ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রবাদপ্রতিম গায়ক
উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁ (জন্মঃ- ২ এপ্রিল, ১৯০২ - মৃত্যুঃ- ২৩ এপ্রিল, ১৯৬৮) ।
স্বয়ং আমির খাঁ বলতেন, আমাদের বহু কষ্ট করে আসর জমাতে হয় আর বড়ে গোলাম আলি আসরে বসে সুর লাগালে আসর এমনিই জমে যায়, তাঁর গলার এমনই তাসীর, এমনই প্রভাবগুণ। বড়ে গোলাম আলি খান সাহেব ও তাঁর পরিবার কলকাতায় এলেন ১৯৬৩ সালের প্রথম দিকে। ওঁনারা এসে উঠলেন থিয়েটার রোডের ‘হাতোয়া হাউস’-এ। বাড়িটা ছিল হাতোয়ার মহারাজার। তাঁরই অতিথি হিসেবে এই শহরে বসবাসের প্রথম কটা দিন কাটালেন খান সাহেব ও তাঁর পরিবার। বলা বাহুল্য, কলকাতার সঙ্গীতপ্রেমী মানুষেরা খান সাহেব আসায় খুবই খুশি হলেন। একের পর এক অনুষ্ঠানে গান গাইবার অনুরোধ এল। পরে খান সাহেব বলেছিলেন যে, কলকাতার দর্শকদের সঙ্গীতের সঙ্গে সম্পর্কটা অনেক বেশি শিল্পরসানুগ্রাহী, অনেক বেশি হৃদয়ঘটিত। বাংলার শ্রোতারা কোনও রাগ শোনার সময় যেমন তার মধ্যে পুরোপুরি ডুবে যায়, তেমনটি আর কোথাওই হয় না। তাঁর মতে, কারণটা হল যে, বাঙালির শাস্ত্রীয় গান শোনার অভ্যাসের উৎস আসলে ভক্তিরসের প্রতি তার ভালবাসা। চৈতন্য মহাপ্রভুর সময় থেকে বাঙালি তো এই সুর-সাধনাই করে এসেছে। এ দেশ যে চণ্ডীদাস থেকে শুরু করে মুর্শিদি আর মারফতি গানের দেশ। রবীন্দ্রনাথের গানে কিছু বিদেশি সুর থাকলেও তার মূল রসের ভিত্তিই তো ছিল বাংলার লোকগান।
নতুন এলে কী হবে, খান সাহেব চটপটই যেন কলকাতার ঘরের লোক হয়ে গেলেন। ইয়ার-দোস্ত জুটে যেতে সময় লাগল না তেমন। রাইচাঁদ বড়াল, লালুবাবু, অধিরাজ মুখোপাধ্যায় ছাড়াও ছিলেন খান সাহেবের অতি প্রিয় সুহৃৎ শঙ্করবাবু ও পটলবাবু এবং বাগচিদাদা। তখনকার প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা অনেকেই তাঁদের শহরের এই সম্ভ্রান্ত অতিথিকে বরণ করতে এগিয়ে এলেন। ওস্তাদ বিলায়েৎ খান, শ্রীরাধিকামোহন মৈত্র, উস্তাদ আলি আকবর খান, বিখ্যাত তবলাবাদক উস্তাদ কেরামত খান, উস্তাদ শওকত আলি খান, উস্তাদ রহিমুদ্দিন ডাগর এবং আরও অনেকে ছিলেন এঁদের মধ্যে।
খান সাহেবের মন পসন্দ হল কলকাতা। সিদ্ধান্ত নিলেন এখানেই পাকাপাকি ডেরা বাঁধবার। পার্ক সার্কাসের বেকবাগান এলাকায় একটা ফ্ল্যাট পাওয়া গেল। পাড়ার বাজারে মিলত পছন্দসই সব জিনিস। কাছেই থাকতেন প্রখ্যাত সেতারবাদক এনায়েৎ খান সাহেব, তাঁর ছেলে বিলায়েৎ খান ও ইমরাৎ খান ও তাঁদের অন্য ভাইবোনেরা। খান সাহেবের শাগরেদ মীরা ও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় পড়শিই ছিলেন, আর এক জন পড়শির নাম ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মীরা, প্রসূন, সন্ধ্যা এর আগেই খান সাহেবের কাছে নাড়া বেঁধেছিলেন।
খান সাহেব থাকতেন ছোটখাটো তিন কামরার একটা ফ্ল্যাটে। বাইরের ঘরে অতিথিদের আপ্যায়ন ও শিক্ষাদান। ভিতরের একটা ঘরে থাকতেন তিনি ও তাঁর বেগম আল্লা রাখী। বেগম সাহেবা ছিলেন ছোট্টখাট্টো, গোলগাল এক জন মানুষ। মুখে সব সময়ে হাসি লেগেই থাকত। আর চোখদুটো জ্বলজ্বল করত। আম্মা নামেই তাঁকে সবাই চিনতেন। ছিলেন পতি-অন্ত-প্রাণ। খান সাহেবকে নাওয়ানো, খাওয়ানোর ভার পুরোটাই নিজের হাতে রেখেছিলেন। খান সাহেব আর বেগম সাহেবার উল্টো দিকের ঘরটাই ছিল তাঁর বড় ছেলে মুনাবর আলি খানের আর তাঁর বউ-বাচ্চার। খান সাহেব খাবার খেতেন বাইরের ঘরের ‘তখ্ত’-এ বসে, যেখানে প্রায়ই সঙ্গে জুটে যেতেন বন্ধু-বান্ধবরা।
নতুন শাগরেদ গ্রহণ করার একটা বিশেষ প্রথা আর অনুষ্ঠান ছিল। খান সাহেব ও বেগম সাহেবার জন্য নতুন কাপড় ও কিছু মুদ্রা ‘নজরানা’ হিসেবে উপহার দিতে হত। অন্য ট্রেতে থাকত মিঠাই, গুড় আর ছোলা। তার সঙ্গে লাল হলুদ বুনটের একটা সুতো, ‘গাণ্ডা’। উস্তাদ হবু শাগরেদের হাতে এই সুতো বেঁধে দিতেন আর মুখে দিতেন একটু ছোলা আর গুড়। ঘটনাটা শুনতে হয়তো খুবই সাধারণ, কিন্তু সাধারণত, নতুন ‘গাণ্ডা বাঁধা শাগরেদ’ মানুষটি একেবারেই অভিভূত হয়ে পড়তেন। এর পর উপস্থিত সবাইকে দেওয়া হত চা বা সরবত। আর শুরু হয়ে যেত নতুন শাগরেদের তালিম।
বড়ে গোলাম আলিকে বর্ণনা করতে গেলে একটা কথাই বলতে হয় যে, উনি যেসব গান গাইতেন, সব খানদানি গান। ওঁর গায়কীর সঙ্গে গোয়ালিয়রের গায়কীর অনেক মিল আছে... কিন্তু সেখান থেকে এনে যে transformation উনি করতেন, সেটাকে আমি কি বলব! aesthetically, spiritually এবং musically সব দিক দিয়ে স্বতন্ত্র এবং স্বাতন্ত্র্য যেটা, সেটা এত বিচারশীল যে, বিচার করে করতেন এবং দেখাতেন। সেই সঙ্গে যা উনি করছেন পুরোটাই তাঁর কন্ট্রোলে। কণ্ঠ, চিন্তাধারা, অনুভূতি সবই যেন ওঁর আয়ত্তে। গান উনি করতেন যেমন অনেক খানদানি গায়করা গান। বাপ, দাদা গাইছেন, তাঁদের রাস্তা ধরে উত্তরসূরীদের গান গাওয়া—
শুধু তাই নয়, উনি নিজেই স্বীকার করতেন, ছেলে মুনাব্বর খাঁও এই কথাই বলেন যে, খাঁ সাহেব তাঁর শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনে বা শিক্ষা করে যে জিনিস লাভ করেছিলেন, তার মধ্যে অনেক বস্তুই তাঁকে বিন্যাস করতে হয়েছে সৌন্দর্য ও সৌষ্ঠবের বিচারে। অর্থাৎ গোলাম আলি খাঁ was a reformer, আর reformer হলেই ধর্ম অথবা সঙ্গীত সব ক্ষেত্রেই বাধার সম্মুখীন হতেই হয়।
