আইন- আদালত

ফেসবুক লাইভে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

411_Screenshot_20211021-184034_Chrome.jpg

ফেসবুক লাইভে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

 

ফেনীতে ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় স্বামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ বেগম জেবুননেছা এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তির নাম ওবায়দুল হক। তিনি ফেনী পৌরসভার উত্তর বারাহীপুর ভূঁইয়াবাড়ির বাসিন্দা। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি তাঁর ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল ফেনী পৌরসভার উত্তর বারাহীপুর ভূঁইয়াবাড়িতে দাম্পত্য কলহের জের ধরে ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রী তাহমিনা আক্তারকে দুই হাত পিছমোড়া করে বেঁধে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন স্বামী ওবায়দুল হক। পরে হত্যাকারী ওবায়দুল নিজেই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে স্ত্রীকে হত্যার ঘটনাটি পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে ফেনী মডেল থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওবায়দুলকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা ও ফেসবুকে প্রচার চালানো মুঠোফোন জব্দ করা হয়।

ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা সাহাব উদ্দিন বাদী হয়ে ওবায়দুল হককে একমাত্র আসামি করে ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই আসামি ওবায়দুলকে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর আগে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী এলাকার সাহাব উদ্দিনের মেয়ে তাহমিনা আক্তারের সঙ্গে ওবায়দুল হকের ভালোবেসে ও পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাহমিনা চট্টগ্রামে নার্সের চাকরি করতেন। চট্টগ্রামেই থাকতেন। চট্টগ্রামে স্ত্রীর চাকরি নিয়েও স্বামীর অসন্তুষ্টি ছিল। এসব নিয়ে তাঁদের প্রায়ই ঝগড়া লেগে ছিল।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমরান হোসেন একই বছরের ১৬ নভেম্বর একমাত্র আসামি ওবায়দুল হকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এ রায়ে নিহতের বাবা সাহাব উদ্দিন সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানান।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, ‘এ রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আশা করি, আগামীতে আর কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস পাবে না।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুস সাত্তার বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

ফেনী আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহম্মদ জানান, মামলায় বাদীসহ ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারপক্ষ মামলাটি যথাযথভাবে প্রমাণ করতে পারায় আদালত ওই আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি ওবায়দুল আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আসামি তাঁর স্ত্রীকে দুই হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ঘরের দরজা বন্ধ করে ফেসবুক লাইভে এসে নির্মমভাবে খুন করেন। খুনের ঘটনার সময় মাত্র ১৮ মাস বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যাসন্তান যে মাতৃহারা হবে, বিষয়টি আসামি তাঁর বিবেচনার মধ্যে নেননি। এ ছাড়া ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রীকে নির্মমভাবে খুন করার মাধ্যমে অন্যদেরও খুব সহজেই সামান্য কারণে অন্য কাউকে খুন করতে উৎসাহ প্রদান করেছে। এরূপ সচেতনতামূলক, স্বেচ্ছাকৃত এবং নৃশংস খুনের সাজা মৃত্যুদণ্ড হওয়া সমীচীন।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও