রাজনীতি

কেমন হবে নতুন বছরের বিশ্বরাজনীতি

832_image-503553-1640905645.jpg

২০২১ সাল বিশ্বরাজনীতির জন্য ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প শাসনামলের অবসান ঘটিয়ে বাইডেন প্রশাসন নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেয়।বাইডেন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসে।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেন এবং নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নিয়ে এটাকে কারচুপির নির্বাচন হিসাবে ঘোষণা দেন।

শুধু তাই নয়, এ নির্বাচনকে বিচার বিভাগীয় মামলা-মোকদ্দমা পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান। ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের অন্যতম স্থান ক্যাপিটাল হিলে আক্রমণ করে।এ আক্রমণকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধ দেখা দেয়।

এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে মার্কিন আইনপ্রণেতারা বেশ অস্বস্তিতে পড়েন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ক্যাপিটাল হিলে এ আক্রমণের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে এক ধরনের উগ্রবাদ ও সহিংসতার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পেয়েছি। ট্রাম্প আমলে শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদীদের ব্যাপকভাবে যে উত্থান ঘটেছিল, তারই ধারাবাহিকতায় এ ক্যাপিটাল হিলে আক্রমণ।

বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হিসাবে দেশের ভেতরে এ ধরনের ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ঐতিহ্যের ওপর আক্রমণ এবং নিরাপত্তার ওপর এক ধরনের হুমকিস্বরূপ। অভ্যন্তরীণ এ ঘটনাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব বিষয় হলেও এটি সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

দ্বিতীয়ত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্পের যে পররাষ্ট্রনীতি ছিল, সেখানে এক ধরনের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। এ পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে ইউরোপ ও এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে শক্তিশালী করার একটি প্রচেষ্টা আমরা লক্ষ করি। রাশিয়ার সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি তেমন কোনো সংঘাতে জড়াননি। বলতে গেলে, ট্রাম্প আমলে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমরা লক্ষ করছি, রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ধরনের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।

যদিও তা বড় কোনো সংঘাতে রূপ নেয়নি, তবে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে, বিশেষ করে রাশিয়ার গণতন্ত্র এবং বিরোধীদলীয় নেতাকে নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়।

ইউক্রেন ও বেলারুশের পরিস্থিতি নিয়ে অর্থাৎ রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক হস্তক্ষেপের যে চেষ্টা বহু বছর ধরে চলে আসছে, তারই ধারাবাহিকতায় সেটি আরও বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়টি ট্রাম্পের আমলে তেমন একটা গুরুত্ব পায়নি। ২০২১ সালে এ বিষয়গুলো মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক ধরনের গুরুত্ব পেয়েছে।

২০২১ সালে বিশ্বরাজনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে বৈশ্বিক করোনা মহামারি। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে ২০২১ সালটি এ ক্ষেত্রে স্বস্তির একটি বছর ছিল। কারণ এ বছর করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং এর সফল প্রয়োগ এই মহামারি সংক্রান্ত অস্থিরতা থেকে বিশ্বকে অনেকটা রেহাই দেয়। আবার এ ভ্যাকসিন নিয়ে এক ধরনের রাজনীতি ও কূটনীতিও শুরু হয়। এ কূটনীতির ধারাবাহিকতা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো চলছে। যা হোক, করোনা মহামারির দুশ্চিন্তা থেকে বিশ্ববাসী অনেকটা স্বস্তির মুখ দেখেছে, বলা যায়।

২০২১ সালের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে বিশ্বব্যাপী নতুন এক ধরনের মেরুকরণ লক্ষ করা গেছে। এ মেরুকরণের কয়েকটি দিক আছে। যেমন, একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি, কোয়াড, এমনকি সর্বশেষ আমরা দেখলাম অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে যে নিরাপত্তা চুক্তি হলো, সেটি নিয়েও একটি নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য এ মেরুকরণ অনেকটা চীনকে কেন্দ্র করেই। অন্যদিকে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নিয়ে তার প্রভাব বৃদ্ধি করার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চীন বিভিন্ন দেশকে বিআরআই’র অংশ করার চেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।

