
ফ্লু সংক্রমণের তীব্র ঊর্ধ্বগতির কারণে যুক্তরাজ্যের এনএইচএস ইংল্যান্ড বর্তমানে ‘হাই অ্যালার্টে’ রয়েছে। চলমান চিকিৎসক ধর্মঘটের মধ্যেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। গত সপ্তাহের শেষ নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ১৪০ জন রোগী ফ্লু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, যা বছরের এই সময়ের জন্য সর্বকালের সর্বোচ্চ সংখ্যা। আগের সপ্তাহের তুলনায় এই সংখ্যা ১৮ শতাংশ বেশি। একই সময়ে গত বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল গড়ে ২ হাজার ৬২৯ জন, আর ২০২৩ সালে তা ছিল মাত্র ৬৪৮ জন।
এনএইচএস জানিয়েছে, দেশের কিছু এলাকায় ফ্লু সংক্রমণের গতি কিছুটা কমলেও সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক। উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডে গত সপ্তাহে ফ্লু রোগীর সংখ্যা ৪ শতাংশ কমেছে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সংক্রমণ বাড়ছে। পূর্ব ইংল্যান্ডে হাসপাতালে ভর্তি ফ্লু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৯ শতাংশ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডে বেড়েছে ৪০ শতাংশ।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই ইংল্যান্ডে রেসিডেন্ট চিকিৎসকেরা বেতন সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাঁচ দিনের ধারাবাহিক ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে প্রবেশ করেছেন। এতে হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ আরও বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এনএইচএস ইংল্যান্ডের জাতীয় মেডিক্যাল পরিচালক অধ্যাপক মেঘনা পান্ডিত বলেছেন, কিছু এলাকায় ফ্লু সংক্রমণের হার প্রত্যাশার তুলনায় ধীরে বাড়লেও এনএইচএস এখনো নিরাপদ অবস্থায় নেই। তাঁর ভাষায়, ধর্মঘটের প্রভাবের সঙ্গে শীতকালীন নানা ভাইরাসের ধারাবাহিক সংক্রমণ মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে অনেক হাসপাতালকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকতে হবে। তবে তিনি জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেন, প্রয়োজন হলে স্বাভাবিক নিয়মেই এনএইচএসের সেবা নিতে এগিয়ে আসা উচিত।
গত সপ্তাহে ইংল্যান্ডজুড়ে ১২৮ জন ফ্লু রোগী আইসিইউ বা ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন, যা আগের সপ্তাহের ১০৬ জনের তুলনায় বেশি। একই সঙ্গে ডায়রিয়া, বমি ও নোরোভাইরাসের মতো উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪২৭টি হাসপাতালের শয্যা দখল ছিল, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি।
স্বাস্থ্যসচিব ওয়েস স্ট্রিটিং বলেছেন, ফ্লু সংক্রমণ এনএইচএসের ওপর অভূতপূর্ব চাপ সৃষ্টি করছে এবং হাসপাতালে রেকর্ড সংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাঁর মতে, এই সংকটময় সময়ে চিকিৎসকদের ধর্মঘট পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিজেদের ও প্রিয়জনদের সুরক্ষার জন্য ফ্লু টিকা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে তিনি জানান, ধর্মঘট ও শীতকালীন রোগের এই চূড়ান্ত সময়ে রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার।