লন্ডনের চালকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে কনজেশন চার্জে। আগামী ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে এই চার্জ £১৫ থেকে বাড়িয়ে £১৮ করার প্রস্তাব দিয়েছে ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন (TfL)। রাজধানীর ট্রাফিক জ্যাম ও বায়ু দূষণ কমানোর উদ্দেশ্যে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার ফলে শহরে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ভ্রমণকে আরও উৎসাহিত করা যাবে।
এই পরিবর্তনের বিষয়ে জনমত নেওয়ার প্রক্রিয়া আজ শেষ হচ্ছে। মে মাসের শেষদিকে শুরু হওয়া এই পরামর্শ কার্যক্রমে TfL জানিয়েছে, প্রস্তাবিত পরিবর্তন ছাড়া প্রতিদিন গড়ে ২,২০০ অতিরিক্ত গাড়ি লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ করবে। তারা আরও বলছে, যানজটের কারণে লন্ডনের অর্থনীতিতে প্রতিবছর বিলিয়ন পাউন্ডের ক্ষতি হয় এবং গড় চালক বছরে প্রায় £৯৪২ ক্ষতির সম্মুখীন হন।
বর্তমানে শূন্য নির্গমন (zero-emission) গাড়ির মালিকদের কনজেশন চার্জ মওকুফ করা হলেও, এই সুবিধা ২০২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বরের পর বাতিল হয়ে যাবে। এরপর ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারি থেকে একটি নতুন ‘ক্লিনার ভেহিকেল ডিসকাউন্ট’ (Cleaner Vehicle Discount বা CVD) চালু করা হবে। এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী, Auto Pay-এ রেজিস্ট্রেশন করা বৈদ্যুতিক ভ্যান, HGV এবং কোয়াড্রিসাইকেলগুলিকে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। অন্যদিকে, বৈদ্যুতিক কার চালকরা পাবেন ২৫ শতাংশ ছাড়।
এই ছাড়ের দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর হবে ২০৩০ সালের ৪ মার্চ থেকে, যেখানে ছাড়ের হার আরও কমে আসবে। তখন বৈদ্যুতিক ভ্যান, HGV ও কোয়াড্রিসাইকেলগুলির জন্য ছাড় হবে ২৫ শতাংশ এবং বৈদ্যুতিক কারের জন্য ছাড় কমে দাঁড়াবে ১২.৫ শতাংশে। TfL জানিয়েছে, এই ছাড়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিভিএলএ (DVLA)-র তথ্য ব্যবহার করে প্রযোজ্য হবে, চালকদের আলাদাভাবে আবেদন করার প্রয়োজন পড়বে না।
রেসিডেন্টদের জন্য বর্তমানে যে ৯০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়, তাতেও পরিবর্তন আসছে। ২০২৭ সালের ১ মার্চ থেকে নতুনভাবে ছাড় পেতে হলে আবেদনের সময় চালকের কাছে বৈদ্যুতিক গাড়ি থাকা বাধ্যতামূলক করা হবে। TfL মনে করছে, এতে লোকজন পেট্রল ও ডিজেল চালিত গাড়ি বাদ দিয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনায় উৎসাহ পাবে।
এছাড়া, মেয়রের রোড ইউজার চার্জিং গাইডলাইন অনুযায়ী ভবিষ্যতে কনজেশন চার্জ প্রতি বছর টিউব ভাড়ার হারের সঙ্গে (মুদ্রাস্ফীতি প্লাস এক শতাংশ) বাড়তে পারে। তবে এই নিয়ম শুধুমাত্র কনজেশন চার্জের ওপর প্রযোজ্য হবে, ULEZ চার্জে নয়।
২০০৩ সালে কনজেশন চার্জ চালুর পর থেকে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে ট্রাফিকের পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে এবং হাঁটা, সাইকেল চালানো এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মতো বিকল্প ভ্রমণ মাধ্যমের ব্যবহার বেড়েছে।
লন্ডনের উপ-মেয়র (পরিবহন) সেব ডান্স বলেন, “কনজেশন চার্জ চালুর পর তা অত্যন্ত সফল হয়েছে, তবে এটি যেন সময়োপযোগী থাকে তা নিশ্চিত করাই এখন আমাদের দায়িত্ব।” গ্রিন অ্যালায়েন্সের জ্যেষ্ঠ নীতিবিশেষজ্ঞ সোফি ও’কনেল বলেন, “এই নতুন পরিকল্পনা পরিষ্কারভাবে দেখায় যে শহরের কেন্দ্র দিয়ে দূষণকারী গাড়ি চালানো যেন কখনোই গণপরিবহনের চেয়ে সস্তা না হয়।”
পরামর্শ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে মতামত দিতে আগ্রহীদের আজই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। TfL-এর এই উদ্যোগ শহরের পরিবেশ রক্ষা ও ভবিষ্যতের টেকসই ভ্রমণব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।