যার ফলে বিশ্বে একদিকে বিআরআই, অন্যদিকে কোয়াড ইত্যাদি নিয়ে এক ধরনের সামরিক ও কৌশলগত মেরুকরণের প্রয়াস আমরা লক্ষ করেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ২০২১ সালের জি-সেভেন বৈঠক এবং ন্যাটোর সামিট।

কারণ এ সামিটগুলোর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে থাকা পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়া ও চীনকে গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হিসাবে বিবেচনা করেছে। এ দেশ দুটিতেও পশ্চিমা বিশ্বকে মোকাবিলা করার এক ধরনের কৌশল ও পররাষ্ট্রনীতি লক্ষ করা যায়। ফলে বিশ্বে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধের পরিবেশ বিরাজ করছে এবং তা ২০২১ সালে চলমান ছিল।

২০২১ সালের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার। যে ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সেনা প্রত্যাহার হয়েছে, সেটি অনেকটা বিস্ময়কর ছিল। বস্তুত এক ধরনের অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে মার্কিন সেনারা যেভাবে দ্রুতগতিতে আফগানিস্তান থেকে প্রস্থান করেছে, তা বিশ্ববাসীর কাছে একটু অন্যরকমই মনে হয়েছে।

সবচেয়ে বড় কথা, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের ফলে সেখানে তালেবানরা নতুন করে ক্ষমতায় এসেছে। তালেবানরা ২০০১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর ২০ বছর দেশটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র ন্যাটো বাহিনীর সৈন্যের উপস্থিতি ছিল। সেটার সম্পূর্ণ সমাপ্তি ঘটার ফলে আফগানিস্তানে একটি নতুন শূন্যতা তৈরি হয়।

এ শূন্যতার ফলে চীন ও পাকিস্তান নতুনভাবে আফগানিস্তানে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি করে। অবশ্য তালেবানদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক আগে থেকেই ছিল, এখন আরও বৃদ্ধি পেল। অন্যদিকে তালেবান ক্ষমতায় আসায় আফগানিস্তান থেকে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিছুটান ঘটে। এ পরিস্থিতিতে আমরা লক্ষ করছি, এ অঞ্চলে পরাশক্তি ও বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা প্রতিযোগিতা নতুন রূপ লাভ করেছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান ঘটে। এ সেনা অভ্যুত্থানের ফলে দেশটিতে চীনের উপস্থিতি আরও বৃদ্ধি পায়। চীনের ওপর মিয়ানমারের নির্ভরশীলতাও বৃদ্ধি পায়। মিয়ানমারের ভেতরে একটা দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধের মতো পরিবেশ তৈরি হয়। সেখানে একটি বিকল্প সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সেনাশাসকরা তাদের মতো করে শাসনক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে মিয়ানমারে এখনো ব্যাপক অস্থিরতা বিরাজ করছে।

২০২১ সালের ঘটনাগুলো যদি আমরা আরও বিশ্লেষণ করি, তাহলে এ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বনেতৃত্বে নতুন করে ফিরে আসার একটি চেষ্টা আমরা লক্ষ করেছি। এ চেষ্টার অংশ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘ডেমোক্রেসি সামিট’ বা গণতন্ত্র সম্মেলন নামে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে।

এর আগে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক একটি সম্মেলনেরও আয়োজন করেছিল দেশটি। তবে গণতন্ত্র সম্মেলনের বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাপী বেশ সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে।

কারণ এ সম্মেলনে যে দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, সেসব দেশ, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও এক ধরনের গণতন্ত্রের সংকট চলছে। ফলে এ রকম একটি পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বের ভেতরে এক ধরনের দ্বিধাবিভক্তি তৈরি করার যে চেষ্টা, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও সমালোচনা হচ্ছে।

বস্তুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের গণতান্ত্রিক উদ্যোগের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে গণতন্ত্র কিংবা মানবাধিকারের বিষয়ে তাদের পররাষ্ট্রনীতি বা কূটনীতির যে হাতিয়ার, সেটি তারা সামনে নিয়ে আসে, যা আমরা ট্রাম্পের আমলে দেখিনি।

