কিছু ইবাদত অন্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্য অন্তরে মহব্বত থাকা, আল্লাহকে ভয় করা ইত্যাদি অন্তরের ইবাদত। এসব গুণাবলী থাকলে সেই অন্তর নিঃসন্দেহে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন। আল্লাহ তার ওপর খুশি হন। অন্যসব ইবাদতও তার জন্য সহজ হয়ে যায়।
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘জেনে রেখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই ঠিক হয়ে যায়। আর যখন তা খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীর খারাপ হয়ে যায়। জেনে রেখো, ওই গোশতের টুকরা হলো কলব (অন্তর)।’ (বুখারি: ৫২)
মানুষের অন্তরের যেসব ইবাদতে আল্লাহ খুশি হন সেসব নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
আল্লাহকে ভালোবাসা
ঈমানের পর বান্দার অন্যতম অন্তরের ইবাদত হলো, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা স্থাপন করা। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তরে আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ভালোবাসা জন্ম নেবে না, ততক্ষণ বান্দা ইবাদতের স্বাদ পাবে না। ঈমানে পূর্ণতা আসবে না। এ কারণে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালোবাসায় দৃঢ়তর।’ (সুরা বাকারা: ১৬৫)
আল্লাহকে ভয় করা
আল্লাহর ভয় একজন মুমিনের অন্যতম সম্পদ। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন’ (সুরা তাওবা:৪) তাই আল্লাহর ভয়ে সব ধরনের গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর রহমতের আশা রাখতে হবে মানে এই নয় যে বেপরোয়া হয়ে উঠবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি আল্লাহর কৌশল থেকেও নিরাপদ হয়ে গেছে? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ছাড়া কেউ আল্লাহর কৌশলকে নিরাপদ মনে করে না। (সুরা আরাফ: ৯৯)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে তো শয়তান। সে তোমাদের তার বন্ধুদের ভয় দেখায়। তোমরা তাদের ভয় করো না; বরং আমাকে ভয় করো, যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৭৫) সাত শ্রেণির মানুষ কেয়ামতের কঠিন দিনে আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে। তাদের অন্যতম হলো, ‘যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আল্লাহর ভয়ে তার চোখ থেকে অশ্রু বের হয়ে পড়ে। (বুখারি: ১৪২৩)
আল্লাহর রহমতের আকাঙ্ক্ষা
অন্তরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো, আল্লাহর রহমতের আশা করা। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া পথভ্রষ্টতার লক্ষণ। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তিনি (আল্লাহ) বলেন, যারা পথভ্রষ্ট, তারা ছাড়া আর কে তার রবের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?’ (সুরা হিজর: ৫৬)
ইখলাসপূর্ণ আমল
ইখলাস হলো আমল ও ইবাদতের প্রাণ। এর সম্পর্ক অন্তরের সঙ্গে। তাই পবিত্র কোরআনে ইখলাসের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের এ ছাড়া আর কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে।’ (সুরা বাইয়্যিনা: ৫)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের শরীর ও অবয়বের দিকে তাকান না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে লক্ষ করেন।’ (মুসলিম: ৬৪৩৬)
রাসুলুল্লাহ (স.)-কে ভালোবাসা
প্রকৃত ঈমানদার হতে হলে রাসুল (স.)-কে ভালোবাসতে হবে। আর রাসুল (স.)-এর প্রতি দৃঢ় ভালোবাসা ছাড়া আল্লাহকে ভালোবাসা এবং তাঁর ভালোবাসা পাওয়া অসম্ভব। যারা আল্লাহকে প্রকৃতই ভালোবাসে, তারা কখনও নবীজিকে ভালো না বেসে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলে দাও, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু'।’ (সুরা আলে ইমরান : ৩১)
আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা
কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসলে আল্লাহ খুশি হন। এর প্রতিদানস্বরূপ মহান আল্লাহ কেয়ামতের দিন বিশেষ সংবর্ধনা দেবেন। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে, যাঁরা নবী নন এবং শহীদও নন। কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে তাঁদের মর্যাদার কারণে নবীরা ও শহীদরা তাঁদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হবেন।
সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের অবহিত করুন, তাঁরা কারা? তিনি বলেন, তাঁরা ওই সব মানুষ, যাঁরা আল্লাহর মহানুভবতায় পরস্পরকে ভালোবাসেন, অথচ তাঁরা পরস্পর আত্মীয়ও নন এবং পরস্পরকে সম্পদও দেননি। আল্লাহর শপথ! তাঁদের মুখমণ্ডল যেন নূর এবং তাঁরা নূরের আসনে উপবেশন করবেন। তাঁরা ভীত হবেন না, যখন মানুষ ভীত থাকবে। তাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়বেন না, যখন মানুষ দুশ্চিন্তায় থাকবে। অতঃপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন, ‘জেনে রেখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা ইউনুস: ৬২) (আবু দাউদ: ৩৫২৭)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবার অন্তর পরিশুদ্ধ করুন। উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের অন্তরে পবিত্রতা ও সৌন্দর্য দান করুন। পাশাপাশি আমাদের সব ইবাদত কবুল করুন। আমিন।