
যুক্তরাজ্যে ড্রাইভিং টেস্ট বুকিংয়ে চলমান বিশৃঙ্খলা ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। পরিবহন দফতর (Department for Transport - DfT) ঘোষণা দিয়েছে, এখন থেকে শুধুমাত্র শিক্ষানবিস চালকরাই নিজের ড্রাইভিং টেস্ট বুক করতে পারবেন। কোনো বট, তৃতীয় পক্ষ বা এমনকি প্রশিক্ষকরাও (ইনস্ট্রাক্টর) শিক্ষার্থীর পক্ষে বুকিং করতে পারবেন না।
সম্প্রতি প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষানবিস ড্রাইভিং টেস্টের জন্য লাইনে থাকায় ভয়াবহ জট তৈরি হয়েছে। এই জট নিরসন ও পরীক্ষার সময়সূচি পুনর্বিক্রয় বন্ধে এই পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। অনেক দালাল ও অনলাইন বট আগে থেকেই পরীক্ষার তারিখ বুক করে তা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছিল, যা সাধারণ শিক্ষানবিসদের জন্য পরীক্ষা দেওয়া আরও কঠিন করে তুলেছিল।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, একজন শিক্ষানবিস সর্বোচ্চ দুইবার পর্যন্ত তার টেস্টের তারিখ, সময় বা স্থান পরিবর্তন করতে পারবেন। এর বেশি পরিবর্তন চাইলে বুকিং বাতিল করে নতুন করে আবেদন করতে হবে। পাশাপাশি, পরীক্ষার স্থানও মূল বুকিংয়ের নিকটবর্তী কেন্দ্রগুলোর মধ্যেই সীমিত থাকবে।
র্যাক ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্টিভ গুডিং বলেছেন, “এই উদ্যোগটি অত্যন্ত ইতিবাচক। যারা দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন, তারা অন্তত নিশ্চিত হতে পারবেন যে তাদের জায়গা কেউ টাকা দিয়ে কিনে নিচ্ছে না।”
গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে প্রায় ৬ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ ড্রাইভিং টেস্টের জন্য বুক করেছিলেন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৯০ হাজার বেশি। বর্তমানে ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত অগ্রিম টেস্ট বুক করা যায়, এবং নতুন সময়সূচি পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হয়।
পরিবহন সচিব হেইডি আলেকজান্ডার জানিয়েছেন, সরকার ২০২৬ সালের গ্রীষ্মের মধ্যে গড় অপেক্ষার সময় সাত সপ্তাহে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। বর্তমানে গড় অপেক্ষার সময় ২১.৮ সপ্তাহ।
এ সমস্যার সমাধানে ড্রাইভিং পরীক্ষক নিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি পরীক্ষকদের ধরে রাখতে আগামী বছর থেকে ৫,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত “রিটেনশন পেমেন্ট” দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের (MoD) ৩৬ জন সামরিক ড্রাইভিং পরীক্ষককে এক বছরের জন্য বেসামরিক পরীক্ষায় সহায়তায় নিয়োগ দেওয়া হবে, যা বছরে অতিরিক্ত ৬,৫০০টি টেস্ট নিতে সাহায্য করবে।
আলেকজান্ডার বলেন, “আমরা এমন এক বিশাল ব্যাকলগ পেয়েছি যেখানে হাজার হাজার শিক্ষানবিস ড্রাইভার রাস্তায় নামতে পারছেন না। প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন সমান সুযোগে পরীক্ষা দিতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”
গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে মোট ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৪৪টি ড্রাইভিং টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৪% বেশি। তবে সেই মাসে পাশের হার কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯.৯ শতাংশে, যা আগের মাসের তুলনায় সামান্য নিম্ন।
এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে সরকার আশা করছে, আগামী বছর নাগাদ ড্রাইভিং টেস্টের দীর্ঘ অপেক্ষা ও অব্যবস্থাপনা অনেকটাই কমে আসবে।