অস্ট্রিয়া থেকে ২০ জন, গ্রিসের একটি আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ১৭ জনসহ মোট ৩৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে এথেন্স আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডিপোর্ট (ফেরত পাঠানো) করা হয়েছে। বিগত পাঁচ বছরে যাদের অভিবাসন প্রত্যাশীর আশ্রয় আবেদন (এসাইলাম) সম্পূর্ণভাবে আইনি প্রক্রিয়া থেকে বাতিল হয়ে গেছে তারাই এ ডিপোর্ট কার্যক্রমের আওয়তায় ছিলেন। আগামীতেও এ ধরনের দেশে ফেরত বা ডিপোর্টের কার্যক্রম চালু থাকবে বলে বিবৃতি দিয়েছেন দেশটির অভিবাসন ও দেশ সুরক্ষা মন্ত্রী নটিস মিতেরাকিস।
২০১৬ সালের পর এই প্রথম আবারো বাংলাদেশিদের ডিপোর্ট বা জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন গ্রিক সরকার, যদিও ২০১৯ সালে ১১২ জন পাকিস্তানির সঙ্গে ৪ জন বাংলাদেশিকে তুর্কিতে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন আইনে ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত কয়টি দেশ চাপের মুখে থাকার কারণেই একের পর এক এ ধরনের অমানবিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে গ্রিসসহ অন্যান্য সীমান্তবর্তী দেশগুলো।
গত বছর জানুয়ারিতে মালটা থেকেও কয়েকজন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন এবং এখনো ডিপোর্ট বা দেশে ফেরত তালিকায় ১৭৬ জনের মতো প্রবাসী বাংলাদেশি মাল্টা সরকারের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আছে। উল্লেখ্য, গ্রিস, মাল্টা ও আলবেনিয়ার কূটনৈতিক সব কার্যক্রম গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমেই পরিচালনা করা হয়।
গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায় যে, অন্য কোনো দেশের সরকারি নিয়মের বাহিরে নিয়মবহির্ভূত কোনো সিদ্ধান্ত দূতাবাস কর্তৃপক্ষ নিতে পারেন না এবং অবৈধ -অনিয়মিত বা বৈধ কাগজপত্রহীন কোনো বাংলাদেশিকে দূতাবাস আইনিভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা করতে পারেন না। কিন্তু সাধারণ জনগণের ধারণা দূতাবাসের দায়িত্বের পাশাপাশি বাংলাদেশ কমিউনিটিও দায়ভার এড়ানোর কোনো অবকাশ নেই।
অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী গ্রিস ঘুরে গেছেন এবং গ্রিসের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার উদ্দেশ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন গ্রিক মন্ত্রীদের সঙ্গে। দুই দেশের কূটনৈতিক সুযোগ-সুবিধা রক্ষায় হয়তো কিছু লোক ফেরত নেয়ার অঙ্গীকার করেছেন, বদলে বৈধপথে বাংলাদেশ থেকে কৃষি শ্রমিক আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন গ্রিক সরকার।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। বড়দিনের আগে দেওয়া ভাষণে ইউরোপের সব দেশকে অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিতে বলেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস৷ অভিবাসীদের জন্য দেশগুলোকে ‘হৃদয়ের দুয়ার উন্মুক্ত’ রাখার আহ্বান জানান।
ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে আসা অভিবাসীদের বিষয়ে ইউরোপের দেশগুলোকে আরো মানবিক হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আহ্বান জানিয়ে আসছেন পোপ ফ্রান্সিস৷ গত সপ্তাহে পোপের খরচে সাইপ্রাসের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে ১২ জন অভিবাসীকে ইতালিতে স্থানান্তর করা হয়েছে৷ দেশটি থেকে মোট ৫০ জনকে স্থানান্তর পরিকল্পনার প্রথম ধাপ এটি৷