টয়োটা’র প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আকিও টয়োডা সম্প্রতি এক বক্তব্যে দাবি করেছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ ইলেকট্রিক গাড়ির (ইভি) উৎপাদন ও ব্যবহার থেকে সৃষ্ট মোট পরিবেশগত প্রভাব; বিশেষ করে ব্যাটারি তৈরির সময়কার কার্বন নির্গমন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস বিবেচনায় প্রায় তিনটি হাইব্রিড গাড়ির সমান হতে পারে। তাঁর যুক্তি মূলত জীবচক্র বা লাইফসাইকেল নির্গমন বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে, যেখানে গাড়ির কাঁচামাল আহরণ, উৎপাদন প্রক্রিয়া, পরিবহন এবং ব্যবহারের সময় জ্বালানি বা বিদ্যুৎ খরচ সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
টয়োডা উল্লেখ করেছেন, টয়োটা ইতোমধ্যে প্রায় ২৭ মিলিয়ন হাইব্রিড বিক্রি করেছে, যা তাঁর ভাষ্যমতে ৯ মিলিয়ন পূর্ণাঙ্গ ইভির সমান কার্বন নির্গমন কমাতে সাহায্য করেছে। তিনি বিশেষ করে জাপানের মতো দেশে উদাহরণ দিয়েছেন, যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় অংশ এখনও ফসিল ফুয়েলনির্ভর থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে আসে। তাঁর মতে, এই ধরনের গ্রীডে ইভি চার্জ করতে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ নিজেই উচ্চ কার্বন নির্গমন সৃষ্টি করে, ফলে গাড়ি চালানোর সময় নির্গমন না থাকলেও মোট পরিবেশগত প্রভাব কমে না বরং অনেক ক্ষেত্রে বাড়তেও পারে।
এই কারণেই টয়োডা কেবল ইভি-নির্ভর ভবিষ্যতের বদলে একটি “মাল্টি-পাথওয়ে” কৌশলের পক্ষে কথা বলেছেন। তাঁর প্রস্তাব হলো, একই সময়ে হাইব্রিড, প্লাগ-ইন হাইব্রিড, হাইড্রোজেন ফুয়েল-সেল এবং ইভি; সব ধরনের প্রযুক্তি একসাথে উন্নয়ন ও প্রয়োগ করা উচিত, যাতে নির্দিষ্ট অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামো ও পরিবেশগত বাস্তবতার সাথে খাপ খাওয়ানো যায়।
তবে এই মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্কও কম নয়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, যদিও ব্যাটারি উৎপাদনে বর্তমানে বেশি কার্বন নির্গমন হয়, গ্রীড যত দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরিত হচ্ছে, ইভির জীবনচক্রে মোট নির্গমন তত দ্রুত কমছে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, গড়পড়তা একটি ইভি কয়েক বছরের মধ্যেই তার উৎপাদনকালে সৃষ্ট অতিরিক্ত নির্গমন পুষিয়ে দেয় এবং হাইব্রিডের তুলনায় সার্বিকভাবে কম কার্বন পদচিহ্ন রেখে যায়। ফলে টয়োডার যুক্তি কিছু বাজার ও সময়সীমায় প্রযোজ্য হলেও দীর্ঘমেয়াদে এবং পরিষ্কার জ্বালানিভিত্তিক গ্রীডে ইভি বেশি পরিবেশবান্ধব সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।