সকালের তালিমের পর খান সাহেব দুপুরের খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম করতেন। চারটে নাগাদ এক কাপ চা খেয়ে ছাত্রীর ফিয়্যাট গাড়িতে বেড়াতে বেরনো ছিল তাঁর প্রিয় নেশা। তখনকার কলকাতার সন্ধ্যার খোলা বাতাস আর নানান দৃশ্যাবলি ছিল তাঁর বড়ই প্রিয়। পাশের সিটে খান সাহেব রুমালে গিঁট বেঁধে বেশ কিছু খুচরো পয়সা রাখতেন ভিখিরিদের দেবার জন্যে। ট্রাফিক লাইটে গাড়ি থামলেই হল। খান সাহেব কথা বলতে, গল্প বলতে খুব ভালবাসতেন। সব কিছুই ভাগ করে নেওয়া চাই। যেন এক সত্যিকারের ফকির, নিজের জন্যে কিছুই যে রাখে না। একবার গঙ্গার ধারে গাড়ি থামিয়ে নামলেন খান সাহেব। অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন গঙ্গার দিকে। প্রকৃতির কী আজব কারখানা! ডানা নেড়ে মাছ স্থির থাকে এক বিন্দুতে, আমরা যেমন সুরকে তুলে আনি আমাদের অন্তঃস্থল থেকে, নিঃশ্বাসে শব্দ মিশিয়ে তৈরি করি তার বিস্তার। দম লাগে, সবেতেই দম লাগে। শোভানাল্লাহ্, এই মাছেরা শরীর বাঁকিয়ে সৃষ্টি করে গতি। আমরা যেমন পেট-বুক-গলা দিয়ে তৈরি করি সুরের গতি...। আমাদের পুরো অস্তিত্বই যে তখন ওই সৃষ্ট সুরের সঙ্গে মিলে যায়.... গায়ক আর গীত তো অভিন্ন, যে চূড়ান্ত মিলনের অভিলাষী সব সুরসাধক।
খান সাহেব বলতেন গুরু শিষ্যকে দেন ‘ইল্ম’। ইল্ম-এর মানে হল ‘ইনায়ৎ-এ ইলাহি, লুৎফ-এ-উস্তাদ এবং মেহনত-এ-শাগরেদ [ঈশ্বরের উপহার, গুরুর আনন্দ ও শিষ্যদের কঠোর শ্রম।] পুরনো দিনে কোনও শিষ্যকে তার পিতা যখন গুরুগৃহে নিয়ে আসতেন, তিনি বলতেন, ‘গুরুদেব, এই বালকের প্রাণটুকুই শুধু আমার, হাড়-মাস সব আপনার। আপনি এর সঙ্গে ইচ্ছা মতো ব্যবহার করতে পারেন।’ খান সাহেব প্রায়ই বলতেন, ‘পুত্তর, একটি জিনিস কখনও তোমায় ঠকাবে না। রেওয়াজ।’
খান সাহেবের কলকাতা এসে ডেরা বাঁধার বছরেই তবলাবাদক উস্তাদ নিজামুদ্দিন খান উস্তাদ বিলায়েৎ খান-এর সঙ্গে সঙ্গত করতে শহরে আসেন। বড়ে গোলাম আলি নিজামুদ্দিনকে খুব ভালবাসতেন। তিনি নিজামুদ্দিনকে মুম্বই ফিরে না গিয়ে কলকাতায় থেকে যেতে বলেন। নিজামুদ্দিনও থেকে যান। খান সাহেবের বসার ঘরে ‘তক্তা’র নীচে শুয়ে পড়তেন, সে যুগের শিল্পীদের মাথায় পয়সা-কড়ির চিন্তা ছিল কম। রুটি জোগানো তো ঈশ্বরের দায়, আমার কাজ তো শুধু রেওয়াজ করে যাওয়া। সে সময় কোনও অনুষ্ঠানের জন্য কোনও শিল্পী কোনও পারিশ্রমিক দাবি করতেন না। এমনকী, কেউ যখন সাম্মানিক অর্থ দিতেন, রেওয়াজ ছিল, প্রথমে তাঁকে নিরস্ত করা। এসব আজ যেন এক হারানো দিনের গল্প।
তাঁর অসুস্থতার পর থেকে খান সাহেব গাইতেন একটা গম্ভীর, স্থির ভঙ্গিতে। কিন্তু, কলকাতার বসন্তে যেন তাঁর কণ্ঠের পুরনো মেজাজ আবার প্রস্ফুটিত হল। এক জলসায় রাগ ইমন গাইলেন খান সাহেব, আর বললেন, ‘আমার কণ্ঠ একটা তুলির মতো, আমি বাতাসের ঢেউয়ে আমার কণ্ঠ দিয়ে ছবি আঁকি। স্বরগুলো আমার রং, বাতাস আমার ক্যানভাস।’ বলেই অতি দ্রুত গতিতে গান ধরলেন, ‘আজ রং লাগা মোরে পিয়া আয়ে দ্বার.....’
