রাজনীতি

টেলিগ্রামে ‘চাঁদাবাজি’, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিডিয়ায় চাঞ্চল্যকর তথ্য

11669_IMG_9675.jpeg

আগামী ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভারতে নির্বাসনের এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। এমন সময় তার দল আওয়ামী লীগ চরম সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার বরাত দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দলটি নিষিদ্ধ হওয়া তাদের জন্য অপ্রত্যাশিত নয়, তবে টেলিগ্রামকে ঘিরে যেভাবে চাঁদাবাজি ও অনুপ্রবেশ ঘটছে, তাতে তারা হতবাক। মেসেজিং অ্যাপটিতে আওয়ামী লীগের এমপি, সাবেক মন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দিতে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বিভিন্ন অননুমোদিত গ্রুপে বাংলাদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি উঠেছে, যেখান থেকে তারা নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিক হয়রানি করছে।

টেলিগ্রাম গ্রুপে ‘অর্থ বাণিজ্য’

গত এক বছরে টেলিগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রধান সংগঠনিক প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। এসব গ্রুপে একেকটিতে সদস্যসংখ্যা ২০-৩০ হাজারেরও বেশি। প্রতিদিন রাত ৯টার পর এসব গ্রুপে ম্যারাথন আলোচনা হয়, যেগুলো চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। এতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা, সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।

নিউজ১৮-কে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, এসব আলোচনায় শেখ হাসিনা যোগ দিলেও, কে কথা বলবেন তা নির্ধারণে অর্থ লেনদেন হয়। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্রুপে এখন তিনি ‘গরম’ বক্তৃতা দিচ্ছেন, ঢাকা ঘেরাওয়ের আহ্বান জানাচ্ছেন; কিন্তু তার বক্তব্যে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিকল্পনা বা সময়সীমা আসেনি।

আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজ১৮-কে বলেন, "দলের ক্যাডাররা ওবায়দুল কাদেরকে আর গ্রহণ করছে না। তিনি এখন টেলিগ্রামে নিজস্ব গ্রুপ বানিয়ে নিজের গুরুত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছেন, যেখানে মূল উদ্দেশ্য দলীয় কার্যক্রম নয়, অর্থ আত্মসাত। সিনিয়র নেতা, এমপি ও সাবেক মন্ত্রীদের কাছ থেকে শেখ হাসিনার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের নাম করে তিনি অর্থ আদায় করেছেন—এমন খবর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব পেয়েছে।"

অনুপ্রবেশ ও গোয়েন্দা নজরদারি

এতদিন জামায়াত-বিএনপির কর্মীদের অনুপ্রবেশের আশঙ্কা ছিল। এবার গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সমর্থকদের এসব গ্রুপে ঢুকে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানায়, এরা কথোপকথন রেকর্ড করে, যা ব্যবহার করে নেতাকর্মীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এসব গ্রুপের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে গ্রেপ্তার শুরু হয়ে গেছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

কবে এই সন্দেহ প্রথম দেখা দিল? এ প্রশ্নের জবাবে দলের এক নেতা বলেন, “মাঝেমধ্যে কিছু কটাক্ষমূলক মন্তব্য আসতো। কিন্তু ‘ধানমন্ডি ৩২’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ গ্রুপেও কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে খোলামেলা অসন্তোষ দেখা যাচ্ছিল। আমরা তা খেয়াল করেছি। কিন্তু যখন আলোচনা ও প্রতিরোধ গঠনের প্রসঙ্গ ওঠার পরপরই নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হতে শুরু করল, তখন বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেল।”

হাসিনার বার্তা: ‘রাস্তা নামুন, না হয় সরে দাঁড়ান’

নিউজ১৮-এর দাবি, শেখ হাসিনা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—দলকে রাস্তায় নামতে হবে, না হয় নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। শুধু কীবোর্ড যোদ্ধা হলে চলবে না, এখন দরকার মাঠের লড়াই। দলের সকল টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীকে ভিপিএন ব্যবহারের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, কারণ ডার্ক ওয়েবে তথ্য পাচারের শঙ্কা রয়েছে।

এক দলীয় নেতার ভাষায়, “এক বছর হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এখন জনগণের জন্য লড়তে চায়। প্রতিটি জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় ‘প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা হবে, যেখানে বিভাগীয় সংগঠক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নেতারা একসঙ্গে নেতৃত্ব দেবেন।”

২০২৬ সালে বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা। নিষিদ্ধ দল হিসেবে থেকেও আওয়ামী লীগ ‘ইউনূস সরকার’-এর বিরুদ্ধে রাজপথের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও