’ শিরোনামের একটি চিত্রকর্ম স্থান পায় ৫০ টাকার নোটে। সেই নোটের ডিজাইনও করেছিলেন মুছলিম মিয়া। কালার সেপারেশনসহ প্রতিটি ধাপে তার সম্পৃক্ততা ছিল। ২০১১ সালে একযোগে ২ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত নতুন ৯টি নোটের নকশা করেন তিনি। 

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও