জুলাই ঘোষনা সংশোধন করে প্রবাসী, নারী ও আলেম সমাজের অবদান অন্তর্ভুক্ত করে এটিকে ভবিষ্যৎ সরকারের উপর না রেখে বরং রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এখনই আইনি ভিত্তি দেয়ার দাবি
বার্মিংহাম, বুধবার, ৬ আগস্ট: গণঅভ্যুত্থানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন দেশে তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দূতাবাস ও হাইকমিশন ঘেরাও করেছেন, সভা-সমাবেশ করেছেন ঐতিহাসিক পার্ক ও ভেন্যুতে দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ। মধ্যপ্রাচ্যে বিক্ষোভ করতে গিয়ে অর্ধশত প্রবাসী জেল খেটেছেন। দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশের নাগরিক। তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। পৃথিবীর প্রায় ১২০টি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ আছে যাদের একেকটি দেশের মোট জনসংখ্যা দেড় কোটি নয়। দেশের প্রায় এক-দশমাংশ তথা দেড় কোটি প্রবাসীদের অবদান জুলাই ঘোষনায় অনুপস্থিতি প্রবাসীদের হতাশ করেছে। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে জুলাই বিপ্লব ফাউন্ডেশন ওয়েস্ট মিডল্যান্ড কর্তৃক আয়োজিত “রক্তের সিঁড়ি বেয়ে নতুন বাংলাদেশ” শীর্ষক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে কীনোট স্পিকার হিসেবে মূল বক্তব্য প্রদানকালে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক, বৃটিশ সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও লন্ডনের নিউহ্যাম বারার টানা তিন বারের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার নাজির আহমদ।
বার্মিংহামে জুলাই বিপ্লব ফাউন্ডেশন ওয়েস্ট মিডল্যান্ড এর আহবায়ক শাইখ এটিএম মোকাররম হাসান এর সভাপতিত্বে এবং ওমর ফারুক টিপু ও সলিসিটর মাসুম আহমদের যৌথ সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান, বিশিষ্ট সংগঠক ও সমাজসেবী সৈয়দ জামিরুল ইসলাম বাবু, আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ মো: আমিনুল হক চৌধুরী, মানবাধিকার সংগঠক আমিনুল ইসলাম মাহমুদ। এ ছাড়া মিডল্যান্ডের কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ ও ওলামায়ে কেরামরা বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ হাই কমিশন বার্মিংহামের সহকারী হাইকমিশনার মোঃ আলিমুজ্জামান রেকর্ডেড ম্যাসেজ পাঠান। লাইভে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন ফ্রান্স থেকে বিশিষ্ট অনলাইন এক্টিভিষ্ট ও ইনফ্লোয়েন্সার ডা: পিনাকী ভট্টাচার্য ও ঢাকা থেকে গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক সাদেক কাইয়িম। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্টী চমৎকার গান, সঙ্গীত ও পরিবেশনা উপস্থাপন করেন।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, জুলাই ঘোষনায় ১৫ই আগস্ট, ৩’রা নভেম্বর, শাপলা চত্বরের গণহত্যা ও পিলখানার গণহত্যা অনুপস্থিত। এটা অনেকটা ইতিহাস বিকৃতি বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার নামান্তর। জুলাই ঘোষনা কখন থেকে শুরু এ বছর না গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে তারও উল্লেখ নাই। ঘোষনার শহীদদের সংখ্যা নিয়েও ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। জুলাই ঘোষনা সংবিধানের প্রস্তাবনায় না রেখে তফসিলে রাখাও যুক্তিযুক্ত নয়, কেননা ৭ মার্চের ভাষন ও বিতর্কিত স্বাধীনতার ঘোষণাও তো সংবিধানের তফসিলে রাখা। স্বত:স্পূর্ত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত ক্ষমতা হচ্ছে বড় ম্যান্ডেট, আলাদা অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এখনই বলবৎ করার পরিবর্তে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপর রেখে দেয়ার মাধ্যমে জুলাই ঘোষনা নব্বই দশকের তিন জোটের রূপরেখার ভাগ্য বরন করতে পারে এমন আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
ব্যারিস্টার নাজির আহমদ আরো বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর গণঅভ্যুত্থানের সুফল ভোগ করার জন্য ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর ইস্পাত কঠিন ঐক্য দরকার। তাদের মধ্যে বিদ্যমান অনৈক্য ও একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার এবং পারস্পরিক কাঁদা ছুড়াছুড়িতে গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটই শুধু ব্যহত হবে না বরং ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে আসার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। তাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে চব্বিশের জুলাই’তে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্যকে যে কোন মূল্যে ধরে রাখতে হবে।
লাইভে দেয়া বিশেষ অতিথি বক্তব্যে ডা: পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, ভারতের আধিপত্যবাদ রুখতে হলে এখন আমাদের সাংস্কৃতিক বিপ্লব করতে হবে। বিপ্লব উত্তর বাংলাদেশে যদি আমরা ন্যায় ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারি তাহলে মোটামুটি আর সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ঢাকা থেকে গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক সাদেক কাইয়িম অনলাইনে যোগ দিয়ে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তিনি এজন্য প্রবাসীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান বলেন, কাঁটা ছেঁড়া করে পতিত সরকারের রেখে যাওয়া সংবিধান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের করুন পরিনতি নিয়ে আসতে পারে। তিনি বর্তমান সংবিধান বাতিল করে যোগপোযোগী সংবিধান প্রণয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ আমিনুল হক চৌধুরী বলেন, গনহত্যার সাথে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার যাতে ফ্যাসিবাদ আর বাংলাদেশে কখনও মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে এবং কেউ যেন গণহত্যাকারী হয়ে উঠতে না পারে।