যুক্তরাজ্য

৫ জুলাই ২০২৫, ১৮:০৭
আরও খবর

লন্ডনে প্যালেস্টাইনের পক্ষে আন্দোলন করায় পার্লামেন্টের সামনে থেকে প্রায় ২০ জন গ্রেফতার!

11624_london pro-palestine march.jpg

যুক্তরাজ্যে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নামে একটি প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মী সংগঠনকে সম্প্রতি “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে ঘোষিত করেছে ব্রিটিশ সরকার। ২ জুলাই ২০২৫ তারিখে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই প্রস্তাব পাশ হয়, যেখানে ৩৮৫টি ভোট পক্ষে এবং মাত্র ২৬টি ভোট বিপক্ষে পড়ে। এর ফলে ৫ জুলাই মধ্যরাত থেকে এই সংগঠনটি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা এখন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সরকারি ঘোষণার কয়েকদিন আগেই, এই সংগঠনের সদস্যরা যুক্তরাজ্যের ব্রিজ নর্দনের একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ করে সেখানে দুটি ভয়েজার বিমান ভাঙচুর করে। এই ঘটনার ফলে প্রায় ৭ মিলিয়ন পাউন্ডের ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। অভিযুক্ত চারজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের ১৮ জুলাই আদালতে হাজির করা হবে।

এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর ৫ জুলাই লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ারে এক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার সময় প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের প্রতি সমর্থন জানানোয় অন্তত ২০ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা “I oppose genocide. I support Palestine Action” লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন এবং কিছুজন “ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি” জাতীয় স্লোগান দেন। পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমানে ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী এমন বক্তব্যও নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রতি সমর্থনের শামিল এবং এজন্য ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

এই ঘটনার পর দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার কর্মী ও স্বাধীন মত প্রকাশের পক্ষের অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে “বাকস্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ব্রিটেনের একাধিক শিক্ষক, ধর্মগুরু, চিকিৎসক এবং সমাজকর্মী এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং বলছেন, এটি গণতান্ত্রিক সমাজে ভয়ঙ্কর নজির স্থাপন করেছে।

এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে এখন একটি বৃহত্তর বিতর্ক তৈরি হয়েছে—একপক্ষ মনে করছে, এটি একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অন্যপক্ষ বলছে এটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে বন্ধ করার একটি সরকারী কৌশল। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে একটি রিভিউ আবেদন করা হয়েছে, যার শুনানি জুলাই মাসের মধ্যেই হওয়ার কথা রয়েছে।

এ ঘটনাটি শুধু ব্রিটেন নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা মত প্রকাশকে সন্ত্রাসের সাথে একত্র করা হলে গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।

সর্বাধিক পঠিত


আরও খবর
ভিডিও