
ইংল্যান্ডে বয়স্ক চালকদের সতর্ক করে জানিয়েছে পুলিশ—চোখের দৃষ্টি আইনি মানের নিচে থাকলে রাস্তার ধারেই বাতিল করা হতে পারে ড্রাইভিং লাইসেন্স। লিংকনশায়ার পুলিশ সম্প্রতি ‘অপারেশন ডার্ক নাইট’ নামে নতুন অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে, যার উদ্দেশ্য দৃষ্টি-সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি কমানো এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
আইন অনুযায়ী, গাড়ি চালানোর জন্য কমপক্ষে ২০ মিটার দূর থেকে গাড়ির নম্বরপ্লেট পড়তে পারা বাধ্যতামূলক, যা পাঁচটি পার্ক করা গাড়ির দৈর্ঘ্যের সমান। স্নেলেন স্কেলে চালকের দৃষ্টি কমপক্ষে ০.৫ (৬/১২) হতে হবে—প্রয়োজনে চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে তা নিশ্চিত করা যায়। তবে অভিযানে থামানো এক চালক মাত্র ৬ মিটার দূর থেকে নম্বরপ্লেট পড়তে সক্ষম হয়েছেন, যা আইনগত সীমার অনেক নিচে।
ইন্সপেক্টর জেসন ব্যাক্সটার জানান, নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে চালকের লাইসেন্স বাতিল করতে পারে। তার ধারণা, যুক্তরাজ্যজুড়ে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ চালক এই মানদণ্ড পূরণ করেন না। তিনি আরও জানান, একজন চালকের লাইসেন্স রাস্তার ধারে বাতিল করা হয়েছে কারণ তিনি ২০ ফুট দূর থেকেও নম্বরপ্লেট দেখতে পারেননি, যেখানে ন্যূনতম সীমা ৬৫ ফুট।
যদিও এই পরীক্ষা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করা হয়, কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ তা বাধ্যতামূলকভাবে পরিচালনা করতে পারে। ‘ক্যাসির আইন’ অনুযায়ী—রাস্তার পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে পুলিশ সরাসরি ডিভিএলএ-কে জানিয়ে লাইসেন্স তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করতে পারে। এই আইন চালু হয় ১৬ বছর বয়সী ক্যাসি ম্যাককর্ডের মৃত্যুর পর; তাকে ধাক্কা দিয়েছিলেন ৮৭ বছর বয়সী এক চালক, যিনি পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
সরকার শিগগিরই নতুন ‘রোড সেফটি স্ট্র্যাটেজি’ ঘোষণা করতে চলেছে, যেখানে ৭০ বছরের বেশি বয়সী চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক চক্ষু পরীক্ষা ও কঠোর মদ্যপানবিরোধী নীতি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। বর্তমানে ওই বয়সের চালকদের প্রতি তিন বছর অন্তর লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়; তুলনায় কম বয়সীদের জন্য এটি ১০ বছর।
লিংকনশায়ার রোড সেফটি পার্টনারশিপের কর্মকর্তা সাইমন আউটেন-কোয়ে বলেন, অভিযানটি কেবল বয়স্কদের লক্ষ্য করে নয়; সকল চালকেরই নিয়মিত দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করা উচিত। তিনি বলেন, “চশমা পরার পরামর্শ দেওয়া হলে তা মানা বাধ্যতামূলক। দুর্ঘটনায় জড়ালে ও চশমা না পরা প্রমাণিত হলে শাস্তি হতে পারে।”
ল্যাঙ্কাশায়ারের সিনিয়র করোনার ড. জেমস অ্যাডেলি সরকারকে দেওয়া প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, স্ব-ঘোষণানির্ভর ব্যবস্থার কারণে দুর্বল দৃষ্টিসম্পন্ন চালকেরা সহজেই সড়কে নামতে পারছেন। তার মতে, যুক্তরাজ্যের ব্যবস্থা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে শিথিল।
পরিবহন দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, “সড়কে প্রতিটি মৃত্যুই মর্মান্তিক। এনএইচএস প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি দুই বছর পর চোখ পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে, এবং দৃষ্টিসংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকলে ডিভিএলএ-কে তা জানানো আইনগত বাধ্যবাধকতা। সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে সরকার নতুন পদক্ষেপ বিবেচনা করছে।”