ষাটোর্ধ অসুস্থ মনোয়ারা বেগমের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম ভিক্ষাবৃত্তি। বসবাস করছেন দেবরের ছাগল পালন করা ঘরে। অস্বাস্থ্যকর দুর্গন্ধময় ঘরেই তার বসবাস। সন্তানের বাড়িতে আশ্রয় হয়নি গর্ভধারিণী মায়ের।
মনোয়ারা বেগম তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বারুইহাটি গ্রামের মৃত ফরিদ উদ্দীন খাঁর স্ত্রী। বছর তিনেক আগে দুরারোগ্য লিভার ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে তার স্বামীর। একমাত্র ছেলে কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৮) প্রায় ১৫ বছর আগে বিয়ে করে শ্বশুরের জায়গায় বাড়ি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছে। স্বামীর মৃত্যুর পর মনোয়ারার ছেলের বাড়িতে আশ্রয় হলেও মাস ছয়েকের মধ্যে সেখান থেকেও ফিরে আসতে বাধ্য হন। সন্তানের বাড়িতে আশ্রয় হয়নি গর্ভধারিণী মায়ের। এখন প্রতিবেশী এক দেবরের ছাগলের পালন করা ঘরে ছাগলদের সঙ্গে শেয়ার করে রাত্রিযাপন করলেও অসুস্থ শরীরে ভিক্ষাবৃত্তিতেই চলে তার জীবিকা। তবে এ শরীরে প্রতিদিন পরের বাড়িতে গিয়ে হাত পেতে ভিক্ষা নিতেই তার যত কষ্ট। সরকারের কাছে তার করুণ আর্তি মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের পাশাপাশি বাকি জীবন কাটাতে দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা চান তিনি।
বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের অসহায় যাপিত জীবনের খবরে সরেজমিন গেলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘দশ মাস গর্ভেধারণ করে যে সন্তানকে পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখালাম, কষ্ট করে বড় করলাম সেই সন্তানই যখন আমার হলো না তখন মাথা গোঁজার জন্য কোন আশ্রয় আর চাই না। শুধু খাবারের যোগান হলেই বাকী জীবনটা একটু শান্তিতে থাকবো।’
স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানান, ছেলের বিয়ের আগে তাকে নিয়ে খুব গর্ব করতেন মনোয়ারা। তবে বিয়ের পর থেকে শ্বশুরের জায়গায় বউয়ের আঁচলবন্দি হয়ে পড়ে একমাত্র সন্তান। এরপর স্বামীর মৃত্যুর পর সত্যিই অসহায় পড়েছেন তিনি। এমনকি স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তিটুকু বিক্রি করেও ছেলেকে দিয়েছেন ভরসা ও মিথ্যা আশ্বাসে। ব্যবসায়ী সচ্ছল সন্তানের বাড়ীতে যে গর্ভধারিণী মায়ের আশ্রয় হয় না, সন্তান থাকতেও যে মায়ের জীবন-জীবিকা চলে ভিক্ষাবৃত্তি করে। সেই সন্তানের বিচার হওয়া উচিৎ। তবে ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন এসব বিষয় নিয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।