আইন- আদালত

মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী ঝর্ণার মেডিকেল টেস্ট সম্পন্ন

92_Jhorna.jpg

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়েরের পর কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার মেডিকেল টেস্ট সম্পন্ন করা হয়েছে।

শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সকালে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ঝর্ণার মেডিকেল টেস্ট করা হয়। এর সকালে মামলাটি দায়ের করেন তিনি।

মামলা হওয়ার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জান্নাতকে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়ে যায় সোনারগাঁ থানা পুলিশ। সেখান থেকে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনারগাঁ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জান্নাত আরা ঝর্ণা মামলা দায়েরের পর তাকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য মহিলা পুলিশের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। মেডিকেল পরীক্ষার পর তিনি নিজের বাসায় চলে যান।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সোনারগাঁ থানার ধর্ষণ মামলায় ভিকটিম জান্নাত আরা ঝর্ণাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। পরে গাইনি বিভাগের তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে তার মেডিকেল পরীক্ষা করানো হয়। যথাসময়ে মেডিকেল রিপোর্ট সোনারগাঁ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

এদিকে জান্নাত আরা ঝর্ণা শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমার সঙ্গে অন্যায় ও প্রতারণা করেছেন। আমি রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাই। মামুনুল হক আমার সঙ্গে যে ধরনের অন্যায় করেছেন আর কোনো নারীর সঙ্গে যেন এমন করতে না পারেন, সেজন্য তার সেই ধরনের বিচার হওয়া উচিত। মামুনুল হক আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছেন।’

এর আগে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ, প্রতারণা, নির্যাতনের অভিযোগ এনে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে তার দাবিকৃত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু বলেন, সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে বাদীর সঙ্গে মামুনুল হক প্রতারণা করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে সম্পর্ক করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর ৩০। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে করা মামলাটি তদন্ত করবেন সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম।

মামলার লিখিত অভিযোগে ওই নারী জানান, ‘আমার সাবেক স্বামী শহিদুল ইসলার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ২০০৫ সালে মামুনুলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তবে মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয়ের আগে আমাদের দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত সুখে শান্তিতে কাটছিল। এরমধ্যে আমাদের সংসারে দুই ছেলে সন্তান জন্ম নেয়।’

লিখিত অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আমাদের বাসায় মামুনুল হকের অবাধ যাতায়াত থাকায় তিনি আমার ওপর কুদৃষ্টি দেন। এতে করে আমাদের সংসারে বিভেদ তৈরি হয়। যার পরিবর্তে তিনি সুকৌশলে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে থাকেন। মামুনুল হকের কুপরামর্শে আমাদের দাম্পত্য জীবন চরমভাবে বিষিয়ে ওঠে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে ১০ আগস্ট আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।’

‘বিবাহ বিচ্ছেদের পর আমি পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অসহায় হয়ে পড়ি। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমাকে সহযোগিতার নাম করে কৌশলে ঢাকায় আসার জন্য প্ররোচনা দিতে থাকেন। আমি একজন আলেমকে ভরসা করে তার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসি। কিন্তু ঢাকা আসার পর শুরুতে পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীদের বাসায় আমাকে রাখেন এবং নানাভাবে আকার ইঙ্গিতে আমাকে খারাপ প্রস্তাব দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিতে বাধ্য হই। এর ধারাবাহিকতায় তার পরামর্শে আমি ২৩/৩ নর্থ সার্কুলার রোড উত্তর ধানমন্ডি তৃতীয় তলা সাবলেট হিসেবে ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকি এবং তার ঠিক করে দেয়া একটি বিউটি পার্লারে কাজ শিখতে থাকি। আমার বাসা ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ তিনি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। গত দুই বছর বিভিন্ন সময় ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরির নামে নিয়ে গেলে বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে রাত্রীযাপন ও বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এক পর্যায়ে আমি বিয়ের কথা বললে তিনি আমাকে বিয়ে করবেন, করছি বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।’

সবশেষ গত ৩ এপ্রিল আমাকে ঘোরাঘুরির কথা বলে বিকেল সোয়া ৩টায় সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের পঞ্চম তলার ৫০১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আসেন। সেখানে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করেন। ওইসময় জনগণ আমাদের রিসোর্টে আকস্মিক আটক করে এবং আমাদের পরিচয় জানতে চায়। আমরা কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় জনতার রোষানলে পড়ি। পরবর্তীতে মামুনুল হক ও তার অনুসারীরা রিসোর্ট থেকে আমাদের নিয়ে যায়। এ ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়। পরে মামুনুল হক আমাকে আমার ভাড়া বাসায় যেতে না দিয়ে তার পরিচিত একজনের বাসায় আটকে রাখেন। আমার পরিবার, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজন কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। পরে কৌশলে উদ্ধারের জন্য আমার বড় ছেলেকে আইনের আশ্রয় নিতে বলি। গত ২৭ এপ্রিল ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে। পরে জানতে পারি ২৬ এপ্রিল আমার বাবা কলাবাগান থানায় একটি ডায়েরি করেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর আমার বাবার জিম্মায় দেয়। সেখানে আমি আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।’

জান্নাত আরা ঝর্ণার বাবা ওলিয়ার রহমানকে গত ২৪ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ। আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এরপর ২৬ এপ্রিল মেয়েকে উদ্ধারে পুলিশের সহায়তায় চেয়ে কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। পরদিন মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে ঝর্ণাকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। উদ্ধার হওয়ার তিন দিনের মাথায় এই মামলা করলেন তিনি।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও