রাজনীতি

ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা, নতুন সঙ্কটে পাকিস্তান

6155_bdnews24_2023-03_9b5ba688-d83b-4c13-ad9c-b55b1164ab42_Imran_khan_arrest_attempt_150323.jpg

পাকিস্তানের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ইমরান খান বলেছেন, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টায় কর্তৃপক্ষ ‘আইনের বাইরে গিয়ে’ কাজ করছে।

“তাদের সবারই উচিত আইনের অধীনে থাকা,” বিবিসিকে এমনটাই বলেছেন তিনি।

সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে মঙ্গলবার তার সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। আদালতের আদেশে পুলিশ ইমরানকে গ্রেপ্তারে সেখানে গেলে এই সংঘর্ষ বাধে।

ডন জানিয়েছে, বুধবার খুব সকালের দিকেও পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ইমরানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায়।

তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থকদের ইমরানের জামান পার্কের বাসভবনের সামনে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। পুলিশ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন লক্ষ্য করে ফের কাঁদুনে গ্যাস ছুড়েছে বলেও অভিযোগ করেছে তারা।

এর আগে রাতে দেওয়া এক ভাষণে ৭০ বছর বয়সী ইমরান বলেন, তিনি শনিবার ইসলামাবাদ আদালতে হাজিরা দেবেন, এমন বন্ডে স্বাক্ষর করতেও তিনি প্রস্তুত। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেপ্তারই করতে চাইছে।

আদালতে দুটি জঙ্গি হামলার কথা উল্লেখ করে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানান তিনি।  

অন্য এক টুইটে পিটিআই প্রধান দাবি করেছেন, গ্রেপ্তার নয়, কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে ‘গুম ও হত্যা’ করা।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকাকালীন রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলছেন ইমরান।

বিবিসি লিখেছে, লাহোরে ইমরানের বাসভবনের সামনে টানা দ্বিতীয় দিন ধরে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। পিটিআই প্রধানকে গ্রেপ্তারে তার বাসভবনে ঢুকতে পুলিশ একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ ইমরানের সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছুড়ছে, যার পাল্টায় পিটিআই কর্মী-সমর্থকরা ইট-পাটকেল ছুড়ছে। ইমরানের সমর্থকরা লাহোর পয়োবর্জ্য কর্তৃপক্ষের একটি পানির ট্যাংক, একাধিক মোটর সাইকেল ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং মল রোডের এক ওয়ার্ডেনের কার্যালয় তছনছ করে দিয়েছে বলে ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৩০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা গেছে; পিটিআইয়ের অন্তত ১৫ কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

ইমরান বলছেন, তাকে গ্রেপ্তারের কোনো কারণ নেই পুলিশের, কেননা তিনি শনিবার পর্যন্ত আগাম জামিন নিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু সরকার বেশ কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টার পরও তাকে গরাদে ঢোকাতে বদ্ধপরিকর।

“আমাকে যে কারাপ্রকোষ্ঠে রাত কাটাতে হবে, সে ব্যাপারে মানসিকভাবে আমি প্রস্তুত। জানি না কয় রাত কাটাতে হবে, কিন্তু আমি প্রস্তুত,” বলেছেন তিনি।

সমর্থকদের ‍উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি কাঁদুনে গ্যাসের ক্যানিস্টারও দেখান, যেটি তার বাসভবন লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে বলে দাবি তার।

তিনি বলেছেন, পিটিআইকে আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতেই কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

“কিন্তু আমি জেলে থাকি বা না থাকি, কেউই আমার দলের জয় ঠেকাতে পারবে না,” বলেছেন তিনি।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেছেন, ইমরানকে গ্রেপ্তারে নেওয়া পদক্ষেপের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সংযোগ নেই, পুলিশ কেবল দুর্নীতির মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে কাজ করছে।

ইমরান তার দলের নেতাকর্মী, নারী ও শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গ্রেপ্তার এড়াতে ও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

পিটিআই সমর্থকরা পাকিস্তানের অন্যান্য শহরেও ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছে।

গত বছরের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া ইমরান একের পর এক কর্মসূচি ও বক্তব্যে উত্তরসূরী শেহবাজ শরিফকে আগাম নির্বাচন দিতে চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ বছরের শেষদিকে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ইমরান গত বছরের নভেম্বরে এক র‌্যালিতে তাকে হত্যাচেষ্টার পেছনেও শরিফ আছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সেবারের হামলায় পিটিআইপ্রধান পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও