
চীনের চাপে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর গবেষণা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড হ্যালাম বিশ্ববিদ্যালয়, এমন তথ্য প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গবেষণার শীর্ষ কেন্দ্র হেলেনা কেনেডি সেন্টারের (এইচকেসি) খ্যাতনামা অধ্যাপক লরা মারফিকে চীনে জোরপূর্বক শ্রম ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা বন্ধের নির্দেশ দেয়।
মারফির গবেষণা দীর্ঘদিন ধরেই উয়ঘুর মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর আরোপিত বাধ্যতামূলক শ্রম কর্মসূচি নিয়ে। পশ্চিমা সরকার ও জাতিসংঘ তার গবেষণা ব্যবহার করে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যাতে জোরপূর্বক শ্রমে তৈরি পণ্যের রফতানি ঠেকানো যায়। তবে চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করে যে এসব কর্মসূচি দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে পরিচালিত।
গবেষণা বন্ধের পর বিশ্ববিদ্যালয় ‘ফোর্সড লেবার ল্যাব’-এর ওয়েবসাইটও অদৃশ্য করে। তবে আট মাস পর, আইনি পদক্ষেপের হুমকি পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ক্ষমা চায়।
মারফি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় তার একাডেমিক স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে চীনা শিক্ষার্থী বাজার ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি—বাণিজ্যিক স্বার্থের সঙ্গে এ সিদ্ধান্তের সম্পর্ক নেই। একই সঙ্গে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত একটি চীনা কোম্পানির মানহানির মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীমা সংস্থা কভারেজ প্রত্যাহার করায় ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পায়।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেইজিং অফিসে চীনা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সফর ও জিজ্ঞাসাবাদ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। অভ্যন্তরীণ নথি অনুযায়ী, সেসময় চীন পক্ষ স্পষ্ট সংকেত দেয় গবেষণা বন্ধের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্টাফদের নিরাপত্তা ও পেশাগত বীমা নিশ্চিত করা সম্ভব না হওয়ায় গবেষণা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে শিক্ষা খাতে অভিজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—এ ধরনের সিদ্ধান্ত একাডেমিক স্বাধীনতার জন্য গুরুতর হুমকি।
যদিও চীনের চাপের কারণে গবেষণা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়নি, উল্লেখযোগ্য প্রকল্প বাতিল এবং দীর্ঘ বিরতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি প্রভাবের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের শিক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, বিদেশি সরকারের আপত্তির কারণে গবেষণা দমন করা অগ্রহণযোগ্য।
সরকারি এক মুখপাত্র জানান, চীনের এই ধরনের হুমকি সহ্য করা হবে না এবং বিষয়টি ইতোমধ্যে বেইজিংকে জানানো হয়েছে। তবে মারফি এখনো সন্দিহান ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় তার কাজকে আগের মতো সমর্থন দেবে কি না।
ঘটনাটি স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে একাডেমিক পরিসরে চীনা চাপ ক্রমেই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এবং গবেষণার স্বাধীনতা আজ বাস্তব ঝুঁকির মুখে।