বরানগর আশ্রমের মৌনী স্বামীজি
খান সাহেব তখন কলকাতায় থাকছেন। এক দিন সকালে বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনের এক ছোটখাটো স্বামীজি এসে হাজির হলেন। তাঁর গুরু মৌন ব্রত নিয়েছেন এবং তাঁর শিষ্যকে খান সাহেবের কাছে পাঠিয়েছেন এক বিশেষ অনুরোধ নিয়ে: আশ্রমের একটি অনুষ্ঠানে খান সাহেব কি গান গাইবেন? উত্তর: অবশ্যই।
অনুষ্ঠানের দিন বরানগর আশ্রমে পৌঁছতে লাগল এক ঘন্টার বেশি সময়। মুনাওয়ার খান সাহেবকে ধরে বসিয়ে দিলেন উঁচু মঞ্চের ওপর। মৌনী স্বামীজি এলেন, খান সাহেবের পায়ের কাছে একটা লাল গোলাপ ফুল রেখে নিজের আসনে গিয়ে বসলেন। চোখদুটো বন্ধ হল। খান সাহেব গান শুরু করলেন, বিকেলের রাগ— পিলু।
‘‘রাধে কৃষ্ণ বোল, তেরা কেয়া লাগেগা মোল,
দশ বিশ কোস নহীঁ চল্ না
তেরা হাত পৈর নহীঁ হিল না
তু মন কী হুণ্ডি খোল
তেরা কেয়া লাগেগা মোল
তু রাধে কৃষ্ণ বোল্।’’
খান সাহেব গাইছেন, সাধকদের মনে তাঁর সাধনার ছোঁওয়া... একটু একটু করে যেন ফুটে উঠছে বৃন্দাবনের ছবি... গান থামলে মৌনী স্বামীজি উঠে এলেন মঞ্চে। খান সাহেবের পা ছুঁলেন আর একটি সোনার হার রাখলেন সাম্মানিকী হিসেবে। তাঁর দুগাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল জলের ধারা। এর পর বিরাট বিরাট চাদর পাতা হল উঠোনে, তার ওপর কলাপাতায় খুব অনাড়ম্বর খাদ্যায়োজন।
খান সাহেব যে ভক্তি নিয়ে দরগায় গাইতেন, সেই একই ভক্তি নিয়ে গাইলেন বরানগরের আশ্রমে। বড়ে গোলামের নামের ‘বড়ে’ কথাটি ছিল খুবই জুতসই। খান সাহেব সত্যিই ছিলেন বড় মাপের এক জন মানুষ। বাড়ির আসরে বা গানের জলসায় খান সাহেব যে মুক্ত নিমন্ত্রণের পরিমণ্ডল সৃষ্টি করতেন, তা যেন সুফি ঘরানার ‘খানা’-র প্রথা বা মধ্য যুগের হস্পিস্-এর কথা মনে করিয়ে দিত। এই সব জায়গায়, যেমন আজও দরগায়, পথিকের জন্য এক হাঁড়ি ভাত যেন সব সময়েই ফুটছে। একেই বলে ‘লঙ্গর’— যেখানে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে খাবার বিতরণ করাটাই রেওয়াজ। খান সাহেবের বাড়ি ছিল একটা ছোটখাটো অতিথিশালা, লোকের ভিড় সেখানে লেগেই থাকত। আর শূন্য মনে ফিরতে হত না কাউকেই। কথায় বলে, এক জন সুফি সব সময়েই সুখী। তার কোনও বিদ্বেষ, ঘৃণা, অনুতাপ থাকে না। বৈষ্ণব ধর্মের ভক্তরা, মধ্য যুগের ইউরোপের ক্যাথলিক মিস্টিকরা, ইসলামের সুফিরা সবাই এক সহিষ্ণুতার দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। ভারতের চিস্তিয়া সুফিদের বিশ্বাসে সঙ্গীতের একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল। মুরশিদ (পির) ও মারফতি (প্রচারক) দু’জনেই সুফি গান গাইতেন, যা গ্রামাঞ্চলে বিশেষ ভাবে জনপ্রিয় ছিল। বড়ে গোলাম আলির আর এক প্রিয় নেশা ছিল দরগায় গিয়ে বিখ্যাত কাওয়ালের গলায় কাওয়ালি গান শোনা।
