অপরাধ বাণিজ্য

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষিত নারী সদস্য গ্রেফতার

132_Screenshot_20210829-180109_All Newspapers.jpg

 

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রশিক্ষিত এক নারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা নামে ওই নারী সদস্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন।

সিটিটিসির দাবি, গ্রেফতার নাবিলা জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রথম প্রশিক্ষিত নারী সদস্য। এর আগে এই সংগঠনের কোনো প্রশিক্ষিত নারী সদস্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়নি।

নাবিলা আনসার আল ইসলামের হয়ে মিডিয়া শাখা অর্থাৎ জঙ্গিবাদের প্রচার প্রচারণার দায়িত্ব পালন করতেন। তবে তার সামরিক শাখার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।

তিনি সংগঠনের একজন প্রশিক্ষিত সদস্য। দেশ ও দেশের বাইরে যে কোনো সময় জিহাদ করার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন।
সেই লক্ষ্যেই নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে সহিংস বিভিন্ন ভিডিও দেখতেন ও শেয়ার করতেন।
রোববার (২৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে  নাবিলাকে গ্রেফতার করে সিটিটিসির সিটি-ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস ডিভিশনের সাইবার ইন্টেল টিম। অভিযানে গ্রেফতার নাবিলার কাছ থেকে জঙ্গিবাদী কাজে ব্যবহৃত সিমকার্ড ও মেমোরিকার্ডসহ মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার নাবিলা ২০২০ সালের প্রথম দিকে নিজের নাম-পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন। এক সময় তিনি ফেসবুকে আনসার আল ইসলামের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ‘তিতুমীর মিডিয়া’র খোঁজ পান। তখন তিনি সেই পেজে যুক্ত হয়ে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী ভিডিও, অডিও ও আর্টিকেল পড়েন ও তাদের মতাদর্শকে নিজের ভেতরে লালন করেন। ‘তিতুমীর মিডিয়া’র পেজের অ্যাডমিনের সঙ্গে তার যোগাযোগ তৈরি হয়। সংগঠনের মতাদর্শকে সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে বেছে নেন নাবিলা। এরপর তিনি ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও চার্পওয়্যার নামে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন ছদ্মনামে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলেন।

প্রাথমিক তদন্ত প্রসঙ্গে সিটিটিসি প্রধান বলেন, জঙ্গিবাদী প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত তার ২টি ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ১টি চার্পওয়্যার ও ৪টি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া যায়। তিনি ফেসবুকে ফেক অ্যাকাউন্ট দিয়ে আনসার আল ইসলামের উগ্রবাদী সহিংস মতাদর্শ প্রচার, বিভিন্ন উগ্রবাদী প্রচারণাকারী আইডির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতেন। তিনি আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচারের জন্য ব্যাপকভাবে টেলিগ্রাম মাধ্যম ব্যবহার করতেন। টেলিগ্রাম ব্যবহার করে তিনি ৪টি অ্যাকাউন্ট এবং টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৫টির অধিক চ্যানেল নিজে খুলে তা পরিচালনা করতেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, এসব চ্যানেলে তিনি আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী সহিংস ভিডিও, অডিও, ছবি ও ফাইল শেয়ার করতেন। তার নিজের সবগুলো টেলিগ্রাম চ্যানেল মিলে আনুমানিক ২৫ হাজার সাবস্ক্রাইবার আছে, যারা নিয়মিত তার চ্যানেলগুলো অনুসরণ করে।

সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নাবিলার বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। তিনি পাত্রপক্ষকে জানান, জিহাদের ময়দানে ডাক আসলে সামনের সারিতে থাকবেন ও শহীদি মৃত্যু এলে তিনি পিছু হটবেন না। যাকে বিয়ে করবেন তার মতাদর্শও এমন হতে হবে, না হলে তিনি বিয়ে করবেন না।

গ্রেফতার নারী জঙ্গি সদস্য নাবিলার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় আদালতের আদেশে ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন তিনি।

সিটিটিসি কর্মকর্তা আরও জানান, নাবিলার পরিবার চেষ্টা করেছিল তাকে জঙ্গিবাদ থেকে দূরে সরিয়ে আনতে। কিন্তু পারেনি। পরিবারের অমতেই তিনি এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে বেরিয়ে পড়েন। যে কোনো জায়গায়, যে কোনো দেশে জিহাদ করার প্রস্তুতি ছিল গ্রেফতার নাবিলার।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও