
২০২১ সাল থেকে ইংল্যান্ডের মোটরওয়ে ও প্রধান এ রোডে স্থাপিত কিছু স্পিড ক্যামেরার ত্রুটির কারণে হাজার হাজার চালক ভুলভাবে দ্রুতগতির অভিযোগে জরিমানা ও শাস্তির মুখে পড়েছেন। এই ত্রুটির ফলে অনেক চালকের স্পিডিং জরিমানা বাতিল হতে পারে এবং ইতোমধ্যে নেওয়া স্পিড অ্যাওয়ারনেস কোর্সও বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ন্যাশনাল হাইওয়েজ জানিয়েছে, ভেরিয়েবল স্পিড লিমিট সাইন ও স্পিড ক্যামেরার মধ্যে প্রায় ১০ সেকেন্ডের সমন্বয়হীনতার কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়। এর ফলে কোনো সড়কে গতি সীমা কমে বা বাড়ার পরও ক্যামেরা আগের গতিসীমার ভিত্তিতে কাজ করেছে। যেমন, কোনো চালক যখন ৬০ মাইল গতিসীমার সাইন দেখছেন, তখন ক্যামেরা এখনও ৪০ মাইল সীমা ধরে নিয়ে গাড়ির গতি রেকর্ড করেছে, যা ভুলভাবে স্পিডিং হিসেবে ধরা পড়েছে।
এই ত্রুটির কারণে ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২,৬৫০টি ভুল ক্যামেরা সক্রিয় হওয়ার ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। যদিও সব সক্রিয়তার ফলে জরিমানা হয়নি, তবুও সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ছয় বছরের ক্যামেরা তথ্য পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৩৬ হাজার চালককে জানানো হয়েছে যে তাদের স্পিড অ্যাওয়ারনেস কোর্স বাতিল করা হচ্ছে এবং বহু চলমান মামলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পরিবহনমন্ত্রী সাইমন লাইটউড পার্লামেন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, যেসব চালক ভুলভাবে দণ্ডিত হয়েছেন, তাদের জরিমানার টাকা ফেরত দেওয়া হবে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে পয়েন্ট বাতিল করা হবে। তিনি বলেন, ভুল মামলার সব ধরনের প্রতিকার নিশ্চিত করা হবে।
ন্যাশনাল হাইওয়েজের প্রধান নির্বাহী নিক হ্যারিস এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে বলেন, সড়ক নিরাপত্তাই তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তিনি জানান, যেসব চালক এই সমস্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। ইতোমধ্যে একটি অস্থায়ী প্রযুক্তিগত সমাধান চালু করা হয়েছে, যাতে পুলিশ সহজে ত্রুটিপূর্ণ ক্যামেরা রেকর্ড শনাক্ত করতে পারে। তবে স্থায়ী সমাধান কবে কার্যকর হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট সময়সূচি জানানো হয়নি।
এই ত্রুটির প্রভাব পড়েছে ইংল্যান্ডের মোটরওয়ে ও প্রধান এ রোডের প্রায় ১০ শতাংশ অংশে। মোট ৪০০টি স্পিড ক্যামেরার মধ্যে ১৫৪টি ক্যামেরা এতে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে স্মার্ট মোটরওয়ের সব ভেরিয়েবল স্পিড ক্যামেরা এবং এ১৪ ও এ১ সড়কের কিছু অংশ রয়েছে।
ভুক্তভোগী চালকদের একজন, সুইন্ডনের বাসিন্দা ৫৫ বছর বয়সী অ্যান্ডি ওয়ালপোল জানান, এম২৫ সড়কে তিনি ভুলভাবে জরিমানা পান। তিনি দাবি করেন, পেশাদার চালক হিসেবে তিনি সর্বদা গতিসীমা মেনে চলেন। আপিলের ঝামেলা এড়াতে তিনি স্পিড অ্যাওয়ারনেস কোর্সে অংশ নেন, যদিও পরে তার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। তবুও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এই ঘটনার পর মানুষ কীভাবে ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখবে এবং ভুল পয়েন্টের কারণে যাদের বীমা খরচ বেড়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ কীভাবে হবে।
বর্তমানে পুলিশ কর্তৃপক্ষ ভেরিয়েবল স্পিড ক্যামেরা থেকে জরিমানা প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে এবং ন্যাশনাল হাইওয়েজ অতিরিক্ত ট্রাফিক টহল জোরদার করার কথা জানিয়েছে। সরকার ও পরিবহন বিভাগ বলছে, ভবিষ্যতে যেন কোনো নিরপরাধ চালক ভুলভাবে শাস্তি না পান, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।