
ব্রিটেনের পাসপোর্টের নকশায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। আগামী মাস থেকেই হোম অফিস নতুন ডিজাইনের ব্রিটিশ পাসপোর্ট ইস্যু শুরু করবে। প্রথমবারের মতো পাসপোর্টের প্রচ্ছদে যুক্ত হচ্ছে রাজা চার্লস তৃতীয়ের আনুষ্ঠানিক রাজকীয় প্রতীক (কোট অব আর্মস)।
পাসপোর্টের এমন সংস্কার সাধারণত পাঁচ বছর পরপর হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে নকশায় কিছু নান্দনিক পরিবর্তন আনা হয়, পাশাপাশি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলোকে আরও উন্নত করা হয় যাতে জালিয়াতি প্রতিরোধ করা যায়। সর্বশেষ বড় পরিবর্তন আসে ২০২0 সালে, যখন দীর্ঘদিনের প্রচলিত গাঢ় নীল কভার আবার ফিরিয়ে আনা হয়—যা ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে আলোচনার জন্ম দেয়। সে সময় শেকসপিয়র ও এডা লাভলেসের চিত্র বাদ দিয়ে ভেতরের পাতায় রাখা হয় মিনিমালিস্ট জ্যামিতিক নকশা।
গত কয়েক বছরে কিছু ছোট পরিবর্তনও হয়েছে। ২০২৩ সালে রাজা চার্লসের অভিষেক উপলক্ষে পাসপোর্টের ভেতরের লেখা সংশোধন করে যোগ করা হয় “হিজ ব্রিটানিক ম্যাজেস্টি”—আর ২০১৯ সালে কভারের ওপর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় “ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন” শব্দটি।
নতুন পাসপোর্টে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন রাজকীয় প্রতীকে। আগের কুইন এলিজাবেথের সময়কার প্রতীকের বদলে এখন থাকবে রাজা চার্লসের কোট অব আর্মস। তবে সাধারণ চোখে পার্থক্য তেমন চোখে না পড়লেও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন—নতুন প্রতীকে সিংহ ও ইউনিকর্নের আকার কিছুটা ছোট, আর মুকুটের ওপরের অংশ আরও গোলাকার।
ভেতরের পাতাগুলোতেই পরিবর্তন বেশি দৃশ্যমান। নতুন পাসপোর্টে ওয়াটারমার্ক আকারে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত স্থাপনা ও প্রাকৃতিক স্থানের চিত্র—যেমন বেন নেভিস, লেক উইন্ডারমির এবং থ্রি ক্লিফস বে। পাশাপাশি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যেও এসেছে একাধিক নতুন প্রযুক্তি। ছবি-সংবলিত পাতায় যুক্ত করা হয়েছে আরও উন্নত হোলোগ্রাফিক ও স্বচ্ছ ইমেজ, যা সঠিক কোণে ধরলে বিশেষ নকশা দেখা যাবে—জাল পাসপোর্ট শনাক্তে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আগের মতো এবারও ফটো পেজ তৈরি করা হয়েছে অতিরিক্ত টেকসই পলিকার্বনেট উপাদানে।
হোম অফিস জানিয়েছে, ডিসেম্বর থেকে ইস্যু হওয়া সব নতুন পাসপোর্টই হবে এই নতুন নকশার। আগের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত তা বৈধ থাকবে; তাই পরিবর্তনটি পুরনো পাসপোর্টধারীদের জন্য কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করবে না।
বর্তমানে ব্রিটেনে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি সাধারণ পাসপোর্টের অনলাইন আবেদন ফি £৯৪.৫০ এবং শিশুদের জন্য £৬১.৫০। ডাকযোগে আবেদন বা প্রিমিয়াম সেবার ক্ষেত্রে ফি আরও বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বারবার ফি বাড়ায় ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।
নতুন পাসপোর্ট হাতে পেলে পুরোনোটির সঙ্গে যুক্ত ভিসা-ওয়েভার বা যুক্তরাষ্ট্রের ESTA আবেদন নতুন নথিতে পুনরায় করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বায়োমেট্রিক এন্ট্রি–এক্সিট সিস্টেম (EES)-এর জন্যও পুনরায় নিবন্ধন করতে হবে ব্যবহারকারীদের।
নতুন নকশা কার্যকর হলেও পুরোনো পাসপোর্টগুলো তাদের নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত আগের মতোই বৈধ থাকবে।