যুক্তরাজ্য

৭ জুলাই ২০২৫, ০৩:০৭
আরও খবর

আশ্রয়প্রার্থীদের কাজের বিরুদ্ধে ‘দেশব্যাপী অভিযান’ ঘোষণা করেছে হোম অফিস

11625_IMG_9197.jpeg

সম্প্রতি রাজনৈতিক বিতর্কের পর যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর একটি “দেশব্যাপী অভিযান” চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। মূলত হোটেলে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের অবৈধভাবে ডেলিভারি কাজে যুক্ত হওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে, বিশেষ করে ডেলিভারি রাইডারদের লক্ষ্য করে এই অভিযান পরিচালিত হবে। স্বরাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা “এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করতে একটি বড় পরিসরে অভিযান শুরু করবে।”

স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “কৌশলগত ও বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক এই কার্যক্রম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কর্মকর্তাদের একত্র করবে। এতে করদাতাদের অর্থে আবাসন বা আর্থিক সহায়তা পাওয়ার সময় যারা অবৈধভাবে কাজ করছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হবে।”

এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে একাধিক মিডিয়া প্রতিবেদনের তথ্য, যেখানে দেখা গেছে যে, আশ্রয়প্রার্থী হওয়ার দাবিতে হোটেলে অবস্থানরত কিছু ব্যক্তি—যারা আইনত কাজ করার অনুমতি পাননি—তারা ডেলিভারু, জাস্ট ইট এবং উবার ইটসের মতো কোম্পানিতে কাজ করছেন। তারা এসব অ্যাপ্লিকেশনে প্রবেশ করতে অফিসিয়াল মাইগ্রেশন স্ট্যাটাসধারীদের লগইন ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

দশ দিন আগে ছায়া স্বরাষ্ট্র সচিব ক্রিস ফিলিপ লন্ডনের একটি আশ্রয়প্রার্থী হোটেল পরিদর্শনে গেলে, সেখানে তিনি বিভিন্ন খাদ্য সরবরাহকারী কোম্পানির ব্যাগসহ মোটরবাইক দেখতে পান এবং সেই দৃশ্যের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন, যা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে, সোমবার উবার ইটস, ডেলিভারু এবং জাস্ট ইট-এর প্রতিনিধিরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে এসব কোম্পানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা যাত্রীদের (রাইডারদের) পরিচয় যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় মুখের ছবি যাচাইয়ের মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, যারা অবৈধভাবে কাজ করছেন, তাদের আবাসন বা আর্থিক সহায়তা বাতিল করা হতে পারে। পাশাপাশি, কোনো নিয়োগকর্তা যদি কাজের অযোগ্য কাউকে নিয়োগ দেন, তাহলে তাকে প্রতি কর্মীর জন্য ৬০,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা, পরিচালকের অযোগ্যতা কিংবা কারাদণ্ডের মুখে পড়তে হতে পারে।

এছাড়া, বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, লেবার সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকেই অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ এবং গ্রেপ্তারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকারের মতে, আশ্রয় এবং অভিবাসনের বিষয়টি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে একটি স্পর্শকাতর ও দুর্বল ক্ষেত্র, যা রিফর্ম ইউকে এবং রক্ষণশীল দলের পক্ষে কার্যকর প্রচারপত্র হয়ে উঠেছে।

যদিও অপ্রক্রিয়াজাত আশ্রয়প্রার্থীদের ফাইলের জট কিছুটা কমেছে, তবুও চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ছোট নৌকায় আগতদের সংখ্যা বাড়ছে। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাজ্য সফরে আসছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তখন এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টারমার তার সঙ্গে আলোচনা করবেন। আলোচনায় “একজন ফেরত, একজন গ্রহণ” চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে—যার আওতায় যুক্তরাজ্য ছোট নৌকায় করে আসা ব্যক্তিদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠাবে এবং বিনিময়ে যুক্তরাজ্য কিছু আশ্রয়প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেছেন, সরকার এই ধরনের কাজকে উৎসাহিত করে এমন “পুল ফ্যাক্টর” মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “অবৈধ অভিবাসনের কোনো একক সমাধান নেই। এজন্যই আমরা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে যুগান্তকারী চুক্তি স্বাক্ষর করেছি এবং বেশ কয়েকজন মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি।”

অন্যদিকে, ছায়া স্বরাষ্ট্র সচিব ফিলিপ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “আমার মতো একজন ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্রয়প্রার্থী হোটেলে গিয়ে এই ঘটনা তুলে ধরতে হচ্ছে—এটা সরকারের জন্য লজ্জাজনক। যারা অবৈধভাবে এই দেশে প্রবেশ করেছে, তাদেরই অনেকে এসব হোটেল থেকে অবৈধভাবে কাজ করছে। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার আমাদের করদাতাদের অর্থে পরিচালিত হোটেলগুলোতে এইসব কার্যক্রম বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সরকার চাইলে এখনই এটি বন্ধ করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি নিজে ডেলিভারু ও অন্যান্য ডেলিভারি কোম্পানির বাইক হোটেলের ভিতরের কম্পাউন্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি, অথচ নিরাপত্তারক্ষীরা কেবল আমার ভিডিও তোলায় মনোযোগী ছিলেন, প্রকৃত ঘটনাগুলো উপেক্ষা করেছেন।”

সর্বাধিক পঠিত


আরও খবর
ভিডিও