সব মিলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ২০২১ সালটি ছিল একটি টার্নিং পয়েন্ট। এখন দেখার বিষয় নতুন বছরে অর্থাৎ আসন্ন ২০২২ সালে বিশ্বরাজনীতি কেমন হবে।

এ প্রসঙ্গে বলব, ২০২১ সালে আমরা দেখেছি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব একটি মেরুকরণের রাজনীতিতে ঢুকে যাচ্ছে-সেই মেরুকরণের রাজনীতি, যা একদা স্নায়ুযুদ্ধের সময় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পর পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই উদ্যোগে শুরু হয়েছিল তথাকথিত কন্টেইনমেন্ট পলিসির মাধ্যমে।

এখন আবার মেরুকরণের বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব সেটাকে অনেকটা উসকে দিচ্ছে। এটাকে একটি নতুন কৌশল হিসাবে তারা বিবেচনা করছে।

একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের আঞ্চলিক মিত্র দেশগুলো, অন্যদিকে চীন ও রাশিয়াকে টার্গেট করে এবং এরই সূত্র ধরে বিভিন্ন অঞ্চলেও এক ধরনের আঞ্চলিক মেরুকরণের বাস্তবতা তৈরি করা হচ্ছে। এ বাস্তবতায় দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন ধরনের চাপ সৃষ্টির প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এটি আসলে ওই মেরুকরণের রাজনীতিরই একটি বহিঃপ্রকাশ।

এই যে পুরোনো মেরুকরণের রাজনীতিকে সামনে নিয়ে আসা, যার মাধ্যমে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে, সেটি আসলে বিশ্ব শান্তি বা বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য একটি নতুন ধরনের পরিবেশ তৈরি করছে।

এর ফলে বিশ্বে অস্থিরতা বাড়বে এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের অবিশ্বাস আরও বাড়বে, যার ফলে বিশ্বে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং নতুন ধরনের জোট তৈরির একটি চেষ্টা হয়তো আমরা আরও বড় আকারে দেখতে পাব। যে কারণে হয়তো বা এ বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হবে। বিশেষ করে দুর্বল দেশগুলোর ওপর চাপ আরও বৃদ্ধি পাবে। এক ধরনের পেশিশক্তির রাজনীতির প্রভাব বৃদ্ধি পেতে পারে।

২০২১ সালকে ভিত্তি করে ২০২২ সাল বা ভবিষ্যতের কথা যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে অবশ্যই বিশ্বায়নের প্রভাবের বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তারের বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত। করোনা মহামারিকালে আমরা লক্ষ করছি তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের জীবনকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে। একইসঙ্গে আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথাও শুনতে পাই।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিষয়টিও গুরুত্ব পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বিশ্বে অনেক টানাপোড়েন তৈরি হতে পারে। একদিকে উন্নয়ন বা সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে নিরাপত্তার জন্য বা আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা-এ পরস্পরবিরোধী পরিস্থিতির কারণে বিশ্বে একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি হবে। এ বাস্তবতা নিয়েও মেরুকরণের চেষ্টা হবে। সেই মেরুকরণের মধ্যে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রনীতির বিষয়টি আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পাবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মাধ্যমে বিষয়টি মোকাবিলা করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ এর সঙ্গে একটি দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বিষয়টি জড়িয়ে আছে। ২০২২ সালের বিশ্বে নিঃসন্দেহে করোনার প্রভাবটি থেকে যাবে এবং ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসিও বজায় থাকবে।

বিশ্বরাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করবে। চীনের উত্থান এবং বিশ্বশক্তি হিসাবে তার যে চ্যালেঞ্জ, সেটি আরও বৃদ্ধি পাবে। সব মিলে বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের ভেতরে আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য সৃষ্টির চেষ্টা হবে এবং সেই পরিস্থিতিতে বিশ্বায়ন এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতার বিষয়টি একদিকে যেমন কাজ করবে, অন্যদিকে তেমনি স্নায়ুযুদ্ধ কিংবা শক্তির রাজনীতির প্রভাবও আমরা দেখতে পাব।

ড. দেলোয়ার হোসেন : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

যুগান্তর

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও