গত ৫ দিনে রাজধানী ঢাকার মিরপুর, চট্টগ্রামের ইপিজেড এবং সিলেটের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় হতাহতের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একের পর এক আগুনের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন এসব কী পরিকল্পিত ঘটনা নাকি নাশকতার অংশ? তবে বিশেষজ্ঞরা এসব ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং দায়সারা তদন্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গত ১৪ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় একটি পোশাক কারখানা ও কসমিক ফার্মা নামের রাসায়নিক গোডাউনে ভয়াবহ আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট ২৮ ঘণ্টা চেষ্টা চালায়। এতে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। রাসায়নিক গুদামে ব্লিচিং পাউডার, পটাশ ও হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল ছিল, যা আগুন নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, সরাসরি প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি, তাই প্রযুক্তির মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে।
এরপর ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় একটি কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর ২৩টি ইউনিট ১৭ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
এদিকে আজ শনিবার (১৮ অক্টোবর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৬টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।
বিশেষজ্ঞরা এসব ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি ও দায়সারা তদন্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, এসব ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের শনাক্ত ও শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সামাজিক মাধ্যমে এসব ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। অনেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
জহিরুল ইসলাম নামে একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, এক সপ্তাহে ঢাকার মিরপুর, চট্টগ্রামের ইপিজেড এবং শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘটে যাওয়া তিনটি বড় অগ্নিকাণ্ড জনমনে নিরাপত্তা প্রশ্ন তৈরি করেছে। তিনি এসব ঘটনার আন্তর্জাতিক গুরুত্বও তুলে ধরেছেন এবং সম্ভাব্য নাশকতার অংশ হিসেবে এগুলোকে দেখছেন।
সেই পোস্টের নিচে সামালজল ইসলাম নামে একজন লিখেন, ‘জহিরুল ইসলাম ঠিকই বলেছেন, এমন ঘটনা মাত্র এক দুর্ঘটনা নয়, সম্ভাব্য নাশকতার ইঙ্গিতও রয়েছে। দ্রুত তদন্ত প্রয়োজন।’
শহিদুল ইসলাম নামে আরেক দাবি করেন, “মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং শাহজালাল বিমানবন্দর-প্রতিটি ঘটনা আন্তর্জাতিক নজর কাড়ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায় কাদের?”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিমানবন্দরে যেভাবে আগুন লেগেছে, তা আগে কখনো দেখা যায়নি। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, আগুন এক জায়গায় নয়, একাধিক স্থানে এক সঙ্গে লেগেছে। যা সন্দেহজনক।