কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের একদফা দাবির মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ক্ষমতার পালাবদলে পরিবর্তন হতে দেখা যাচ্ছে অনেক কিছুই। গত সরকারের আমলে সুবিধাভোগীদের মধ্যে বিনোদন জগতের তারকাদের সংখ্যাও কম নয়। এ তালিকা বেশ লম্বা। তাদের নিয়মিতই সরকারের তোষামোদি করতে দেখা যেত। অনেক শিল্পীই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্য শিল্পীদের সরকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ারও আহ্বান জানান তারা। এখন সরকারের এ পালাবদলে তারা কোথায়? তাদের খোঁজ জানতে অনেকেই উদগ্রীব হয়ে আছেন। অনেকেই বলছেন দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বর্তমান অবস্থান জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সবার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
ফেরদৌস সর্বশেষ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায় এ সংসদ-সদস্যকে। এমনকি শিল্পীদের সরকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে বিটিভি পরিদর্শনে গিয়েও সমালোচিত হন এ অভিনেতা। সরকার পতনের পর থেকেই ফেরদৌসের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশেই আত্মগোপনে আছেন ফেরদৌস।
এক সময়ের বেশ জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন রিয়াজ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকারের পক্ষে থাকতে শিল্পীদের আহ্বান জানান এ নায়ক। আওয়ামী রাজনীতিতেই বিশ্বাসী ছিলেন। সরকারের পক্ষে বেশ সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। হাসিনার দেশ ত্যাগের পর থেকেই তিনিও আত্মগোপনে রয়েছেন। সূত্রের তথ্যমতে, এখনো দেশেই আছেন রিয়াজ।
আওয়ামী শাসনকালে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এবং জাতীয় সংসদ ও দলীয় অনুষ্ঠানগুলোতে চটকদার গান গেয়ে বহুল আলোচিত হন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ। বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হচ্ছে জনরোষ থেকে বাঁচতে ইতোমধ্যে দেশত্যাগ করেছেন মমতাজ। আবার বলা হচ্ছে বিদেশ পালাতে ব্যর্থ হয়ে দেশেই আত্মগোপন করেছেন তিনি, বিদেশ পাড়ি দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন। উল্লেখ্য, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসনে নৌকার টিকিট পেয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে কুপোকাত হন মমতাজ বেগম। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, আত্তীকরণ ও পদবাণিজ্য, বিতর্কিত ব্যক্তিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অভিনেত্রী শমী কায়সার অবশ্য এখন অভিনয়ে নেই। ব্যবসা ও রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন গত কয়েক বছর। আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত তিনি। বিটিভি পোড়ানোর ঘটনার পর পরিদর্শন দলে তিনি ছিলেন একজন। মায়াকান্না করেছেন বিটিভির জন্য, দেশের ক্রান্তিকালেও গেয়েছেন সরকারের গুণগান। সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পলায়নের পর শমী কায়সারও চলে গেছেন আত্মগোপনে।
এছাড়া সরকার পতনের পর থেকেই খোঁজ নেই আওয়ামী সরকারের তোষামোদী করা আরও ডজনখানেক শিল্পীর। অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আগস্টের প্রথম দিন বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছিলেন সংস্কৃতি অঙ্গনের একঝাঁক তারকা। গুণগান গেয়েছেন সরকারের উন্নয়নের। শিক্ষার্থীসহ শতাধিক সাধারণ মানুষের মৃত্যুকে শোক না জানিয়ে তারা কান্না করেছেন বিটিভির পোড়া ইট-পাথরের জন্য, মেট্রোরেলের জন্য। প্রকাশ্যে ও গোপনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন অভিনয়শিল্পী সুজাতা, অঞ্জনা, অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ, তানভীন সুইটি, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, হৃদি হক, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরুসহ আরও অনেকে। শেখ হাসিনার পতনের ঝুঁকিতে আছেন, এমনটা টের পেয়ে এদের প্রায় প্রত্যেকেই আছেন আত্মগোপনে।