অপরাধ জগৎ

কোটি কোটি টাকা প্রতারণার দায়ে ভণ্ডপীর গ্রেফতার

 

আব্দুল মুত্তালিব চিশতি। পরনে থাকে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি, পায়জামা। তার উপরে মুজিব কোট। মাথায় লম্বা টুপি, মুখে এরাবিয়ান স্টাইলের দাঁড়ি। সপ্তাহান্তে যখন তার বাসায় জিকিরের হিড়িক পড়ে নর নারীর, তখন কাফনের সাদা কাপড় পরেই তিনি বয়ান করেন আর লম্বা মুনাজাত নেন। তখন ভক্ত আশেকানগণ অশ্রু বিসর্জন দিলেও চোখ বুজে থাকা আব্দুল মুত্তালিব কখনো কখনো চোখ খুলে সন্ধান করেন শিকারের; কাকে টার্গেট বানানো যায় গ্যা এক্টিভিজমের প্যাসিভ পার্টনার হিসেবে। পবিত্র কোরআনের সর্বসাকুল্যে ৩টি সূরা জানা এই অজ্ঞ-মূর্খ আব্দুল মোত্তালিবের। পীরবাদ, চিশতিয়া ত্বরিকা যৌন হয়রানি আর ব্যবসার একটা কৌশল মাত্র।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের একটি টিম সোমবার রাজধানীর উত্তরার তুরাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে এই প্রতারককে। ডিবি পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি ) মশিউর রহমান।

গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, ধান্দাবাজি আর প্রতারণায় রাজনীতিকে ব্যবহার করার দৌড়েও বেশ এগিয়ে এ ভণ্ডপীর আব্দুল মোত্তালেব চিশতি। ইতোমধ্যে একটি চক্রকে নিয়ে তিনি বানিয়েছেন আওয়ামী নির্মাণ শ্রমিক লীগ; বাগিয়ে নিয়েছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি পোস্ট। এই পদবী ব্যবহার করে বিভিন্ন পুরুষ এবং মহিলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তুলেছেন ছবি। তাদেরকে দিয়ে সুপারিশ করিয়ে বিভিন্ন সময় প্রবেশ করেছেন বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে। বিশেষ করে শিক্ষামন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। মূলত যে সমস্ত মন্ত্রণালয় সমগ্র দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে সে সমস্ত মন্ত্রণালয়গুলোতে আনাগোনা করে কখনো মন্ত্রী মহোদয়, কখনো সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে তুলেছেন ছবি। একদিকে পীরবাদের বয়ান করতে, আরেকদিকে রাজনৈতিক প্রচার প্রচারণার জন্য সফর করেছেন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। সেখানে তার লম্বা বয়ান এবং মোনাজাতে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই দিয়েছেন বিভিন্ন উপহার সামগ্রী।

উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, পীরবাদ, রাজনৈতিক পদবী ব্যবহার করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মাস্টাররোলে চাকরি দেয়া রাজউকের বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট স্বল্পমূল্যে বরাদ্দ দেয়া, দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার চেয়ারম্যান মেম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর অথবা মেয়র প্রার্থীদেরকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ পাইয়ে দেয়ার নাম করে এক একজনের কাছ থেকে ৬ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।

ঘরে দুই বউ আর অসংখ্য মুরিদান থাকলেও এই ভণ্ডপীর পরিচালনা করতেন ‘ঢাকা গে কমিউনিটি'র ২টি ওয়েব পেজ। যার মাধ্যমে প্রায় ১০০ জন ছেলের সঙ্গে চালাতেন অস্বাভাবিক ও বিকৃত যৌনাচার। এই ভণ্ড প্রতারক এর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুইটি মামলা রুজু হলেও শতাধিক বঞ্চিত ভিকটিম লোকলজ্জায় অভিযোগ করছেন না। সোমবার বিকালে রাজধানীর তুরাগ এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে এই ভণ্ডপীর ও প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একটি টিম। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ রিমান্ডের জন্য বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করে। আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও