বিভিন্ন সময় মাঝেমধ্যেই আমরা খবরের কাগজ কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় দেখি, ছেলে হয়ে জন্মে পরবর্তীতে মেয়েতে রুপান্তর হওয়া অথবা মেয়ে হয়ে জন্মে ছেলেতে রুপান্তর! এমন ঘটনা সাধারণ কালেভেদেই চোখে পড়ে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্যালিনাস নামক গ্রামে এমন ঘটনা একেবারেই স্বাভাবিক। সেখানে প্রতি ৯০ জন শিশুর মধ্যে এক জন বয়ঃসন্ধিকালে এমন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান।
বিবিসি ও ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এটি নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ পেয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, গ্রামটিতে অনেক শিশুই মেয়ে হয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে ধীরে ধীরে তাদের শরীরে ছেলেদের বৈশিষ্ট প্রকাশ পেতে শুরু করে। তাদের আচরণও ছোট থেকেই ছেলেদের মতো থাকে।
যেমন- ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা করা, পোশাক পরিধান করা ইত্যাদি। বাবা-মা সন্তানের জন্য মেয়েদের পোশাক কিনলেও সন্তান সেটা পড়তো না। আর বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছালে পেশি শক্ত হওয়া এবং পুরুষ লিঙ্গ বের হয়।
একই রকম ঘটনা ঘটে ছেলে হয়ে জন্মানো শিশুদের ক্ষেত্রেও। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে ধীরে ধীরে তাদের শরীরে মেয়েদের বৈশিষ্ট প্রকাশ পেতে শুরু করে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামটিতে প্রতি ৯০ জন শিশুর মধ্যে একজনের শরীরে এমন পরিবর্তন ঘটে।
গ্রামবাসীদের অনেকে বিশ্বাস করতেন, গ্রামের ওপর কোনো পুরনো অভিশাপ থাকায় এমনটা ঘটে। কিন্তু বিজ্ঞান ও চিকিৎসকরা বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, এই শিশুরা বিরল জিনগত রোগ ফাইভ আলফা রিডাকটেজ ডেফিসিয়েন্সিতে আক্রান্ত। ফাইভ আলফা রিডাকটেজ হলো, মানব শরীরের একটি উৎসেচক এবং সেটির ঘাটতি দেখা দিলেই এই রোগটি দেখা দেয়।
শরীরে যে জিনটি এই উৎসেচক তৈরির নির্দেশ বহন করে তার মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে এটি কম উৎপন্ন হয়। এই উৎসেকটির কাজ হলো, স্ত্রী শরীরে পুরুষের বৈশিষ্ট্য বাহক হরমোন টেস্টোস্টেরনের বিপাক ঘটিয়ে তাকে ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরনে পরিণত করা। নারী শরীরে এটাই স্বাভাবিক জৈবিক ক্রিয়া এবং এর ফলেই পুরুষের বৈশিষ্ট প্রকাশ পায় না। তখন ওই ব্যক্তি একজন স্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত হন।
আর ফাইভ আলফা রিডাকটেজের ঘাটতি দেখা দিলে টেস্টোস্টেরনের বিপাক ঘটিয়ে তাকে ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরনে পরিণত করার জৈবিক ক্রিয়াটি ব্যাহত হয়ে থাকে। তখন শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উপস্থিতির কারণে পুরুষের বৈশিষ্ট প্রকাশ পায়।