রাজনীতি

হাসিনা ছাড়াও যেসব রাষ্ট্রপ্রধানরা দেশ ছাড়েন

11673_IMG_9774.jpeg

ক্ষমতা কখনোই চিরস্থায়ী নয়, বিশেষত রাজনীতি ও জনরোষের জটিল জগতে। ইতিহাসের পাতায় এমন অনেক নাম রয়েছে যারা একদিন দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু একদিন তাদের পালাতে হয়েছিল জীবন বাঁচাতে। কখনো গণআন্দোলন, কখনো অভ্যুত্থান কিংবা কখনো আন্তর্জাতিক চাপের কারণে রাষ্ট্রপ্রধানরা একসময় দেশ ছেড়ে নির্বাসনে চলে গেছেন। কেউ আর ফিরে আসেননি, আবার কেউ ফিরে এসেছেন অনেক বছর পর।

ক্ষমতার মূলে সাধারণত জনরোষের প্রভাব থাকে, আর সেই রোষের কাছে বড় ক্ষমতা এক মুহূর্তেই অস্থায়ী হয়ে পড়ে। যখন এককালের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রপ্রধান দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, তা ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে যায়। কিছু রাষ্ট্রপ্রধানের পালিয়ে বেঁচে যাওয়া বা বিদেশে মৃত্যু কেবল রাজনৈতিক অধ্যায় নয়, বরং ইতিহাসের নির্মম শিক্ষাও বটে। চলুন, এমন কিছু রাষ্ট্রপ্রধানের কথা জানি যাদের ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে হয়েছিল:

ইদি আমিন (উগান্ডা)
উগান্ডার স্বৈরশাসক ইদি আমিন ১৯৭০-এর দশকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কুখ্যাত ছিলেন। ১৯৭৯ সালে জনরোষে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তিনি সৌদি আরবে পালিয়ে যান এবং সেখানেই বিলাসবহুল জীবন কাটান। ২০০৩ সালে রিয়াদের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

বেন আলী (তিউনিসিয়া)
আরব বসন্তের উত্তাপে ২০১১ সালে বেন আলীকে ২৩ বছর পর তিউনিসিয়া ছাড়তে হয়। তিনি সৌদি আরবে চলে যান এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয় ২০১৯ সালে।

ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ (ইউক্রেন)
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেও ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ছিলেন রাশিয়া-পন্থী। ২০১৪ সালে তার নীতির বিরোধিতায় ইউক্রেনে বড় ধরনের আন্দোলন শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা কিয়েভ দখল করার পর পার্লামেন্ট তাকে বরখাস্ত করে এবং তিনি রাশিয়ায় পালিয়ে যান, যেখানে এখনো অবস্থান করছেন।

আশরাফ ঘানি (আফগানিস্তান)
২০২১ সালে তালেবানরা কাবুলের দিকে এগিয়ে আসলে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে চলে যান। পরে জানা যায় তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন, দাবি করেন দেশ ছেড়েছেন রক্তপাত এড়াতে।

ফার্দিনান্ড মার্কোস (ফিলিপিন্স)
১৯৮৬ সালে জনবিক্ষোভ ও বিরোধী চাপে মার্কোস ক্ষমতা ছাড়েন এবং গুয়াম ও পরে হাওয়াইতে আশ্রয় নেন। ১৯৮৯ সালে সেখানেই মারা যান।

মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি (ইরান)
ইসলামী বিপ্লবের মুখে ১৯৭৯ সালে শাহ পাহলভি দেশ ছাড়েন এবং বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৯৮০ সালে মিশরে মারা যান।

নওয়াজ শরীফ (পাকিস্তান)
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ১৯৯৯ সালে সেনা প্রধান মুশাররফের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং সৌদি আরবে নির্বাসনে যান। পরে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৯ সালে লন্ডনে যান, এবং ২০২৩ সালে দেশে ফিরে আসেন।

পারভেজ মুশাররফ (পাকিস্তান)
নওয়াজ শরীফকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলকারী মুশাররফ ২০০৮ সালে নির্বাচন হারিয়ে দেশ ছাড়েন। ২০১৩ সালে ফিরে গ্রেফতার হন, পরে চিকিৎসার অজুহাতে দুবাই চলে যান এবং ২০২৩ সালে সেখানে মারা যান।

থাকসিন শিনাওয়াত (থাইল্যান্ড)
২০০৬ সালে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া থাকসিন বিদেশে থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগের শিকার হন। পরে লন্ডনে নির্বাসিত হয়ে ১৫ বছর সেখানে কাটান। ২০২৩ সালে দেশে ফেরেন।

চার্লস টেলর (লাইবেরিয়া)
২০০৩ সালে গৃহযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে চার্লস টেলর দেশ ছাড়েন এবং পরে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হন। তার বিচার দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে হয়।

গোটাবায়া রাজাপাকশা (শ্রীলঙ্কা)
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গোটাবায়া রাজাপাকশা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। প্রথমে সিঙ্গাপুর, পরে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেন। দুই মাস পর তিনি দেশে ফিরে আসেন।

শেখ হাসিনা (বাংলাদেশ)
২০২৪ সালে কোটা আন্দোলনের কারণে সারাদেশে ব্যাপক গণবিক্ষোভ শুরু হয়। ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণহত্যা’র রেশ কাটতে না কাটতেই শেখ হাসিনা গোপনে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘদিনের শাসনের অবসান ঘটে।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও