বৃহৎ সাবস্ক্রিপশন খরচের চাপ থেকে বাঁচতে অনেক ব্রিটিশ ভোক্তা সস্তা বিকল্পে ঝুঁকছেন; তাদের মধ্যে অন্যতম হলো তথাকথিত ‘ডজি টিভি বক্স’, যেগুলোতে একসাথে অনেক চ্যানেল ও কনটেন্ট দেখতে পাওয়া যায় কম খরচে। কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ ও এথিকাল হ্যাকার ক্রিশ্চিয়ান এসপিনোসা সতর্ক করেছেন যে এই বক্সগুলো শুধুমাত্র আইনভঙ্গ নয়, বরং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি জানান, অ্যান্ড্রয়েড-চালিত এসব সেট-টপ বক্স জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সাশ্রয়ী ও কাস্টমাইজযোগ্য হওয়ায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এগুলো পরিবর্তিত বা মডিফাই করা হয়ে ‘ডজি বক্স’ হিসেবে বিক্রি হয়, যেখানে আগেই ম্যালওয়্যারযুক্ত অ্যাপ ইন্সটল থাকতে পারে; মানুষ এগুলোকে সাধারণ, নিরীহ অ্যাপ মনে করে ব্যবহার শুরু করলে সেগুলি পেছনে থেকে ডেটা চুরি বা রিমোট অ্যাক্সেস খুলে দিতে পারে।
এসপিনোসা বলেন, একটি সংক্রামিত আইপিটিভি ডিভাইস একবার আপনার রাউটারের সঙ্গে যুক্ত হলে সেটি নেটওয়ার্কে প্রবেশের সেতু হিসেবে কাজ করে; টিভি নিজের মধ্যে হয়ত সংবেদনশীল তথ্য বহন করে না, কিন্তু একই ওয়াই-ফাই-তে থাকা অনলাইন ব্যাংকিং, পাসওয়ার্ড, ইমেইল বা স্মার্ট হোম যন্ত্রপাতির নিয়ন্ত্রণ; সবকিছুই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। অপরাধীরা সেই সেতু ব্যবহার করে ব্যাংক তথ্য চুরি, পরিচয় জালিয়াতি ও অন্যান্য প্রতারণামূলক কার্যক্রম চালাতে পারে।
অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও উদ্বেগজনক; ২০২৫ সালের একটি গবেষণা (BeStreamWise) অনুযায়ী অবৈধ স্ট্রিমিং সেবা ব্যবহারকারীরা প্রতারণায় গড়ে £5,486 পর্যন্ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, যা বৈধ ব্যবহারকারীদের ক্ষতির তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। ক্রিশ্চিয়ান এসপিনোসা ও অন্যান্য সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে জানা গেছে যে বহু বক্সেই আগেই ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার লুকানো থাকে, যা ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করে ব্যবহারকারীর তথ্য সরিয়ে নেয় বা অপরাধীদের দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়। তিনি বলেন, মানুষ ল্যাপটপ বা মোবাইলে অ্যান্টিভাইরাস ও টু-ফ্যাক্টর অ্যাথেন্টিকেশন নিয়ে সচেতন থাকলেও টিভির নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনা প্রায় নেই; আর এ কারণেই টিভি বা স্ট্রিমিং ডিভাইসকে হ্যাকাররা সহজ টার্গেটে পরিণত করে।
এসব অবৈধ আইপিটিভি সার্ভিস শুধু ব্যক্তির অর্থ চুরিই করে না, বরং অনেকক্ষেত্রেই সংগঠিত অপরাধের তহবিল জোগায়; পাঠকরা যে টাকা মনে করেন মুখ্য সাবস্ক্রিপশন খরচ বাঁচাচ্ছেন, অনেক সময় সেটাই চলে যায় জালিয়াতি, মানব পাচার ও অন্যান্য গুরুতর অপরাধে জড়িত চক্রের হাতে। ব্রিটিশ অ্যান্টি-পাইরেসি সংস্থা FACT বারবার সতর্ক করেছে যে প্রতি বছর লক্ষাধিক পরিবারের কাছেই এসব অবৈধ সেবার ব্যবহার দেখা যায় এবং বলিষ্ঠভাবে কার্যকর করা হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে; ২০২৩ সালে এমন একটি বড় আইপিটিভি নেটওয়ার্ককে অভিযুক্ত করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এসপিনোসা উল্লেখ করেন যে জীবনের ব্যয়বৃদ্ধি ও সাবস্ক্রিপশনের বহর বৃদ্ধির ফলে মানুষ প্রলোভনে পড়ে, কিন্তু মাসে কিছু পাউন্ড বাঁচানোর লোভে পুরো বাড়ির নেটওয়ার্ক ও ব্যক্তিগত তথ্য ঝুঁকির মুখে ফেলা উচিত নয়। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আপনি হয়তো মাসে কয়েক ডজন পাউন্ড বাঁচাচ্ছেন, কিন্তু ব্যাংক তথ্য হারালে বা পরিচয় বিক্রি হলে ক্ষতি হাজার পাউন্ডের বেশি হতে পারে; এই মূল্য শোধ করা সম্ভব নয়।” সমাধান হিসেবে তিনি বৈধ সেবা ব্যবহার, অচেনা ডিভাইস বা অ্যাপ এড়ানো, এবং বাড়ির নেটওয়ার্ক সুরক্ষায় প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।