প্রথা অনুযায়ী, প্রতি বছর মহরমের সময় বাল্লু হক্কক লেন-এ খান সাহেবের বাড়ির দরজায় বিশাল এক মাটির জালায় সরবত রাখা হত। খান সাহেব স্বয়ং পথিকদের সরবত খাওয়াতেন। মহরমের সময় অনুষ্ঠিত মজলিস-এ খান সাহেব ‘নোহা’ আর ‘মার্সিয়া’গুলো দারুণ আবেগের সঙ্গে আবৃত্তি করতেন। জন্মাষ্টমীতে খান সাহেবের নিমন্ত্রণ আসত ‘ঝুলা বারিস’ বা কৃষ্ণের জন্মোৎসবের গান গাওয়ার জন্য। অনেক বাড়িতেই একটা দোলনা দোলানো হত, আর এই দোলনায় যখন দোল দেওয়া হত, তখন গান ধরতেন উস্তাদ। বাঙালি বাড়িতে জন্মাষ্টমীর সময় গান গাইতে খান সাহেব খুব ভালবাসতেন। যে ক’বছর তিনি কলকাতায় বাস করেছিলেন, বঙ্গ সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠেছিলেন সত্যিকারের বড় শিল্পী বড়ে গোলাম আলি খান।
বড়ে গুলাম আলী খান তৎকালীন ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরের কাছে ছোট্ট শহর কাসুরে জন্মগ্রহন করেন। পশ্চিম পাঞ্জাবের সঙ্গীত ধারক পরিবারে তাঁর গায়ক বাবা আলী বক্স খানের জন্ম। পাঁচ বছর বয়সে পৈতৃক সম্পর্কীয় চাচা কালে খান ও পরবর্তীকালে বাবার কাছ থেকে কণ্ঠ সঙ্গীতে দীক্ষিত হন।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর পাকিস্তানে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে ভারতে চলে আসেন। ১৯৫৭ সালে বোম্বের তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেসাইয়ের সহায়তায় ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভ করেন ও মালাবার হিল মুম্বইয়ের একটি বাংলোয় বসবাস করতে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে লাহোর, বোম্বে, কলকাতা ও হায়দ্রাবাদে অবস্থান করেন তিনি। জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সঙ্গীত পরিচালকদের কাছ থেকে অনুরোধ স্বত্ত্বেও সুদীর্ঘকাল চলচ্চিত্রে গান পরিবেশন করা থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। কিন্তু কে আসিফের উদ্দীপনায় সঙ্গীত পরিচালক নওশাদের সাথে ১৯৬০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মুঘল-ই-আজম চলচ্চিত্রে সোহনি ও রাগেশ্রীভিত্তিক দুইটি গানে অংশ নেন। তিনি অতি উচ্চমাত্রার পারিশ্রমিক দাবী করেন। প্রতি গানের জন্য তিনি ২৫০০০ রূপী নেন, যেখানে জনপ্রিয় ও তারকা নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে লতা মঙ্গেশকর ও মোহাম্মদ রফি গান প্রতি ৫০০ রূপীর কম অর্থ পেতেন।
হায়দ্রাবাদের বাঁশেরবাগ প্যালেসে তার দেহাবসান ঘটে। জীবনের শেষের বছরগুলোয় দীর্ঘদিনের অসুস্থতাজনিত কারণে আংশিক পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
আজ এই মহান মানুষটির জন্মদিন, তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ জানাই।
(পত্রিকা থেকে তথ্য সংগৃহীত)