যুক্তরাজ্যের এসেক্স কাউন্টির সাউথ অকেনডনে নিজের পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকে হত্যার দায়ে ক্লেয়ার বাটন (৩৫) নামের এক নারীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। নিহত শিশুটির নাম লিংকন বাটন, যিনি অটিজম, বিকাশজনিত বিলম্ব ও এডিএইচডি (ADHD)–তে ভুগছিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে, বাটন পরিবারের উইন্ডস্টার ড্রাইভের বাসায়। তদন্তে জানা যায়, ক্লেয়ার বাটন প্রথমে ছেলেকে হত্যা করেন, এরপর আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তবে তিনি বেঁচে যান।
বাসিলডন ক্রাউন কোর্টে বিচার চলাকালে ক্লেয়ার জানান, তিনি ছেলের আচরণ সামলাতে পারছিলেন না এবং তার মাথার ভেতর থেকে কণ্ঠস্বর আসত; যা তাকে বলত “আমরা এই পৃথিবীতে থাকার যোগ্য নই।”
আদালতের বিচারক স্যামান্থা লি বলেন, এটি তাঁর বিচারক জীবনের “সবচেয়ে কঠিন” মামলাগুলির একটি। আদালত আগামী শুক্রবার সাজা ঘোষণা করবে।
রায় ঘোষণার সময় ক্লেয়ার কান্নায় ভেঙে পড়েন। জুরি সদস্যরা ৮ ঘণ্টা ৪ মিনিটের পর সর্বসম্মতভাবে তাকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন।
লিংকনের মরদেহ তার বাবা নিকি বাটন কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর খুঁজে পান। আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে নিকি বলেন, তাঁর স্ত্রী মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত ছিলেন। “সে ভেতরে ভেতরে এক ভয়ংকর লড়াই করছিল,” বলেন নিকি, “তবুও সে পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি মানুষ ছিল।”
নিকি আরও জানান, গত আগস্ট ২০২৪-এ ক্লেয়ারকে ডিপ্রেশনের রোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। লিংকনের অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজনীয়তা ও তার ‘উচ্চমাত্রার চাহিদা’ ক্লেয়ারকে আরও মানসিকভাবে চাপে ফেলে দেয়। তিনি বলেন, “তবুও ক্লেয়ার ছিলেন একনিষ্ঠ ও অসাধারণ মা।”
লিংকন স্থানীয় বনিগেট প্রাইমারি স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে কথাবার্তায় অক্ষম ছিল, কিন্তু তার খেলনা, বিশেষ করে ট্রেনের প্রতি ছিল গভীর অনুরাগ।
বিচার চলাকালে ক্লেয়ার জানান, ঘটনার দিন সকালে তিনি লিংকনকে নিয়ে লিডল সুপারমার্কেটে যান। সেখানে শিশুটি আচরণগতভাবে চরম অস্থির হয়ে পড়ে। বাড়ি ফেরার পর তিনি মাথার ভেতর “একটি অন্ধকার, গভীর, ভয়ংকর ও দাবিদার কণ্ঠস্বর” শুনতে পান। এরপর তিনি জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করেন, কিন্তু জানানো হয় যে সাহায্য পৌঁছাতে ১০ ঘণ্টা সময় লাগবে।
নিজের সাক্ষ্যে ক্লেয়ার বলেন, “আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে সাহায্য করতে চায় না। আর ওই কণ্ঠস্বর আমাকে বলেছিল; আমাকে এটা করতেই হবে।” এরপর তিনি লিংকনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং একটি নোট রেখে যান, যেখানে লেখা ছিল: “সে এই পৃথিবীর জন্য উপযুক্ত নয়, আর যেখানে সে মানায় না, আমি-ও না।”
ক্লেয়ার বাটন আদালতে ম্যানস্লটার (অবৈধ হত্যাকাণ্ড) অপরাধে দোষ স্বীকার করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু জুরি সেটি প্রত্যাখ্যান করে তাকে হত্যার পূর্ণ দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে। প্রসিকিউশন পক্ষের যুক্তি ছিল, ক্লেয়ারের মানসিক অসুস্থতা এত গভীর ছিল না যে তা তাঁর বিচারবোধ ও বাস্তবতা-বোধ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দিয়েছে।
বিচারের সময় লিংকনের দাদী জানান, তাঁর মেয়ে ক্লেয়ার “নরকযন্ত্রণা”র মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। পরিবারের এক সদস্য জেমি ওয়ারেন বলেন, “লিংকন ছিল এক প্রাণবন্ত, হাসিখুশি বাচ্চা, যে তার খেলনা নিয়ে খেলতেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসত।”
রায় ঘোষণার সময় বিচারক স্যামান্থা লি বলেন, “আমার ৩০ বছরের বিচারজীবনে এটি ছিল সবচেয়ে বেদনাদায়ক মামলাগুলির একটি।”