যুক্তরাজ্য

১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০১
আরও খবর

লন্ডনের আবাসন খাতে শীর্ষ ১০ বিদেশি ক্রেতার তালিকায় বাংলাদেশিরা

5964_london.jpeg

লন্ডনে দামি সম্পত্তি কেনার দৌড়ে ভিনদেশি ক্রেতাদের তালিকায় শীর্ষ ১০ এ রয়েছে বাংলাদেশি ক্রেতাদের নাম।

যুক্তরাজ্যের রাজধানীতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দামি সম্পত্তি (বাড়ি, হোটেল, দোকান, জমি ইত্যাদি) কেনার ক্ষেত্রে এই বিদেশি ক্রেতার তালিকায় বাংলাদেশিরা আছে নবম স্থানে।

আবাসন খাতের পরামর্শক কোম্পানি অ্যাসটনসের এক বিশ্লেষণে এসেছে এ তথ্য। বিনিয়োগের মাধ্যমে স্থায়ী বসবাস এবং নাগরিকত্ব প্রাপ্তির মত বিষয় নিয়ে কাজ অ্যাসটনস।

তাদের ২০২০ সালের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের হাউজবিল্ডিং শিল্পখাত বিষয়ক সাময়িকী শোহাউজ লন্ডনের সম্পত্তিতে বিনিয়োগকারী শীর্ষ ১০টি দেশের এই তালিকা প্রকাশ করেছে।

অ্যাসটনের বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালে বিশ্বের অর্থ ও বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র লন্ডনে গড়ে ১১ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ডের কিছু বেশি দামে সম্পত্তি হাতবদল হয়েছে। এক্ষেত্রে ওই বছরের ৬ হাজার ৪৩৮টি লেনদেনের তথ্য বিবেচনায় নিয়েছে অ্যাসটনস।

লন্ডনের বিভিন্ন এলাকার পোস্ট কোডের ভিত্তিতে এই বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, শহরের সবচেয়ে দামি সম্পত্তিগুলো সব মিলিয়ে কমবেশি ৮১০ কোটি পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।

এসব সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে ৪১ শতাংশ অর্থের যোগান আসে যুক্তরাজ্যের বাইরের উৎস থেকে। অর্থাৎ ক্রেতারা হয় অন্য কোনো দেশের নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান, যাদের পকেট থেকে এসেছে ৩৩২ কোটি পাউন্ড।

অ্যাসটনের প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালে লন্ডনের ‘প্রাইম প্রপার্টি’ বা ‘আকর্ষণীয় সম্পত্তি’ কেনার ক্ষেত্রে যে ১০টি দেশের ক্রেতারা সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন, তাদের মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছেন ফরাসিরা। আর বাংলাদেশিরা নবম স্থানে। দশম স্থানে আছেন জাপানিরা।

লন্ডনের দামি সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে বিদেশিদের মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৭ শতাংশের যোগান দিয়েছে বাংলাদেশি উৎস। এক্ষেত্রে জাপান থেকে যোগ হয়েছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ।

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশিরা ৯৮টি সম্পত্তি কিনেছেন, যার মোট ক্রয়মূল্য ১২ কোটি ২২ লাখ ৯০ হাজার পাউন্ড।

লন্ডনের সম্পত্তি নিয়ে অ্যাসটনের পরের দুই বছরের বিস্তারিত তথ্য অবশ্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০২০ সালের এই পরিসংখ্যান থেকে বিদেশে বাংলাদেশিদের সম্পত্তি কেনার হিরিকের বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যায়।

অ্যাসটনের ২০২০ সালের ওই পরিসংখ্যান বলছে, ওই বছরের প্রথম ৯ মাসে লন্ডনের দামী সম্পত্তির বাজারে বিদেশি ক্রেতা হিসেবে ফরাসিরা ১১ শতাংশ জায়গা দখল করেছিল। যাদের কাছে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডের সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে।

এছাড়া হংকং ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল। দুই দেশের ক্রেতারাই ওই সময় ৯ দশমিক ২ শতাংশ করে বিনিয়োগ করেছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩০ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ড।

ওই বছরের তালিকায় বেশ খানিকটা পিছিয়ে ছিল চীন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা চীনা ক্রেতারা ৮ দশমিক ৩ শতাংশ সম্পত্তি কিনেছে, যার অর্থমূল্য ২৭ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড। অথচ আগের বেশ কয়েক বছর চীনারাই ছিলো লন্ডনের আবাসন খাতে শীর্ষ বিনিয়োগকারী।

ভারতীয় ক্রেতারা ছিল পঞ্চম অবস্থানে, যাদের বিনিয়োগ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বা ২৪ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড। এছাড়া ইতালি, সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রেতারা ওই বছর যথাক্রমে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম স্থানে ছিল।


যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ব্লুমবার্গ লন্ডনে বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার বিষয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা থেকে জানা যাচ্ছে, ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের রাজধানীতে সম্পত্তি কেনায় এগিয়েছে অস্ট্রেলীয়রা। আর চীনের ক্রেতারা যেন অনেকটাই আগ্রহ হারিয়েছেন।

ব্লুমবার্গের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের পর লন্ডনে সম্পত্তি কেনায় বিদেশিদের আগ্রহে কিছুটা ভাটা পড়েছে। সার্বিকভাবে ওই শহরের আবাসন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ ২০২২ সালে ছিল মোট বিনিয়োগের ৫৭ শতাংশ। অথচ ২০১৫ সালে এই হার ছিলো ৬৫ শতাংশ।

লন্ডনের সম্পত্তিতে চীনের ক্রেতারা আগ্রহ হারালেও যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে বলেই জানাচ্ছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী ট্যাটলার।

গত নভেম্বরে প্রকাশিত ট্যাটলারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এশীয় ক্রেতাদের মধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে বেশি ক্রেতা পাচ্ছে লন্ডনের আবাসন খাতে মধ্যস্ততাকারী কোম্পানিগুলো। সিঙ্গাপুরের নিরাপদ ও আকর্ষণীয় বিনিয়োগ নীতির কারণে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের অনেক বিনিয়োগকারী সেদেশে কোম্পানি খুলে তাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।  

সর্বাধিক পঠিত


আরও খবর
ভিডিও