স্টারমারের ‘না’ কি টিউলিপকে আড়াল করার কূটনৈতিক কৌশল?
লন্ডন সফররত অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার-এর বৈঠক না হওয়ার বিষয়টি ঘিরে দেশ-বিদেশে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে।
বিশেষ করে ফাইনান্সিয়াল টাইমস–এর একটি প্রতিবেদনকে ঘিরে;
যার শিরোনাম:
“Starmer declines to meet Bangladesh leader tracking down missing billions”
এই শিরোনামটি যতটা সরল, বাস্তবে ততটাই বিভ্রান্তিকর। কারণ প্রতিবেদনটির ভেতরে কোথাও ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কোনো মন্তব্য নেই। বরং তার দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগকে যুক্তিসম্মত, প্রয়োজনীয় এবং ব্রিটেনের সহযোগিতাপূর্ণ অবস্থান হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে জটিল দলীয় রাজনীতি এবং টিউলিপ ফ্যাক্টর
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক না হওয়ার কারণ শুধু সময়সূচি নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে লেবার পার্টির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ ও বিব্রতকর বাস্তবতা।
ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ প্রত্যাখ্যান করার পেছনে যে বড় কারণটি আলোচনা হচ্ছে তা হলো লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যে এমপি হলেও, বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার অভিযোগ রয়েছে, যেখানে তিনি সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে জড়িত হিসেবে চিহ্নিত।
এই প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূসের সঙ্গে স্টারমারের বৈঠক রাজনৈতিকভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারত—বিশেষ করে লেবার পার্টির ভেতরেই যখন চাপ রয়েছে স্টারমারের ওপর। ফলে কূটনৈতিকভাবে এটি নিরাপদ সিদ্ধান্ত হলেও, নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হারানো।
FT-এর প্রতিবেদন: তথ্য শক্তিশালী, শিরোনাম রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তিকর
প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে লুটপাটের অর্থ চিহ্নিত ও ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সহযোগিতা করছে।
ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি লন্ডনের দুটি বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে, যেগুলো শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, FT-এর প্রতিবেদনটি সাবস্ক্রিপশন ছাড়া পড়া যায় না। ফলে অধিকাংশ মানুষ কেবল শিরোনামের উপর ভিত্তি করে ড. ইউনূসকে ‘অগ্রাহ্য’ করা হয়েছে মনে করছেন—যা তার বিরোধীদের জন্য প্রোপাগান্ডার অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউনূস নয়, দায় স্টারমারের কূটনৈতিক দ্বিধার
ড. ইউনূস কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাত বা ব্যক্তিগত বৈঠকের সুযোগ খুঁজছিলেন না। তিনি এসেছিলেন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও স্বচ্ছতা চেয়ে—একটি বৈধ, নৈতিক এবং সময়োচিত অভিযানের প্রতিনিধিত্ব করতে।
এর পরিবর্তে স্টারমারের এই ‘না’ বলা আসলে একটি কৌশলগত ‘এড়িয়ে যাওয়া’, যার পেছনে রয়েছে নিজ দলের বিব্রতকর রাজনীতিকে ঢেকে রাখার চেষ্টা।
এটি ড. ইউনূসের কোনো ব্যর্থতা নয়। বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক সুযোগের অপচয়—যা ব্রিটেনকে আরও নিরপেক্ষ, ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করতে পারত।
FT-এর প্রতিবেদনের শিরোনামটিকে যারা নেতিবাচক প্রচারে ব্যবহার করছেন, তাদের উদ্দেশ্য খুবই পরিষ্কার: একটি গঠনমূলক ও স্বচ্ছ অভিযানে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা।
ইতিহাস মনে রাখবে কে সাড়া দিয়েছিল ন্যায়ের ডাককে, আর কে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল দলীয় স্বার্থের জন্য।